ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ভাইজোড়া খালে ‍ডুব দেয় গোলপাতা

আবু তালহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
ভাইজোড়া খালে ‍ডুব দেয় গোলপাতা সুন্দরবন ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলাম

ভাইজোড়া খাল, শরণখোলা রেঞ্জ, সুন্দরবন থেকে: লঞ্চ বা ট্রলারে বসে সুন্দরবনের ভেতরের পরিবেশটা ধরা খুব কঠিন। আবার কোথাও কোথাও বন এত বেশি ঘন হয়ে গেছে যে, পায়ে হেঁটে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব!

বন্য পরিবেশ বুঝতে হলে একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা নিয়ে খাল ধরে চলা। মনে রাখতে হবে, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঢুকলে কেবল খালে যাওয়া-আসাই হবে, বন্য পরিবেশ পাওয়া যাবে না।

আন্দার মানিক থেকে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে নোঙর তোলে আমাদের গাঙচিল। শ্যালা নদী ধরে চাঁদপাইয়ের উদ্দেশে চলেছি আমরা। পথে হাতের বাঁয়ে পশ্চিম দিকে ভাইজোড়া খাল সুন্দরবনের গহীন ভেতরে চলে গেছে। ট্রলার ছেড়ে ডিঙি নৌকায় ভেতরে যাওয়া শুরু করলাম আমরা। জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে ততক্ষণে।

সুন্দরবন ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলামভ্রমণপিপাসুরা বলে থাকেন, সাগর এবং পাহাড় মানুষকে টানে। কিন্তু সুন্দরবনের ভেতরে না গেলে বোঝা যাবে না- মানুষকে বন কতটা টানতে পারে। ভাইজোড়া খাল বেয়ে স্রোতের বিপরীতে চলার সময়ও কানে আসছিলো আমাদের নিশ্বাসের শব্দ, একে নীরবতা বললে কেউ দ্বিমত করবেন না নিশ্চয়ই!

শহুরে আবহ ছেড়ে হঠাৎ বনের ভেতরে গেলেই মনে পড়বে পাখির কলতানে অনাবিল আনন্দে জেগে ওঠার- ছোটবেলার স্মৃতি। কান পেতে খালের দু’পাশে, মাঝে থাকা গাছের শাখায় তাকালেই ধরা যাবে ফিঙে, টুনটুনি, মাছরাঙা, বক, চিল, বাঙলা শকুন, কাদাখচার ডাক এটি।

সুন্দরবন ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলাম
বৈঠার ঘাঁয়ে প্রায় আধাঘণ্টা চলার পরে কমতে থাকে আলো। এখান থেকে সরু হয়ে এসেছে ভাইজোড়া, তাই উল্টো দিকে ফেরার পালা। এবার আর বৈঠা টানার দরকার নেই, স্রোতের টান ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শ্যালায়। স্রোত থাকলেও অশান্ত নয় এই খাল। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বয়ে যাচ্ছে অন্তঃস্রোত। স্বচ্ছ আস্তরণের নীচে ঘোলা হয়ে গেছে জোয়ারে ভেসে আসা পলি।

সুন্দরবন ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলাম
বনের ভেতরের অংশে নীরবতা কেবল বাতাসে নয়, মাটি এবং জলেও। খালের দু’পাড়ে তাকালেই কেবল দেখা যায় সাগর ফেরত নিয়েছে যা দিয়েছিলো। এর মাঝে হঠাৎ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কিছু গোলপাতা, আরও কিছু অচেনা লতা-গুল্ম খালের মাঝখানে দিব্যি স্নান সেরে উঠেছে।

ঘোলা পানিতে ডুবে থাকলেও ভাটার টান এদের স্নিগ্ধতায় ভাটা ফেলতে পারে না।   চাঁদের সঙ্গে প্রকৃতি কতটা জড়িয়ে রয়েছে সে হিসাব সুন্দরবন ঘুরতে এলে করতে হবে। আর জোয়ার এবং ভাটা দুই সময় না দেখতে সুন্দরবন দেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বৈকি!

সুন্দরবন ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলাম
খাল থেকে বেরিয়ে শ্যালায় আসতেই ইঞ্জিন চালু করতে হলো, কারণ এখানকার স্রোতে একজন মাঝির পক্ষে ভরা ডিঙি নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন।

**মুহূর্তেই বন্ধু হয়ে ওঠে কটকার হরিণ-বাঁদর

**বিপদের কাণ্ডারী বদর কবুতর

**দুবলার চরে নাম সংকীর্তন-ভাবগীতে খণ্ডকালীন জীবন

**বাঘের পায়ের ছাপ সন্ধানে ওয়াকওয়ে ধরে দেড় কিলোমিটার

**মংলা পোর্টে এক রাত

**বিস্মৃতির অতলে বরিশালের উপকথা​

**‘জোনাকি’ ভরা বুড়িগঙ্গা

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এটি

logo

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ