ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সিলেটের সাতকড়া সিলেটের নয়

এম জে ফেরদৌস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
সিলেটের সাতকড়া সিলেটের নয় ছবি- আসিফ আজিজ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে: সাতকড়ার নাম শুনলেই জিভে জল আসে অনেকের, বিশেষত সিলেটিদের। যারা একবার সাতকড়া দিয়ে মাংস রান্না চেখেছেন, ভাত অথবা খিচুড়ির সঙ্গে সাতকড়ার আচার খেয়েছেন তাদের জিহ্বায় লেগে আছে সেই স্বাদ।

লেবু জাতীয় এই ফলটি সিলেটের সাতকড়া নামে দেশব্যাপী পরিচিত হলেও তা আসলে সিলেটের নয়। সাতকড়া মূলত ভারতের আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ের ফল।

ভারত থেকে আমদানিকৃত সাতকড়া দিয়েই দেশের চাহিদার বিপুল অংশ পূরণ হয়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাহাড়ে সাতকড়া চাষ হলেও তা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্যই।

সাতকড়া যে সিলেটের ফল নয় খোদ বৃহত্তর সিলেটের অধিকাংশই জানেন না। জনস্থাস্থ্যের জন্য উপকারী সাতকড়াকে সিলেটবাসী নিজস্ব ফল ভেবে বেশ গর্ববোধ করেন এবং সেই প্রচার দেশব্যাপী ছড়িয়েছেও ব্যাপক হারে। ফলে সাতকড়ার আচার সারাদেশে বিক্রি হয় সিলেটের সাতকড়া নামেই!

দেশের অন্যান্য স্থান থেকে সিলেট ভ্রমণে কেউ গেলে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা যারা সাতকড়ার সঙ্গে পরিচিত তারা চায়ের সঙ্গে সিলেটের সাতকড়ার বায়নাও ধরেন। সিলেটের সাতকড়া যে সিলেটের নয়- এ তথ্য জানতে পারি সিলেট অঞ্চলের অন্যতম বড় কাঁচাবাজার কানাইঘাটে গিয়ে।
ক্রেতা-বিক্রেতা

সেখানকার ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে ভেঙে যায় দীর্ঘদিনের ভুল ধারণা। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণে বিভিন্ন জাতের লেবু ও আনারসের বাগান চোখে পড়লেও সাতকড়ার বাগান চোখে পড়েনি। সেই থেকে সন্দেহ জাগে বাংলানিউজ টিমের।

সেই সন্দেহ থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে অনুসন্ধান চালিয়ে উঠে আসে কৌতুহলকর এই তথ্য- সিলেটের সাতকড়া আদতে সিলেটের নয়!

কানইঘাট বাজারের বেশ কয়েকজন বিক্রেতার কাছে সাতকড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা অনেকেই বলেন বাংলাদেশের পাহাড়ে চাষ হয় এই লেবু। সাতকড়া বাগান দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তারা দেখেননি বলে জানান। তবে ওই বাজারেরই অন্য অনেক বিক্রেতার কাছ থেকে জানা যায় প্রকৃত তথ্য। তারা জানান, ভারত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতকড়া আসে সিলেটের বাজারে।

সাতকড়া বিক্রেতা দিলকদর বলেন, সিলেটের বাজার বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ সাতকড়া আসে আসাম ও মেঘালয় থেকে। দেশে অল্পকিছু সাতকড়া চাষ হলেও সেগুলো আকারে ছোট এবং চাহিদাও কম।

বিক্রেতা দিলকদরের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে গেলো বৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক কৃষ্ণচন্দ্র হোড়ের বক্তবেও। তিনি জানান, দেশে সাতকড়ার চাহিদার প্রায় পুরোটাই আসে ভারত থেকে। সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় সাতকড়ার চাষ হলেও তা চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য।

সিলেট অঞ্চলের মানুষের প্রাত্যহিক রান্নায় বিশেষ করে মাংস রান্নায় এক অপরিহার্য উপাদান সাতকড়া। এটি ছাড়া অধিকাংশ লোকের রসনা বিলাসই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত সিলেটের অধিবাসীরা কাঁচা অথবা রোদে শুকানো সাতকড়া নিয়ে যান প্রবাসে।

এ কারণে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাতকড়া চাষের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও সাতকড়ার চাহিদা মেটাতে  আমদানির ওপরই ভরসা করতে হয়। আমদানিকৃত সাতকড়া থেকেই ঘরে ঘরে এবং বিভিন্ন কোম্পানি সাতকড়ার আচার প্রস্তুত করে।

আঠারো শতকে সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যে ব্যাপকভাবে সাতকড়া চাষ হতো। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় সাতকড়া চাষ শুরু হয়। কমলা লেবুর মতো সাতকড়ার গাছ বড় হয়। বর্তমানেও মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে সাতকড়া চাষ হচ্ছে অল্প-বিস্তর। তবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চাহিদার তুলনায় ফলন কম।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি পরিবারে ঠাঁই নেয়ার কারণে বর্তমানে সাতকড়ার দাম অত্যাধিক। সিলেট অঞ্চলে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এর ব্যাপক কদর রয়েছে। বর্তমানে পাতলা ও ছেলা নামে দু'প্রকারের সাতকড়া সিলেটের বাজারে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
এমজেএফ/এসআর

আরও পড়ুন...

** রাজবাড়ী নয় যেন আস্তাকুঁড়ে
*** সবুজ পাতা হয়ে যায় কালো কালো চা

** লোভাছড়ায় বাড়তি পাওনা ঝুলন্ত ব্রিজ
** রাতের ক্বিন ব্রিজে ‘ঝাল কম, ঝাল বেশি’
**উত্তাল হাকালুকির ঢেউয়ে ঢেউয়ে
**ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্মৃতির ধূলো
**টিলার ওপর দৃষ্টিনন্দন ফ্রুটস ভ্যালি
**পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা এম এ রব চত্বরের নামফলক
** শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাওয়া
**দিনের যাত্রী আসনই রাতের বিছানা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ