বাগেরহাট থেকে: টানা দু’দিন বাগেরহাটে ঘোরার পরিকল্পনা। সবাই যাচ্ছে খান জাহানের মাজারে, ষাট গম্বুজ মসজিদ, বড় বড় দীঘি, আরও বেশ কয়েকটি মসজিদ আর মাজারের মতো স্থাপনা দেখে যখন ভাবছিলাম, এবার কোথায় যাওয়া যায়?
তখন স্থানীয় সহকর্মী জানালেন, শহরের খুব কাছেই তালেশ্বর গ্রামে রয়েছে একটি পালপাড়া।
ছবি: আবু বকর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
তালেশ্বর যাওয়ার জন্য একটি খোলা ভ্যান নিলাম, যেন চারপাশটা ভালো মতো উপভোগ করা যায়।
সকালের কুয়াশা মাত্র কাটতে শুরু করেছে, পূর্ব আকাশে সূর্য জানান দিতে শুরু করেছে একটি ঝকঝকে সুন্দর দিন আসছে। আর তখন শীতের আড়মোড়া ভেঙে গ্রামটি তার অপরূপ রূপ মেলে ধরতে শুরু করলো।
ছবি: আবু বকর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ভ্যান চালক আক্তার হোসেন শহরের হাইওয়ে থেকে গ্রামের পিচঢালা সরু রাস্তায় নেমে চলতে শুরু করলেন, তখন কেবল মুগ্ধতার পালা, ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী…!’
রাস্তার দু’পাশে সারি সারি নারকেল-সুপারি, খেজুর মেহগনি গাছ। একপাশে ধানক্ষেত, অন্য পাশে মাছের ঘের, কোথাও ছোট ছোট ডোবায় পানি শুকিয়ে এসেছে, কাদা জলে ছোট মাছ ধরতে সকাল থেকেই লেগে পড়েছেন অনেকেই।
ছবি: আবু বকর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
এসব দেখতে দেখতেই চলে এলাম তালেশ্বর গ্রামের ছোট্ট বাজারে। বাজারের শুরুতেই চোখে পড়লো মিষ্টির দোকান। গোপাল সাহার মিষ্টির দোকানের গরম গরম রসগোল্লা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু…এবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পালপাড়ায়।
সকাল থেকেই কর্মমুখর দেখা গেল পালপাড়া। নারী-পুরুষ একসঙ্গে মেতে রয়েছেন…সৃষ্টিযজ্ঞে। কেউ ব্যস্ত মাটি মাখতে, কেউ পরম যত্নে বুলিয়ে দিচ্ছেন পিঠার সাজের শেষ প্রলেপ দিতে।
ছবি: আবু বকর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চুল্লিতে ফুলের মতো সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে ছোট ছোট গাছের টব, যেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লাল রঙা বর্ডার। পুরো ৩০ পরিবারের পালপাড়াই দেখার মতো।
ছবি: আবু বকর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
কথা হলো তপন কুমার পাল, শোভা রানী পাল, পুতুল পালের সঙ্গে। আন্তরিক অভ্যর্থনায় তারাই দেখালেন সৃষ্টিযজ্ঞ, ঘোরালেন পালপাড়া। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এলাম…নিয়ে ফিরলাম অফুরন্ত ভালোলাগা।
ছবি: আবু বকর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
কেউ বাগেরহাটে এলে, সময় করে একটি বেলায় ঘুরে আসতে পারেন…শ্যামল সবুজ ছোট্ট গ্রামে তালেশ্বরের পালপাড়ায়। দেশজ ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে মৃৎশিল্প। তাদের কাজ এবং জীবনযাপনের নানা দিক সত্যি মুগ্ধ করবে। আর বাড়তি পাওনা হবে সোনালী বা সবুজ ঘাসের ডগায় দু’ফোটা শিশিরের মুক্তোর ঝিলিক।
যতদূর চোখ যায় সবুজ গ্রামটির সৌন্দর্য দেখে কেবলই মনে হবে, ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু’।
যেভাবে যাবেন
বাগেরহাট শহর থেকে তালেশ্বরের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। রাস্তা বেশ ভালো বলে যে কোনো পছন্দের বাহনে যাওয়া যাবে পালপাড়া। মাইক্রোবাস ভাড়া নিলে ১০০০ টাকা নেবে তিন ঘণ্টার জন্য, আর অটো বা রিকশায় গেলে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
** কাঠ-শক্ত কাটলেট আর জেলি রুটিই ভরসা!
সহযোগিতায়
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এইচএ/