ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাজারছড়া ঝর্ণা (রাঙ্গামাটি) ঘুরে: লোকালয় থেকে অাধা কিলোমিটার দূরে জনমানুষহীন গহীন জঙ্গলে আফিদা বেগমের মনোহারী দোকান!
 
দুর্গম পাহাড়। চারিদিকে গহীন জঙ্গল।

ঝিঝি পোঁকার ডাক আর ঝর্ণার জলের কল কল শব্দ ছাড়া যেখানে কিছুই মেলে না, সেখানে মনোহারী দোকান খুলে বসে আছেন আফিদা কার জন্য?
 
হাজাছড়া ঝর্ণা দেখতে আসা পযর্টক-ই আফিদার টার্গেট। তাদেরকে লক্ষ্য করেই জনমানুষহীন গহীন জঙ্গলে তিনি দোকান দিয়েছেন! পযর্টকরাই তার খোদ্দের লক্ষ্ণী। সারা দিন তিনি  পযর্টকদের-ই ধ্যান করেন!
 
রাঙ্গামাটি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাশে ঘাগড়া কলাবাগান গ্রাম। এই গ্রামেরই বাসিন্দা আদিফা বেগম। জীবন ও জীবীকার প্রয়োজনে লোকালয় থেকে দূরে নির্জন পাহাড়ের যে জায়াগায় তিনি দোকান পেতেছেন সেখানে সাধারণ ক্রেতারা যান না।
 
কেবল মাত্র হাজারছড়া ঝর্ণা দেখতে আসা পযর্টকরা ক্লান্তি জুড়ানোর জন্য আফিদা বেগনের কাছ থেকে চা, বিস্কুট, পানি, জুস, চিপস্, চানাচুর, কলা. পা-রুটি খরিদ করেন।
 
গত ৩৫ বছর ধরে এই গহীন জঙ্গলে দোকানদারি করছেন আফিদা বেগম। আগে এই দোকান চালাতেন স্বামী মুজিবুর রহমান। আফিদা বেগম শুধু সঙ্গ দিতেন। বছর সাতেক আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর দোকান চালানোর দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়েছেন তিনি।
 
একমাত্র ছেলে আব্দুর রহমান শ্রমিকের কাজ করে। মা হারা নাতীকে নিয়ে আফিদা বেগম স্বামীর রেখে যাওয়া দোকান চালান। তবে নাতী মো. রমজান হোসেন ইদানিং স্কুলে যাওয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে একাই দোকানে থাকতে হয়। পর‌্যটকের আনা-গোনা বেশি থাকলে, ভালই থাকেন আদিফা বেগম। আর কম থাকলে বা না থাকলে ভয়ে গা ছমছম করে।
 
শুক্র-শনিবার পর‌্যটকের ভিড় থাকায় সপ্তার এ দুই দিন ৪/৫ শ’ টাকা বিক্রি হয়। অন্য দিনগুলোতে ২/৩ শ’ টাকায় নেমে আসে। তাই আফিদা বেগমের দিন শুরু হয় এই প্রার্থনায় ‘আজ যেন বেশি পর‌্যটক আসে হাজারছড়ায়। ’
 
স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় দোকানদারি শেষে পাশের ঘরটিতেই দু’জনে রাত কাটাতেন। মরে যাওয়ার পর সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে চলে আসেন মেয়ের বাড়িতে। হাজারছড়া ঝর্ণায় একাকী রাত কাটাতে ভয় লাগে তার।
 
গত ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় বাঘ-ভাল্লুক, অজগর সাপ বা হিংস্র প্রাণী এই নির্জন পাহাড়ে আছে আফিদা বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ভূত-পেত্নী ও জিন পরীর ভয়ে সন্ধ্যা হলেই তাকে লোকালয়ে যেতে হয়।
 
গভীর জঙ্গলে সারা দিন পর‌্যটকের আশায় থাকা আফিদা বেগমের চাওয়া, সরকার যদি হাজাছড়া ঝর্ণাটাকে সাধারণ পর‌্যটকের জন্য সহজগম্য করে দিত, তাহলে এখানে দোকানদারি করে তিনি ভাল মত বেঁচে থাকতে পারতেন। তার বিশ্বাস-পর‌্যটন কেন্দ্র হিসেবে হাজারছড়া কেন্দ্র বিকশিত হলে তার মত আরো অনেকেই এখানে দোকানদারি করতে আসত।
 
শনিরবার (১৫ অক্টোবর) এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন- জোর জোঙ্গলে ঢাকা থাকায় এখানে মানুষ আসতে চায় না। আসার জন্য পথ করে দিলে এখানে প্রচুর লোক আসত। অনেকেই এখানে দোকানদারি করতে পারত।

** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!
** আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি

 
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এজেড/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ