মৌলভীবাজার-৪ আসনের অন্তর্গত এই এলাকার মানুষের দুর্গতির অন্যতম কারণ সড়কের বেহাল অবস্থা। ভাঙা সড়কের এই ভোগান্তি দীর্ঘদিনের।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে হাজিপুরের দূরত্ব প্রায় ষোল কিলোমিটার। বাইক্কা বিল যেতে হাজিপুর হয়ে যেতে হবে আরও ৭ কিলোমিটার। পুরোই ভাঙা রাস্তা।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টাকালে বাংলানিউজের কাছে ক্ষোভ আর বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন অবহেলিত এই জনপদের বাসিন্দারা।
তারা বলেন, এই সড়কে শুধু আমরাই চলি না, পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল ও হাইল হাওরে আসা পর্যটকরাও ভোগান্তিতে পড়েন। কখনো পড়েন দুর্ঘটনায়।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন কালাপুর ইউনিয়নের বরুনা এলাকা পাড়ি দিয়েই মেলে ঘাটের বাজার। যেখান থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার ভাঙা রাস্তা বাইক্কা বিলে গিয়ে শেষ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ৩/৪ বছর আগে নামে মাত্র রাস্তাটি সংস্কার হয়েছিলো। কিছু দিন যাওয়ার পর রাস্তার পিচ উঠে যায়, আর কাজ হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে টাকা এলে চেয়ারম্যান-মেম্বার, নেতা ও ঠিকাদাররা লুটেপুটে খায়। কাজ হয় নামে মাত্র। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ বিষয়গুলো ওয়াকিবহাল নাও থাকতে পারেন। কিন্তু তাঁরও উচিত ছিল, বরাদ্দকৃত স্থানে ঠিকমত কাজ হয়েছে কিনা, অন্তত একবার এসে দেখে যাওয়া। এলাকার মানুষের সঙ্গে এমন দূরত্ব আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে নৌকার ভোটে।
স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ওই এলাকায় উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের সমকক্ষ কোনো প্রার্থী নেই। গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে হাজি মুজিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তার বিরুদ্ধে চোরাচালান মামলা রয়েছে। যে কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী নেই ভেবে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ এলাকার মানুষকে অনেকটা অবহেলা করছেন।
তবে কালাপুরের ভাগলপুর গ্রামে দেখা মেলে মজলিস আলীর। জমি আবাদযোগ্য করার জন্য একা একা মই টানছিলেন তিনি। ভোটের আগে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘মুই কিতা খইমু (আমি কি বলবো)। রাস্তা ভাঙা থাখলে (থাকলে) কিতা (কি) অইবো (হবে)। ভোট তো নৌকা ছাড়া দেওয়ার জায়গা নাই। ’
স্থানীয় মীরনগর গ্রামের ইউছুব মিয়া বলেন, ‘ইনো (এখানে) প্রার্থী যে আউক্কা (আসবেন) নৌকার প্রার্থী শহীদরে ফেইল মারাইতা পারতা নায়। ’ কারণ তাইন মানুষ ভালা (ভাল)। ’
গল্পের ছলে স্থানীয়দের একজন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় সাত মাস আগে সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, সিলেটে কোনো গরিব নেই। নিজের এলাকার একজন মন্ত্রী-এমপি থাকলে মানুষ সংসদে তাকিয়ে থাকে এলাকার জন্য কিছু সুখবর আসবে। নিজের এলাকার মানুষ এতো দুর্ভোগে, তা সংসদ সংসদ হিসেবে তার দৃষ্টি সীমার বাইরে। এলাকার মানুষ দুর্ভোগে থাকলেও তাতে এমপির কি যায় আসে। ভোট আইলে ঠিকই আসবেন।
এমন সময় আলোচনায় সামিল হয়ে কালাপুর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল মিয়া অনেকটা দাম্ভিকদার সুরে বলেন, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ছাড়াও নৌকা নিয়ে এখন ‘কলাগাছ’ দাঁড়ালেও পাশ করবে।
কালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন। এলাকার উন্নয়নে সম্প্রতি এমপির কাছ থেকে চার লাখ টাকা বরাদ্দ এনে দুই ইউপি সদস্যকে দিয়েছি। তাছাড়া বিদ্যুতহীন বাড়িগুলোতে ২৪টি সোলার এনে দিয়েছি। এসব কারণে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীই এগিয়ে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ঘন্টা, মে ২৮, ২০১৭
এনইউ/জেডএম