ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

শীতল পরশের অনিন্দ্যসুন্দর নাফাকুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
শীতল পরশের অনিন্দ্যসুন্দর নাফাকুম ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাফাকুম (রেমাক্রী, থানচি) ঘুরে: অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য। দু’পাশে সুউচ্চ পাথুরে পাহাড়, মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে রেমাক্রী খাল।

স্রোত আর অবয়ব দেখে মনে হয় ছোট-খাট এক নদী!

এর ঠিক উজানেই নাফাকুম জলপ্রপাত (স্থানীয় ভাষায় নাফাখুং)। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম গড়িয়ে পড়ছে শীতল পানি। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।

বর্ষায় যৌবনবতী নাফাকুম দেখতে বেশ মোহনীয়। আর তাই তো পাথুরে নদী সাঙ্গুতে উজান বেয়ে, সাঁতরে কিংবা বন্ধুর পাহাড় অতিক্রম করে হলেও নাফাকুম দেখতে যান অনেকে।

স্থানীয় মারমা ভাষায় নাফা অর্থ মাছ, কুম অর্থ গভীর। অর্থাৎ গভীর কূপের মাছ।

সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উপরে পাহাড়ি গহীন অরণ্যের ভেতরে নির্জন উহেসিং পাড়ায় নাফাকুমের অবস্থান।

নাফাকুম যেতে পাথুরে খরস্রোতা সাঙ্গুতে ভেসে ভেসে উজানে উপরে ওঠা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু নৌকার মাঝি দিদারুল ইসলাম বেশ দক্ষতার সঙ্গে সে কাজটা করলেন। এর আগে তার সাবধান বার্তা, হাত নৌকার রেলিংয়ে রাখা যাবে না। পাথরে লেগে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে।

এভাবে কুমারী ঝরনা, রাজাপাথর, তিন্দু বাজার, রেমাক্রী খালের মুখ পেরিয়ে রেমাক্রী বাজারে পৌঁছানো।

সেখান থেকে লোকাল গাইড নিয়ে নৌকায় করে ফের সাঙ্গু নদীর কিছুটা ভাটিতে এসে রেমাক্রী জলপ্রপাত, বেশ উচু থেকে পানি ঝরছে। এরমাঝে খরস্রোতা খাল ধরে এগিয়ে যাওয়া।

মাঝে মাঝে নেমে আবার নৌকা ঠেলা। এভাবে প্রায় ৪৫ মিনিট যাওয়ার পর ফের হাঁটা রাস্তা। পাহাড়ি পথ ধরে কিংবা খালের চরেও হাঁটতে হলো প্রায় একঘণ্টার কাছাকাছি। নাফাকুমের দর্শন পেতে ঝুলিতে জমা হলো খালে সাঁতার কাটার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাও। ঢালু পাথুরে পাহাড়ের পিচ্ছিল পথে যাওয়ার মাঝে আতঙ্ক আর ভয়ও কাজ করে, এই যেনো চিৎপটাং।

খাল সাঁতরে পার হওয়ার পর আরও ৩০মিনিট হাঁট‍া পথ। এরপরই রূপবতী নাফাকুম। তবে পথিমধ্যে আরও নাম না জানা কিছু পাহাড়ি ঝরনার দেখা মেলে। এসব ঝরনার সৌন্দর্যও কম নয়।

অঝোরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারও মনে নাড়া দেবে। যেনো একটু ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে যাই! আর ঝরনা বা জলপ্রপাতের কলকল শব্দও মনে আশ্চর্য শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে।

নাফাকুম জলপ্রপাতের পাশে ছোট ছোট গোল গর্ত দেখে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন রেমাক্রী বাজারে বোমাং চিফের হেডম্যান সুবলম বম।

বললেন, এসব গর্তে লাফিয়ে পড়ে মাছ বা নাফা। সেখান থেকেই নাফাকুম নাম।
 
যেভাবে যাবেন:
উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা ধরে বান্দরবান জেলা শহর থেকে থানচির দূরত্ব ৭৯ কিলোমিটার। বাস কিংবা চান্দের গাড়িতে যাওয়া যায় সেখানে। পথে পড়বে চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর ছাড়াও ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ি গ্রাম।

বাসের ভাড়া জনপ্রতি দু’শ টাকা। আর ল্যান্ড চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া লাগবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

থানচিতে থাকার সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। রয়েছে বিজিবির নতুন সংযোজন ‘সীমান্ত অবকাশ’।

থানচি সদর থেকে নৌকা, হাঁটা মিলিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টার দূরত্ব নাফাকুমের। তবে সেখানে যাওয়ার আগে অবশ্যই স্থানীয় থানা ও বিজিবি কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করতে হবে।

আর ইঞ্জিনচালিত বোটের ভাড়া পড়বে ৩৫০০-৫০০০ টাকা। গাইড ১৫০০ টাকা, স্থানীয় গাইডকে আরও ৫০০ টাকা দিতে হবে।

থাকা-খাওয়া:
মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা থানচির রেমাক্রী ইউনিয়ন বাজারে এসে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে যাওয়ার সময়ই অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন

**খাবারের দামটাই যা বেশি তূর্ণা নিশিথায়
**অব্যবস্থাপনায় ম্লান শৈলপ্রপাতের সৌন্দর্য

**পাহাড়ে সূর্যোদয়
** থানচির পর্যটন তরুণদেরই আকৃষ্ট করে
** 'ঝুলছে' থানচির ঝুলন্ত সেতু
** থানচিতে সম্প্রীতির মেলবন্দন 
** পাহাড় সঙ্গমে মৎস্যে ভরপুর রূপসী কাট্টলী
** খাবারের দামটাই যা বেশি তূর্ণা নিশিথায়
** পাহাড় থেকে বাজারে নেমে গেছে ‘ভাগের মা’ সড়কটি
** ফলদ-বনজে বিমুগ্ধ ফ্রুটস ভ্যালি
** আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথে

** সুন্দর ঝরনার দুঃখ

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫,২০১৬
এমএ/এসআর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ