ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সুন্দরবনের করমজলে সবুজের মায়াবী হাতছানি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬
সুন্দরবনের করমজলে সবুজের মায়াবী হাতছানি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাট: সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে মায়াবী হরিণের প্রাণোচ্ছ্বল চাহুনি আর তিড়িং বিড়িং ছুটে চলা। তাদের সঙ্গি রয়েছে দুষ্টু বানরের দল।

আর এ বানরের বাদরামি ও ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ছাপিয়ে শোনা যায় অচেনা পাখির কলবর।

বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির সেই নৈসর্গিকতায় সবুজের মায়াবী হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে সুন্দরবনের করমজল। চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশন সংলগ্ন সুন্দরবনের করমজল এলাকায় বন বিভাগ প্রকৃতির কোলে গড়ে তুলেছে ‘ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র’।

স্বল্প খরচে একদিনের জন্য যারা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য করমজল পর্যটন কেন্দ্র একটি আদর্শ স্থান।
এখানকার প্রবেশ পথে সুন্দরবনের বিশাল আকৃতির মানচিত্র দর্শনার্থীদের সম্পূর্ণ ধারণা দেবে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বন সম্পর্কে।

মাটিতে শোয়ানো বিশাল এ মানচিত্র পেছনে ফেলে দক্ষিণে আঁকাবাঁকা পথ। বনের মধ্যে পায়ে হাঁটা রোমাঞ্চকর এ উঁচু পথের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। যার নাম ‘মাঙ্কি ট্রেইল’।

কাঠ বিছানো ট্রেইল ধরে বনের ভেতরে এগুতে দুই ধারে ঘন জঙ্গল। বাইন, কেওড়া আর সুন্দরী গাছের সারি। বন্য প্রকৃতিতে পথে পথে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানায় মায়াবী হরিণ। কাঠের পথ কিছুদূর গিয়েই থেমে গেছে পশুরের তীরে। সেই নদীর তীরে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ পাতানো ছাউনি। মূল পথটির আরও কিছুটা দূরে ছোট খাল। পাশে গোলপাতায় ছাওয়া আরও একটি শেইড। গোলাকৃতির শেইডের বেঞ্চে বসে বনের নিস্তব্ধতা, সত্যিই উপভোগ্য।

শেইড থেকে পশ্চিমে ট্রেইলটি ইট বাঁধানো সরু পথ ধরে গেছে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পাশে। ২০০২ সালে বন বিভাগ এখানে দেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে।

মাঝে করমজলে অন্যতম আকর্ষণ সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এই টাওয়ারের চূড়া থেকে দেখা যাবে করমজল এবং চারপাশের নয়নাভিরাম সবুজে ঘেরা সুন্দরবনের নতুন রূপ।

ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই প্রচীর ঘেরা পুকুর। পাশে কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সেখানে রয়েছে ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। তার মধ্যে কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় আকৃতির কুমিরের বাচ্চা রয়েছে।

টাওয়ারের পাশের বড় পুকুরে রয়েছে লোনা পানির কুমির রোমিও, জুলিয়েট এবং পিলপিল। বনকর্মীরা নাম ধরে ডাকলে পুকুরে থাকা কুমিরগুলো খাবার খেতে তাদের ডাকে সাড়ে দিয়ে উঠে আসে পাড়ে।

কুমির প্রজনন কেন্দ্রের সামান্য পশ্চিম দিকে হরিণ লালন-পালন ও প্রজনন কেন্দ্র। এখানে চিড়িয়াখানার মতো উপরিভাগ উন্মুক্ত খাচায় ঘেরা খোলা জায়গায় চোখে পড়বে চিত্রা হরিণ।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনে লোনা পানির কুমির রক্ষায় প্রজনন বৃদ্ধি এবং লালন-পালনের জন্য ২০০২ সালে বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি ৮ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত।

ওই বছর সুন্দরবনের নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি লোনা পানির কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু করে বনবিভাগের এ প্রজনন কেন্দ্রটি। বর্তমানে এখানে কুমিরের সংখ্যা ২৩১টি।

এছাড়াও ‘করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে’র পুকুরে রয়েছে সুন্দরবনের কচ্ছপ।

কীভাবে যাবেন করমজলে-
সুন্দরবনের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে যেতে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে বাগেরহাটের মংলায়। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সড়ক পথে মংলায় আসা যাবে। এরপর ফেরি ঘাট থেকে নদী পথে দশ থেকে বিশজনের উপযোগী একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা জালি বোটে করে যাওয়া যাবে করমজলে। খরচ পড়বে ৯শ’ থেকে ২২শ’ টাকা পর্যন্ত। চাইলে খুলনা থেকেও যাওয়া যাবে।

আর যদি রাত যাপন করতে চান তাহলে থাকতে পারেন মংলা, খুলনা বা বাগেরহাট শহরে। মংলাতেই থাকার জন্য রয়েছে সাধারণ এবং মধ্যম মানের হোটেল মোটেল এবং রেস্ট হাউজ।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬
আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ