ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

যেভাবে তৈরি হয় শীতল পাটি

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
যেভাবে তৈরি হয় শীতল পাটি ছবি: জিএম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বালাগঞ্জ ও রাজনগর থেকে: নামেই এর পরিচয়। এর কদর ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে সুদূর লন্ডন পর্যন্ত।

শীতল পাটিতে শুলে খুব গরমেও ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ার একটা বিশ্বাস আছে। এজন্য গরমকালে সিলেট অঞ্চলের বাড়িঘরে বিছানা চাদরের ওপর এই পাটির ব্যবহার দেখা যায়। শীতল পাটির বিশেষ বুনন প্রক্রিয়ার কারণেই শীতলতা থাকে পাটিতে।  

এক ধরনের মুর্তা বা পাটিপাতা কেটে এনে বেতি বের করে তা শুকিয়ে এবং এরপরে ভিজিয়ে শীতল পাটি তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। মুর্তা সাধারণত নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর পাড়, ডোবা ও জলাভূমিতে জন্মে। কেউ কেউ ধানের জমিতে, ডোবা বা কর্দমাক্ত জমিতেও মুর্তা গাছের চাষ করে।  

পাটি তৈরির জন্য হাজার হাজার মুর্তার ছাল বের করা হয়। সেই একটি ছাল পাটি তৈরির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে আলাদাভাবে সাতবার হাতে নিতে হয়।
 
প্রথম দফায় মুর্তা থেকে চারভাগ করে বেত বের করা হয়। এরপর সরু করতে হয়। তুলে ফেলতে হয় সম্পূর্ণ আঁশ। তারপর বেতি আকারে সমান করতে হয়। পুনরায় ছাল ফেলে রোদে শুকোতে দিতে হয়। এরপর বেতিগুলো আবার একঘণ্টা পানিভর্তি টিনের পাত্রে ভিজিয়ে, গরম পানিতে সেদ্ধ করা হয়। সেদ্ধ শেষে বেতিগুলো রোদে শুকিয়ে পুনরায় ঠাণ্ডা পরিষ্কার পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে ধুয়ে তোলা হয়। এরপরই মুর্তা বেতি পাটি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হয়। অনেকসময় পাটিতে নানা রং দিতে হয় কারু‍কাজের জন্য।

পাটি তৈরির সুনিপুণ এক কারিগর রাজনগরের অরুণ দাস। তিনি জানান, গরম পানিতে মাড় দিয়ে যে শীতল পাটি তৈরি করা হয়, তা ১০ বছর যাওয়ার পরও কিচ্ছু হবে না। যত্ন সহকারে ব্যবহার করলে একটি শীতল পাটি একাধারে ১৫ থেকে ২০ বছরও ব্যবহার করা যায়।  

বিভিন্ন নামে সিলেট অঞ্চলে কয়েক ধরনের শীতল পাটি পাওয়া যায়। যেমন সিকি, আধলী, টাকা, নয়নতারা, আসমানতারা, জোড়াকে চিরা প্রভৃতি।  

সিকি মুদ্রার সমান প্রস্থ বেতের ৭ ফুট বাই ৫ ফুট মাপের জোড়া ছাড়া এই পাটি তৈরি করতে একজন দক্ষ কারিগরের ৪ থেকে ৫ মাস সময় লেগে যায়। এই পাটি খুব মসৃণ হয়। প্রবাদ আছে যে, মসৃণতার কারণে এই পাটির ওপর সাপ পর্যন্ত চলতে পারে না।

আধলী মুদ্রার সমান প্রস্থ বেতের ৭ ফুট বাই ৫ ফুট মাপের একটা পাটি তৈরি করতে একজন দক্ষ কারিগরের সময় লাগে ৬ মাস।  
টাকা মুদ্রার সমান প্রস্থ বেতের ৭ ফুট বাই ৫ ফুট মাপের একটা পাটি তৈরি করতে কারিগরের সময় লাগে ২ থেকে ৩ মাস।  

এখান থেকে যে শীতল পাটি তৈরি হয় তার দাম পড়ে ত্রিশ হাজার টাকারও ওপরে।


বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এসএ/এইচএ

** সিলেটে রেলের সেই সুদিন ফিরবে কি!​
** উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানে
** ঢাকা-সিলেট: চারলেনের অপেক্ষায় সিলেটবাসী ও পর্যটক
** দুই কারণে সাতছড়িতে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী
** ট্রেইলে নয় ওয়াচ টাওয়ারে সাতছড়ি দর্শন
** বাসে বিমানের ছোঁয়া!
** এসি বাস নেই সিলেট রুটে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ