আলাপটা শুরু হলো আম নিয়েই। ‘ভালো আম কোথায় পাওয়া যাবে?’ আড্ডার মাঝখানে ঢুকে পড়া ভদ্রলোকের কিছুটা তাড়া আছে বোধ হয়।
খানিকটা হেঁটে পুরাতন বাজারে আমের দরদাম দেখে নেওয়ার ইচ্ছে জাগলো। সকাল বেলা বলে হয়তো, বেশি আসেনি, কিছু আমের সঙ্গে লিচু, কলা, কোথাও কোথাও নারিকেলের ডাব আর নিত্যপ্রয়োজনীয় আলু-পেঁয়াজের পসরা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মহানন্দার পাড় ধরে চলা হাসপাতাল রোড দিয়ে হেঁটে শেষ মাথায় গিয়ে সিটি মেডিকেল সেন্টারের সামনে আরেকটা চা দোকানে গিয়ে থামলো যাত্রা।
লম্বা কাঠের একটি বেঞ্চে পায়ের ওপর পা তুলে বসা একজন। মাঝারি ছাঁটের সাদা-পাকা দাঁড়িতে হাত বোলাচ্ছিলেন অন্যমনস্ক হয়ে। একটি বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কথা শুরু হতেই ফল-ফলাদি সংক্রান্ত আলাপ থেকে ভোটের আলাপে টেনে নিয়ে গিলেন তিনিই। তার সামনের বেঞ্চে বসে আলাপ করা আইনজীবীও পরে যোগ দিলেন ভোটের আলাপে।
২০১৯ সালের ভোটকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের তো তৎপরতা শুরু হয়েই গেছে। বিরোধী দলগুলোর হাইকমান্ড থেকেও প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নেতারাও অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে জানান দিচ্ছেন, নির্বাচনে যাবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খবর কী?
আইনজীবী কথা বলার আগে তার পেশার স্বার্থে নামটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। মোবাইল হাতে দেখে ছবি তুলতেও মানা করেন। এরপর বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গত পৌরসভা নির্বাচনের ফল জানেন? নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামিউল হক লিটনের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত কেউ পাত্তা পাচ্ছিল না। কিন্তু ভোটের রাতে সব উল্টে গেল।
কর্মজীবী শহিদ মিয়াও রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন। তিনি এসময় কথা টেনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারের পেছনে ‘বিভীষণ’দের দায়ী করেন। কিন্তু আইনজীবী ভদ্রলোকের কথা, বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান এক হাজার বা তার কম বেশি ছিল। নির্বাচনের দিন আর কতো ভোট ষড়যন্ত্র করে এধার-ওধার করা যায়?
এবার শহিদ মিয়াও মাথা নেড়ে সায় দেন, সায় দেন ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও। তিনি বরং আরেকটু রহস্য করেই বলেন, বাইরে দেখো এক রূপ, ভেতরে আরেক রূপ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বারবার। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তির যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনের আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলেও ভোটকেন্দ্রিক ‘ওঠা-বসা’ চলছে।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মনোনয়ন কে পাবেন না পাবেন সে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আলাপ উঠেছে, তবে এখনও জমে ওঠেনি। আগামী রমজান থেকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সভা-শোডাউন শুরু হবে বলে অনুমান চলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ অর্থাৎ সদর আসনে দশম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ। এ আসন থেকে একসময় এমপি হয়েছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ। সদর আসন নিয়ে আওয়ামী লীগে যেমন পৌরসভা নির্বাচনের পর নতুন করে আলাপ শুরু হয়েছে, তেমনি বিএনপিতে আলাপ শুরু হয়েছে জেলার নেতৃত্বে গত সপ্তাহে অ্যাড. রফিকুল ইসলাম টিপুকে সভাপতি, আমিনুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ও শামীম কবির হেলিমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণার পর।
তৃণমূল বা জনগণ কাকে পছন্দ করতে পারে— এমন আলাপে সেই আইনজীবী বলেন, মনোনয়ন এখন সিন্ডিকেটের হাতে থাকে। আর জনগণ যে কাকে চায় সে বলা মুশকিল। কারণ সামিউল হক লিটনের পক্ষে এমন গণজোয়ারের পর তার পরাজয়ে জনগণের মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে।
এক কাঠি এগিয়ে শহিদ মিয়া বলেন, ভোটের আগে ৫০০ টাকা হাতে পেলে জনগণ ভালো মানুষটার চেহারা ভুলে যায়। আবার ১০০০ টাকা হাতে পেলে আগের ৫০০ টাকার কথা ভুলে যায়। এই জনগণের আবার প্রত্যাশা থাকে কীভাবে?
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
এইচএ/জেডএম