ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

খাগড়াছড়ির প্রবারণা উৎসবে…

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
খাগড়াছড়ির প্রবারণা উৎসবে… ছবি: আসিফ আজিজ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পানছড়ি, খাগড়াছড়ি ঘুরে এসে: উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি দর্শন। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ভোরে রওয়ানা দিয়ে ৭টা নাগাদ পৌঁছালাম পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুরের ‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’এ।

কুটিরের প্রবেশ মুখে গিয়েই উৎসবের আবহ বলে মনে হলো। জানা গেলো, খাগড়াছড়িতে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) পূর্ণিমার প্রথম দিনে এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগুরু ভান্তেদের বর্ষাবাস শেষে উদযাপিত হয় কঠিন চীবর দান, সেইসঙ্গে প্রবারণা উৎসব।

এ উপলক্ষে অরণ্য কুটির বেশ সরগরম। দূরদূরান্ত থেকে আসছেন বৌদ্ধরা।

বর্ষাবাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিধিবদ্ধ শিক্ষা ও একান্ত ধ্যান চর্চার সময়। এ সময়টাতে তারা কুটিরের বাইরে রাতযাপন করতে পারেন না। বর্ষাবাস শেষে এ নিয়মের অবসান হয়। এদিন বৌদ্ধরা ভিক্ষুদের চীবর (বৌদ্ধসাধক ভিক্ষুদের পড়নের কাপড়) দান করে থাকেন।

তেমনি শুক্রবার পানছড়ির অরণ্য কুটিরে এসে দেখা মিললো চীবর দান ও প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব আয়োজন।  

অরণ্য কুটিরের প্রবেশ ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার  মুহূর্তে শোনা গেলো ব্যান্ড দলের বাদ্য বাজনা। সেইসঙ্গে একই রকমে পোশোকে দেখা মিললো জনা তিরিশেক রমনী তরুণীদের। সবার মাথায় দু হাতে থালা ধরা। তাতে কারো মণ্ডা কারো মিষ্টান্ন, কোনটায় ফুল, পানীয় বা চিপস।  

ব্যান্ডের তালে পা মিলিয়ে সারিবদ্ধভাবে পূজারিনীরা এসে বৌদ্ধমূর্তির চারপাশ তিন চক্কর দিলেন। এরপর বৌদ্ধের পায়ের কাছে সারিবদ্ধভাবে রাখলেন তাদের নৈবদ্য। এ দলে পাওয়া গেলে একজন পূজারীকেও। এরপর বৌদ্ধ মূর্তির সামনে কয়েক সারিতে বসে উচ্চারণ করলেন মন্ত্র। পূজা শেষে আগের মতোই সারিবদ্ধভাবে বেড়িয়ে গেলেন পূজারিনীরা।

ততক্ষণে আশপাশের গ্রাম থেকে চীবর দান ও প্রবারণা উৎসবে অংশ নিতে আসতে শুরু করেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

বুদ্ধ দর্শন শেষে কথা হলো লোগং জোলিপাড়া থেকে আসা লক্ষ্মণ জ্যোতি চাকমার সাথে। তিনি জানালেন, সাধারণত বর্ষাবাসের সময় কুটিরের ধর্মীয় গুরুরা (ভান্তে) কোথাও গেলেও কুটিরের বাইরে রাতযাপন করতে পারেন না। পূর্ণিমার প্রথম দিন তাদের বর্ষাবাস শেষে এ বাধা উঠে যায়। এদিন তারা ভান্তেদের নিজেদের তৈরি চীবর দান ও প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করেন।

মনজুরা ধাম গ্রাম থেকে আসা ক্যামেলিয়া চাকমা বৌদ্ধকে প্রণাম শেষে সামনের একটি নির্দিষ্ট স্থানে মোম জ্বালাচ্ছিলেন্। বললেন , এর দ্বারা তারা বুদ্ধের কাছে মনের ইচ্ছার কথা জানান।  

তিনি জানালেন, পূজারিনীরা যে নৈবদ্য রেখে গেছেন তা সরিয়ে ফেলা হবে দুপুর ১২টার মধ্যেই।

ওইদিকে ১০ টার পরপররই কুটিরের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে ১১ ভান্তের সবাই গেলেন চীবর দানের সভাস্থলে। সেখানে শুরু হলো চীবর দানের মাধ্যমে প্রবারণার আনুষ্ঠানিকতা ও ধর্মীয় দেশনা।

এদিকে, বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া থেকে আসা বৌদ্ধরা সভার বাইরে পাতা কাপড়ের মধ্যে রক্ষিত ভিন্ন স্থানে মন্দির নির্মাণ, অনুষ্ঠান মঞ্চ নির্মাণ, ভিক্ষু সংঘের চিৎকিসা জাতীয় সামগ্রী উৎসর্গ নির্মাণের জন্য কাপড়ের দানপাত্রে সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন।  

প্রথমে প্রবারণার সংগীত। পরে প্রতিটি দানের মন্ত্র পাঠ শেষে চীবর দান করা হয় ভান্তেদের। এ সময়টাতে পিনপতন নীরবতায় এক পবিত্র আবহ তৈরি হয়।

ভেতরে যখন প্রবারণার আনুষ্ঠানিকতা, বাইরে তখন জমে উঠেছে খেলনা ও রকমারি পসরার দোকানে বৌদ্ধ শিশুদের ভিড় ও আনন্দ উল্লাস। দূরদূরান্ত থেকে আসা বৌদ্ধদের অনেকের সাক্ষাতও হচ্ছিল এখানে এসেই।

ফলে চীবর দান ও প্রবারণা তাদের কাছে শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, সামাজিক ও সংস্কৃতিরও সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে দেখা দিয়েছে।

** 'জিরাফ গলার' ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণও কম নয়
** রেল স্টেশনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এসআর/আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ