বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিলো এই আসন। ’৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি এখানে।
সিংড়ার মাঠে ঘাটে ঘুরে বিএনপির জনপ্রিয়তার বিষয়টি টের পাওয়া গেল। আগামী নির্বাচনে সিংড়া বিএনপির আরও একটি প্লাস পয়েন্ট হলো উপজেলায় দলের অভ্যন্তরে কোন্দল না থাকা।
সিংড়া বিএনপিতে মূলত তিনটি ধারা। প্রত্যেক ধারাই তাদের মত করে রাজনীতি করে যাচ্ছে। তবে নাটোর সদরের মত এখানে হিংসাত্মক প্রতিহিংসার রাজনীতি নেই। বিষয়টি স্বীকার করলেন স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও।
সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ। তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তিনি। এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সিংড়ার বড় সাঁঐল এলাকার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে এলাকায় তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তার পিতা কাজী আবুল মসউদ পাকিস্তান আমলে অবিভক্ত ভারত ও পাকিস্তান আমলে এমএলএ ছিলেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নাটোর মহকুমায় গঠিত কমিটির প্রধানও ছিলেন তিনি। মোর্শেদ সাহেবের পিতার বড় ভাই কাজী আব্দুল মজিদও ছিলেন এমএনএ।
অবশ্য জনপ্রিয়তা আর মনোনয়নের দৌড়ে সিংড়া বিএনপির জনপ্রিয় নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কালাম আজাদই এগিয়ে ছিলেন বেশি। তবে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আবুল কালাম আজাদ। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হন তার স্ত্রী ফয়জুন নেছা পুতুল। ওই নির্বাচনে অবশ্য তিনি পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমানের কাছে। তবে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। হেরে গেলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ৯৪ হাজার ভোটের বিপরীতে পুতুল পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ভোট।
সিংড়ায় আবুল কালাম আজাদ একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। তিনি মারা গেলেও সিংড়ায় রয়েছে তার অনুরাগী নেতাকর্মীরা। সেক্ষেত্রে আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী ফয়জুন নেছা পুতুলের উপরও নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার।
সিংড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দাউদার মাহমুদের সঙ্গে কথা বলে এমনই আভাস পাওয়া গেল। আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর পর তার রাজনীতির ধারাকে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিই।
সিংড়া পৌর শহরের নিজ বাড়িতে কথা হয় তরুণ বিএনপি নেতা দাউদার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের এলাকা ধানের শীষের এলাকা। দলে তেমন কোনো কোন্দল নেই। আজাদ সাহেব বেঁচে থাকলে মনোনয়ন তিনিই পেতেন।
তবে দল যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন, তারা সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানালেন তিনি। এও বললেন, সিংড়া বিএনপিতে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকলেও কোনো কোন্দল নেই।
একই কথা জানালেন, সাবেক এমপি গোলাম মোর্শেদও। তিন বারের এমপি এই প্রবীণ নেতার সঙ্গে কথা হয় তার নাটোর শহরের বাসায়। জানালেন, এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে তাকে মনোনয়ন না দিলেও মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
তিনি বললেন, সিংড়া বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই। নির্বাচনে দলের পক্ষে সবাই একযোগে মাঠে নামবে।
কথা হয় উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন তুহিনের সঙ্গে। তিনি জানান, মৃত্যুর পরও এলাকায় জনপ্রিয় আবুল কালাম আজাদ। জনপ্রিয়তার জোরেই বিরুদ্ধ পরিবেশেও তিনি নির্বাচিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ফয়জুন নেছা পুতুল ভোটে দাঁড়ালে ৬৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদের পাশাপাশি ফয়জুন নেছা পুতুলও মনোনয়ন চাইতে পারেন।
এছাড়া সিংড়া পৌর বিএনপি সভাপতি ও সিংড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামীম আল রাজি এবং পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুও নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানান তিনি।
তবে মনোনয়ন যেই পাক না কেন, ধানের শীর্ষ মার্কার পক্ষে একযোগে কাজ করার কথা জানান সিংড়া বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের প্রায় সব স্তরের নেতাই।
বাংলাদশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৭
জেডএম/
** সিংড়ায় পলকই নৌকার মাঝি, কোন্দল নেই মনোনয়নে
** সিংড়ায় পলককে ঘিরে রাখে জনতা
** ‘সব ঠিক থাকলে’ নাটোরে ধানের শীর্ষ নৌকা তুমুল লড়াই
** পরিবারতন্ত্রেই অটল নাটোর বিএনপির একনায়ক দুলু
** নাটোর সদরে নৌকা ডুবতে পারে গ্রুপিং-কোন্দলে
** নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানে
** ছোট শহরের বড় পলিটিকস নাটোরে
** সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর
** চামড়া কিনছে না ট্যানারি, হাহাকার নাটোরের চামড়ার হাটে
** নাটোরে লিচুর রাজা চায়না থ্রি, কম যায় না মোজাফফরও
** আহ বৃষ্টি!, কি যে স্বস্তি!
** মায়ের কোলে ফিরলো হারিয়ে যাওয়া শিশু