ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

দুর্গম পাহাড়ের আড়ালে অপূর্ব দু’টি ঝরনা

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
দুর্গম পাহাড়ের আড়ালে অপূর্ব দু’টি ঝরনা ছবি: আবু বক্কর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিলাইছড়ি ঘুরে: প্রকৃতির রূপসী কণ্যা রাঙামাটি। পাহাড়ঘেরা হ্রদের জলে অপার সৌন্দর্যর এ লীলাভূমিতে চেনা পাহাড়-হ্রদ-গহীন অরণ্যের আড়ালে দু’টি ঝরনা ঝরছে অবিরত।

খুব কম সংখ্যক পর্যটকই পেয়েছেন তার সন্ধান; আর যারা পাহাড়ি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে গেছেন তারা হয়েছেন বিমুগ্ধ।

 

পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে দুর্গম এক ঘণ্টার পথে সেখানে পৌঁছানো খুব সহজ নয়; তবে শুভ্র ঝরনা ধারার ঝরঝর শব্দে কেটে যাবে পথের সব ক্লান্তি।

 

ঝরনা দু’টির নাম- ন’কাটা ছড়া ও মপ্পোছড়া। পাহাড়িদের কাছে যা ‘নৌকাটা’ ও ‘মপ্পুছড়া’ বলে পরিচিত।

বিলাইছড়ির পর্যটন তুলে আনতে ৪ সদস্যের বাংলানিউজ টিম রোববার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৬টায় ত্যাগ করে রাঙামাটি শহর।  

জেলা সদর থেকে অটোরিক্সায় তবলছড়ি। এই লঞ্চঘাট থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার পানিপথ, পায়ে হেঁটে এক ঘণ্টায় দু’টি ঝরনা।

সকাল ৭টা

লঞ্চঘাট থেকে সকাল ৭টায় যাত্রা শুরু। পানিপথে কাপ্তাই লেকের মাঝে হঠাৎ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সবুজ টিলা। সেই টিলায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের বাস।

দুই ঘণ্টা পর…

জনপ্রতি ৫৫টা ভাড়া দিয়ে সোয়া নয়টায় বিলাইছড়ি ঘাটে ভিড়লো লঞ্চ। বিলাইছড়ির দুর্গম পর্যটন কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে নিরুৎসাহিত করছিলেন স্থানীয় অনেকেই। দু’একজন পরামর্শ দিলেন নলছড়ি থেকে নৌকায় যাওয়ার।

পৌনে ১১টায় নৌকায়

‘সম্মানি’ ঠিক করে আমাদের ‘গাইড’ স্থানীয় মানেন্দ্র চাকমা। জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়া মিটিয়ে পৌনে ১১টায় নলছড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে দেবের মাথায় নৌকা পৌঁছালো ১১টায়।
রোমাঞ্চকর যাত্রা
ঝরনার পানি প্রবাহের পথ ধরে হাঁটা শুরু। দুই পাহাড়ের মধ্যে ছোট ছোট পাথর আর স্বচ্ছ পানিতে পা ভিজে শীতল হতে থাকলো শরীর।

পথ এগোয়, বড় বড় পাথর। দু’পাশে খাড়া পাহাড় থেকে গাছের ডালপালা দিয়ে ঢাকা পথ, ছমছম শরীর। এ পথে খুব একটা মানুষের আনাগোনা নেই, মাকড়শার জাল দেখেই তা বোঝা গেল।

উত্তেজনা কমাতে মানেন্দ্রর আশ্বাস, আর একটু সামনে…।

হাঁটছি স্রোতের বিপরীতে, ওপরে, গাছের ডাল, ঝুলে থাকা লতা ধরে। মনে ভয়, তবে দু’একজনের চলাচল শঙ্কা কাটিয়ে দেয়।

কুঁড়ি মিনিটে পথ দু’ভাগ

২০ মিনিটের পাহাড়ি পথ পেরিয়ে দু’পথ। মানেন্দ্র আমাদের নিয়ে গেলেন ডান দিকে। আরও খাড়া সেই পথ। বড় বড় পিচ্ছিল পাথরের ওপর দিয়ে সাবধানে বাড়লো পা।

প্রায় ১৫ ফুট ওপর থেকে পানি পড়ছে, এটাই কি ঝরনা? মানেন্দ্র জানালেন- না, একটু সামনে। দু’পাশের পাহাড়গুলো মাথার ওপর, ধসে পড়া বড় বড় পাথরগুলো মনে ভীতি সঞ্চার করছিল!

১১টা ৩৩-এ ন’কাটা

শোনা গেল ঝরঝর শব্দ, ভীতি কেটে যাওয়া শুরু। একটু এগিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত ঝরনা! পথেরও শেষ এখানেই।

ইউরেকা, এই তো ন’কাটা…।

প্রায় একশ’ হাত ওপর থেকে পড়ছে দু’টি ধারা। একটু নিচে মিশে কালো পাহাড়ের ঝাঝকাটা গা বেয়ে পড়ছে সাদা পানি। ঝরনার শুভ্র ধারা অন্ধকার গিরিপথকেও করেছে আলোকিত। লোভ সামলাতে না পেরে হাত দিয়ে স্পর্শ, শেষমেশ ভিজলো গা।
এক কালে নৌকা তৈরি করতো এক মারমা মিস্ত্রি, থাকতো এই পাহাড়ে- তার নামে ঝরনার নাম; বললেন মানেন্দ্র।

আরও এক দুঃসাহসিক যাত্রা!

গাইড বললেন, লাঠি নেন, সামনে চলেন, এবার ওপরে উঠতে হবে, কঠিন পথ! মনে আরও ভয়, আরও কঠিন পথ! একটু পিছিয়ে গাছের ডাল ধরে পাহাড়ে উঠতে লাগলেন তিনি, সঙ্গী আমরা চারজন। আত্মবিশ্বাস হারাবেন না, বলছেন মানেন্দ্র।

ভয়, শঙ্কা এবং নতুনের সন্ধানের রোমাঞ্চ- সব একসঙ্গে। পাহাড়ের ঢালে গাছের ডাল, লতা, পাতা ধরে পিচ্ছিল পথে পা…।

সামনে, বলে আরও ওপরে নিয়ে যাচ্ছেন মানেন্দ্র। ততক্ষণে আরও ৩/৪শ’ ফুট ওপরে।

বেলা ১২টা
আধা ঘণ্টা পিচ্ছিল পাহাড়ের গা ধরে হেঁটে দেখা মিললো ‘মপ্পোছড়া’। ঝরনা ধারা জোরালো না হলেও বিস্তৃত এক জলরাশি।

তিন ধাপে ওপর থেকে ঝরছে ঝরনা। অপূর্ব, অপরূপ! পথের কষ্ট-ক্লান্তি উবে গেল, সূযের্র আলো খেলা করছে ঝরনা ধারায়। উজ্জ্বল চারপাশ!

ফেরার তাড়া থাকায় সেখানে দু’চারটি ছবি তুলে হেঁটে হেঁটে দেবেরমাথা, এরপর নৌকা ধরে নলছড়ি।

** লেকের ধারে পাহাড়পাড়া, মেঘের কোলে স্বর্গীয় লীলাভূমি!
** ঝরনায় ফেলছে বোতল-প্লাস্টিক, দেখার নেই কেউ?
** টাকার গাছ!
**পাহাড়ি ঝরনায় পর্যটকের সঙ্গী যখন মুলি বাঁশ
** পাহাড়িদের প্রিয় খাবার নাপ্পি’র সাতকাহন

** সাদা রঙের হলুদ আর আদা ফুল অনন্য, পর্যটকের কাছেও আকর্ষণীয়
**  ভরা মৌসুমে পর্যটক টানছে পাহাড় ঘেরা খাগড়াছড়ি
** পাহাড়ে উদ্ভাবিত ফলের জাত ছড়াচ্ছে সারাদেশে

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ