ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ভালোবাসার ‘বণিক’ বান্দরবানের ডিসি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
ভালোবাসার ‘বণিক’ বান্দরবানের ডিসি ছবি: ডি এইচ বাদল

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স (বান্দরবান) থেকে:  মূল ফটকে বেশ বড় করে ‘মেঘলা, সেবাধর্মী পর্যটন কেন্দ্র’ লেখা দেখে খানিকটা অবাক লাগলো। পর্যটন কেন্দ্র আবার সেবামূলক!

প্রশ্ন ছিল বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের কাছে।

 

তিনি জানালেন, মেঘলার আয় দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও সহায়তা ট্রাস্ট। আর এই ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দারিদ্রের কষাঘাতে নিষ্পেষিত শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য। বিশেষ করে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী যাদের অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে তাদের জন্য অনেক উদার এই ট্রাস্ট।  

এই ট্রাস্টের অর্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছেন বান্দরবানের রাবার বাগান এলাকায় দরিদ্র জুমচাষী পরিবারের সন্তান রূপময় তঞ্চগ্যা।

মেধাবী রূপময় কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যথারীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু দারিদ্র তার লেখাপড়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দরিদ্র পিতা কিছুতেই তার ভর্তির টাকা জোটাতে পারছিলেন না। বলছিলাম ২০১৬ সালের গোড়ার দিকের কথা।

এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে জেলা প্রশাসকের বরাবরে ভর্তির জন্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন রূপময়।

তিনি আবেদনে লিখেছিলেন, তাকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দলে টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে চান। স্রেফ এটুকুই সহায়তা তার দরকার।

রূপময়ের সেই আবেগভরা আবেদনপত্র পেয়ে তাকে ডেকে পাঠান বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। এরপর রূপময়ের ভর্তি ও বই কেনার জন্য নগদ অর্থ দেন তিনি এমনকি সে যতদিন পড়ালেখা চালিয়ে নিতে চান ততদিন পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে তিন হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন দিলীপ কুমার বণিক।

রূপময় চেয়েছিলেন শুধু ভর্তির সহায়তা। পেয়ে গেলেন পুরো শিক্ষা জীবনের সহায়তা। সেই থেকে তার হাতে প্রতি মাসে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এই সহায়তা।  

শুধু রূপময় নয়। আরও অনেক রূপময় রয়েছে এই সহায়তার চাদরের নীচে। ধাবিত হচ্ছেন অভিষ্ঠ গন্তব্যের পথে। স্বপ্ন দেখছেন বড় অফিসার হয়ে দুঃখিনী মায়ের কষ্ট লাঘব করার।

আর এই অর্থ আসছে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স’র আয় থেকে।  

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, তার পূর্ববর্তী জেলা প্রশাসক মো. মিজানুল হক চৌধুরী এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ঝালকাঠি জেলার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তীতে দিলীপ কুমার দায়িত্বে এসে চলতি বছরে এই শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করেন। ট্রাস্টের পথচলা যাতে নিরন্তর হয় সে জন্য বিশ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়েছে বলে জানান নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।

দিন দিন এই ফান্ড বৃদ্ধি করার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। প্রশ্ন ছিল ট্রাস্ট গঠনের মূল উদ্দেশ্য কি? 

জবাবে তিনি জানান, পর্যটন কেন্দ্রের স্টাফরা পুরোপুরি সরকারি না। তাদের বেতন-ভাতার নিরাপত্তা ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, পর্যটন কেন্দ্রের আয় সব সময় সমান থাকে না। আর এর সংস্কার ও উন্নয়নে অর্থের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়, সে জন্য এই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসকই প্রথম এই ট্রাস্ট গঠনের সাহস দেখিয়েছেন। এখন সিরাজগঞ্জসহ আর দু’টি জেলা এ পথে সামিল হয়েছেন। যার পথ প্রদর্শক বলা যায় দিলীপ কুমার বণিককে।

স্থানীয়দের দৃষ্টিতে কল্যাণকর জেলা প্রশাসক বলতে যা বুঝায় পুরোপুরি তাই দিলীপ কুমার বণিক। যার হাতের ছোঁয়ায় প্রাণসঞ্চার করছে বান্দরবানের পর্যটন। তার প্রতিষ্ঠিত এই ট্রাস্ট ঘরে ঘরে আলোক বর্তিকা ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাস্টের আলোয় আলোকিত করতে চান শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি জেলা বান্দরবানকে।

নামের শেষে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ‘বণিক’ শব্দের যথার্থতাই প্রমাণ করেছেন তিনি। শুধু রুটিন ওয়ার্কের জন্য আসেননি সে কথা কর্মের মাধ্যমে জানান দিয়েছেন। তিনি রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি কিছু সওদা পাতিও খরিদ করতে চান বান্দরবান থেকে। আর সেই সওদা হচ্ছে স্থানীয়দের ভালোবাসা। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে স্থানীয়দের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

**মেঘলা সৌন্দর্যে পাহাড়ি সংস্কৃতি
** কেন যাবেন মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে
** ‘ভাবার লোকদের তো সমস্যা নেই’
** ঝরনা নিজেই এসে মিশে গেলো শরীরে 
** খাগড়াছড়িকে পাহাড়ের সঙ্গে মেলালে ভুল হবে
** হ্রদে ছয় ঘণ্টা রোমাঞ্চকর নৌ ভ্রমণ, ১৪০ টাকায়

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
এসআই/এমআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ