ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বোঝার উপায় নেই ওসমানীর বাড়ি

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৬
বোঝার উপায় নেই ওসমানীর বাড়ি ছবি:জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দয়ামীর গ্রাম (ওসমানীনগর) ঘুরে: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশেই দয়ামীর বাজার। এই বাজার থেকে রাস্তার পূর্বদিকে চলে যাওয়া আধাপাকা সড়কটি ধরে পাঁচমিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে হলদে রঙের প্রাচীর ঘেঁরা একটি বাড়ি।

এই বাড়িই মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর (এমএজি ওসমানী) পৈত্রিক ভিটা। কিন্তু বাড়িটি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, বাংলাদেশের প্রথম সেনা নায়কের বাড়ি এটি।

নেই কোনো নাম ফলক কিংবা সাইনবোর্ড; এমনকি ওসমানীর একখানা ছবিও। তাই কোনো আগন্তুককে ওসমানীর বাড়ি দেখতে গিয়ে ধন্দেতেই পড়তে হয়।

১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্ম হলেও ওসমানীর পৈতৃক বাড়ি সিলেট জেলার ওসমানীনগরের (তৎকালীন বালাগঞ্জ) দয়ামীরে।

ওসমানীর বাবা তৎকালীন সুনামগঞ্জ সদর মহকুমার সাব-ডিভিশনাল অফিসার খান বাহাদুর মফিজুর রহমান বাড়ির পাশেই তার বাবা আবদুস সুবাহানের নামে প্রতিষ্ঠিত করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নারী শিক্ষার প্রসারে ১৯২৯ সালে একমাত্র মেয়ের নামে গড়ে তুলেন সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়। যা কিনা ওই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

চিরকুমার ওসমানীর বাড়িতে তার কোনো উত্তরসূরী না থাকলেও নিয়মিত থেকে ঘর-দোর দেখভাল করেন কমর উদ্দিন।

জানালেন, বাড়িতে তেমন কেউ আসেন না। ওসমানীর বংশধরেরা বড় চাকরি করেন। অনেকেই ইংল্যান্ডে থাকেন। বিভিন্ন উৎসবে বাড়িতে বেড়াতে এলেও চলে যান, থাকেন না কেউ। বাড়ি তদারকির দায়িত্বে থাকা ছফুর আলীও সিলেট শহরে থাকেন।

বর্ণনা বলতে ওসমানীর পৈতৃক বাড়িটির আদি কোনো অবকাঠামো নেই। সংস্কার করে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৩২ শতাংশ (১২ কের=৩৬ শতাংশ=এক কের) জমির ওপর নির্মিত বাড়িটির চারপাশে দেয়াল ঘেরা।

ভেতরে রয়েছে তিনটি ভবন, সামনে তিনটি দিঘী। যেনো দিঘীর শান্ত জলের মতোই নিজ ‘বাসভূমে’ নীরবে রয়ে যাচ্ছে ওসমানীর স্মৃতি। আর গেটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিকে বাড়ির অংশে দু’ধারে পাকা করে দেওয়া হয়েছে। যেটি চলে গেছে পাশের হাওরে।

আলাপের ফাঁকে ফাঁকেই ঘুরে বাড়িটির দ্বিতল ঘর দেখালেন কেয়ারটেকার কমর উদ্দিন। মূল ভবন থেকে একটু দূরে রয়েছে আরও দু’টি ভবন। যেগুলো বাড়িতে এলে ব্যবহার করেন ওসামানীর উত্তরসূরীরা।

আর গেটের পাশে ছড়ার ধারে ঘরটিতে ছেলে-মেয়ে ও পরিবার নিয়ে থাকেন কমর উদ্দিন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে, একযুগ ধরে বাড়িটির দেখাশোনা করেন তিনি।

আলাপচারিতায় কমর জানান, ওসমানীর পৈতৃক জমি-জমা বিক্রি করে এ বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। রক্ষণা-বেক্ষণের খরচও তার কোনো বংশধররা দেন না। এখানকার শস্য কিংবা ফল-ফলাদি দিয়ে যা হয় তা দিয়েই চলে।

বাড়ির কোনো নাম ফলক কিংবা পরিচিতির বিষয়ে কমর উদ্দিনের ভাষ্য, ‘ছবি তোলার নিষেধ আছে। তবে কেন জানি না, বলতে পারি না নাম ফলকের বিষয়ে কিছু জানি না। ’

পৈতৃক ভিটায় ওসমানীর কোনো স্মৃতিরই দেখা মিলেনি। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ দাফন করা হয় হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে।

‘এ বাড়িতে ওসমানী সাহেবের ব্যবহৃত ছবি কিংবা অন্য কোনো জিনিসপত্র নেই। যা আছে সিলেট নগরে তার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরেই রাখা হয়েছে,’ বলেন কমর উদ্দিন।

সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবীর এমএজি ওসমানীর স্মৃতি বিজড়িত দয়ামীরের এ বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরাও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের আদর্শে বেড়ে ওঠছে।

নবগঠিত ওসমানীনগর উপজেলার উত্তরে দক্ষিণ সুরমা, দক্ষিণে মৌলভীবাজারের রাজনগর, পূর্বে বালাগঞ্জ এবং পশ্চিমে বিশ্বনাথ ও সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলা।

**আজও দগদগে মাগুরছড়ার ক্ষত
**‘বোমা’ মেশিনে মলিন জাফলংয়ের সৌন্দর্য
**‘কাঁদছে’ হাছন রাজার জন্ম পিঞ্জিরা
**অভাব ঘুচেছে পশু চিকিৎসক ফারুকের
**সুগন্ধি আতরে সমৃদ্ধি

**আগর থেকে আতর
**‘যন্ত্র-দেয়াল’ ভাঙছে সিলেটের ‘ওসমানী শিশু উদ্যান’
** এখনও সময় জানায় আমজাদের সেই ঘড়ি​
**পর্যটন বর্ষের প্রচারণা নেই মাধবকুণ্ডে
** ঝরনার পাহাড়ে ফাটল, সতর্ক হোন
**জাফলং পর্যটনে বাধা ‘সড়ক’
**অযত্নে-অবহেলায় আদিত্যপুর গণকবর

**যাত্রীর ইয়ার্ডে পাবলিকের কার পার্কিং
** ফাংশন নেই শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে
** সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে
** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও
** স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ