প্রথম যাত্রা বাগাতিপাড়ার উদ্দেশ্যে। মোটর সাইকেলে চেপে ৪৫ মিনিট চলার পর পৌঁছলাম বাগাতিপাড়া উপজেলা বাজারে।
স্টলে পা রাখতেই উৎসুক সবার চোখ অসময়ে আগত অপরিচিত অতিথির দিকে। সময় নষ্ট করার সময় নেই। তাই আপাতত আসল পরিচয় গোপন করে নিজেকে পর্যটক বলে চালিয়ে দিলাম। যোগ দিলাম আড্ডায়। প্রাথমিক কর্থাবার্তার শুরু আম, গরম আর বৃষ্টি নিয়ে। জমে গেল আড্ডা। ‘অর রোডস লিড টু রোম’—এর মতো করে এক সময় কথা গড়ালো রাজনীতির দিকে। শুরু হয়ে গেল অঘোষিত এক নির্বাচনী টকশো। নির্বাচন আর ভোটের রাজনীতি নিয়ে আমজনতার ভাবনা-চিন্তার মতিগতি জানার এটাই মোক্ষম সুযোগ। আলোচনায় আগামী নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা খোলামেলা কথা বলতে চাচ্ছেন না স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে সাবধানী ও কৌশলী তারা। সরাসরি কিছু বলতে চান না কেউ। বোঝা গেল এটাই স্থানীয় রাজনীতির বাস্তবতা। তবে সবার মুখে একটাই কথা, তারা সবাই চান সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি অবাধ নির্বাচন।
বাগাতিপাড়ায় কাঙ্ক্ষিত তথ্য বা আগাম ধারণা না পেয়ে অগত্যা রওয়ানা হলাম লালপুরের উদ্দেশ্যে। লালপুর হচ্ছে দেশের উষ্ণতম অঞ্চল। অন্যবারের মতোই গ্রীষ্মকাল জুড়ে এখানে খররৌদ্রের চোখ রাঙানি। তীব্র তাপদাহে পুরছে চরাচর। পুরো উপজেলাবাসী। গরমে মানব আর পশুপাখি সবারই প্রাণ ওষ্ঠাগত।
গা-জ্বলানো আগুনে রোদ মাথায় নিয়ে প্রায় ৫০ মিনিট চলার পরে মোটর সাইকেল থামলো লালপুর বাজারে। মফস্বল এই শহরটি কিছুটা আগোছালো, জৌলুসহীন। তবে প্রাণচাঞ্চল্যের কোনো কমতি নেই। সবাই নিজেদের মতো কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। এবরাও আড্ডার খোঁজ। প্রবেশ করলাম লালপুর বাজারের জনপ্রিয় একটি চায়ের স্টলে। এবার আর আম, গরম ইত্যাদি নিয়ে কথা না বলে সরাসরি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভিড়ে গেলাম আড্ডায়। কথা শুরু করলাম রাজনীতি নিয়ে। আর চায়ের স্টলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারাও আগ্রহ নিয়ে ঢুকে গেলেন রাজনীতির এই অঘোষিত টকশোতে। প্রথমে ভাষাগত কিছুটা সমস্যা হলেও পরে আর তেমন সমস্যা হয়নি। দেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সব অঞ্চলের মানুষেরই একটাই দাবি, একটাই বক্তব্য: যেন অবাধ, শান্তিপূর্ণ হয় নির্বাচন।
লালপুর বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার ইসলাম আগামী নির্বাচন নিয়ে বাংলানিউজকে তার্ স্পষ্ট অভিমত জানান এভাবে: আমরা একটি শান্তিপুর্ণ নির্বাচন চাই। যেখানে আমাদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত থাকবে। প্রত্যেকের নিজের ভোটটা যেন আমরা নিজে দিতে পারি। সারাদেশে কিভাবে নির্বাচন হবে তা জানি না। তবে আমাদের এলাকায় নির্বাচনে কোনো সমস্যা চাই না।
আনোয়ার ইসলামের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে এবার বলতে থাকেন স্থানীয় কবিরাজ নিহাত আলী। তার বক্তব্যটা বেশ মনে ধরার মতো: সবাই যেন এক থালে ভাত খায়।
তার এই কথার মর্মার্থ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গত নির্বাচনগুলোতে সরকারি দল এবং বিরোধী দলগুলোর অনেক সহিংসতা দেখেছি। নির্বাচনের নামে মানুষের রক্ত ঝরতে দেখেছি। আগামী নির্বাচনে এসব আর দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, নির্বাচনে দলগুলোর মধ্যে প্রতিদন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু তা যদি সহিংস রুপ নেয় তাহলে এলাবাসীর ক্ষতি হবে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে আমাদের এই আশা।
সবার কথা শুনতে শুনতে এবার নিজের দাবির কথা জানালেন চা-স্টলের মালিক রাজ্জাক মিয়া: এক দল আসল আবার এক দল আসল না এমন নির্বাচন যেন না হয়। আমরা এলাকাবাসী চাই, সব দলই যেন নির্বাচনে আসে এবং ভালো একটি নির্বাচন হয়।
নাটোর-১ আসনের এই দুই উপজেলার অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনটা যেন ২০১৪ সালের ভোটারহীন নির্বাচন না হয়—এটাই সবার চাওয়া। তাদের দাবি, সরকার এবং বিরোধী দলগুলো এক সঙ্গে বসে আলোচনা করে যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন তাদের উপহার দেয়। এক্ষেত্রে মূলত সরকারের কাছেই তাদের প্রত্যাশাটা বেশি। তারা সরকারের সদিচ্ছার ওপর ভরসা রাখতে চান।
** ত্রিমুখী কোন্দলে জর্জরিত নাটোর-১ আসনের আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এমএ/জেএম