ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

সিংড়ায় লড়াই আ’লীগের উন্নয়ন বনাম ধানের শীষের জনপ্রিয়তার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৭
সিংড়ায় লড়াই আ’লীগের উন্নয়ন বনাম ধানের শীষের জনপ্রিয়তার চায়ের আড্ডায় ভোটের আলাপ। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিংড়া (নাটোর) ঘুরে: সিংড়ায় ঘুরে একটা জিনিসই বোঝা গেল যে এলাকাটা আসলে ধানের শীষের ঘাঁটি। মার্কা ধানের শীষের ব্যাপক প্রভাব এখানে। বগুড়ার নিকটবর্তী এলাকাটিতে ধানের শীষের জনপ্রিয়তার জোরেই ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিলো বিএনপির দখলে।

বিএনপির দীর্ঘদিনের আধিপত্য ভেঙে সর্বপ্রথম নৌকা মার্কার বিজয় ছিনিয়ে আনেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা জুনাইদ আহমেদ পলক। ওই নির্বাচনে বিএনপির তিনবারের এমপি সিংড়া তথা নাটোরের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক গোলাম মোর্শেদকে পরাজিত করেন তিনি।

হন তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।

এরপরই একটু একটু করে ঘুরতে থাকে নৌকার চাকা। ব্যক্তিগত আচার আচরণ, জনমুখিতা এবং সবচেয়ে বড়কথা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় সিংড়ায় নিজের একটি পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন পলক।

এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে টের পাওয়া গেল বিষয়টি।

সিংড়ার হিজলি গ্রামের বাসিন্দা মোসলেমের সঙ্গে আলাপ পৌরশহরের পেট্রোবাংলা মসজিদ সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে।

কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। আগে ধানের শীষেই ভোট দিতেন। তবে তাদের এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য উন্নয়ন করেছেন পলক মন্ত্রী। তাই এবার অনেকেই পলকের জন্য হলেও নৌকা মার্কায় ভোট দিতে পারেন।

মোসলেম মিয়া বলেন, ‘চ্যাংড়া হলেও এমপি ভালো। এলাকার অনেক রাস্তাঘাট করে দিছে, স্কুল-কলেজ হচ্ছে, বিদ্যুতের লাইনও দিচ্ছে। ’

সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে আব্দুল আজিজের চায়ের দোকান। সেখানে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে আড্ডায় কথা হলো সিংড়ার বালুভরা, শেরকোলের বিল এলাকার নূর আলীর সঙ্গে। এমপি সম্পর্কে তারও কোনো অভিযোগ নেই। বললেন, ‘এমপি ভালো মানুষ। এলাকার উন্নয়ন করিচ্ছেন। ’ পাশে বসে ছিলেন সাইদুর নামের একজন। বললেন, ‘এমপি খুব কাজ করিচ্ছেন। ’

এলাকায় কোন দলের ভোট বেশি জিজ্ঞেস করতেই তাদের বেশিরভাগ বললেন ধানের শীষের কথা। তবে পলক দাঁড়ালে হিসাবটা ভিন্ন হবে, এমন মন্তব্য তাদের।

সিংড়া এলাকায় এক সময় দাপট ছিলো চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের। চারদলীয় জোটের আমলে তাদের দাপটে এলাকার মানুষ ছিলেন দিশেহারা। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই।

বাসস্ট্যান্ড মোড়ের আরেক দোকানে কথা হলো সিংড়ার শোলাকুড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। কৃষিকাজ করেন। জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ভয়ভীতি আছে?’ উত্তর দিলেন, ‘না ভয়ভীতি করবো ক্যা? ‍এলাকায় কোনো সন্ত্রাস নাই। শান্তি আছে। ’ এ জন্য বর্তমান এমপি পলককে কৃতিত্ব দিলেন তিনি।

মোহাম্মদীয়া হোটেল সংলগ্ন খোকনের চায়ের দোকানে অনেক মানুষের ভিড়। প্রচণ্ড গরমের কারণে সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন কর্মজীবী মানুষেরা। এ কথা সে কথায় আলাপ জমে উঠলো।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘মন্ত্রী কি আবার নমিনেশন পাবেন?’ জবাব দিলেন শাহাদাত নামের একজন বললেন, ‘আওয়ামী লীগে পলককে ঠেকাবি কেটা? আর পলক রাস্তায় দুই চার দশটা মানুষ দেখলেই গাড়ি থামায়, কথা কয়, সালাম দেয়। এলাকায় উন্নয়ন করিচ্চেন। ’

বললাম, ‘তাহলে তো পলক আবার এমপি। ’ এবার শাহাদত হেসে বললেন, ‘হিসাবটা এত সহজ লয়। সিংড়ায় ধানের শীষের অনেক ভোট। ধানের শীষ মার্কা লিয়া যে কেউ দাঁড়ালেই তার সাথে পলকের কনটেস (কনটেস্ট) হবি। ’

নাটোর থেকে বাসে সিংড়া যাওয়ার সময় কথা হয় স্থানীয় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা সুশান্ত সাহার সঙ্গে। জানালেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পলকের কোনো বিকল্প নেই। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ আছে। উন্নয়নও করেছেন। প্রতি সপ্তাহেই নিয়ম করে তিনি এলাকায় আসেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আসলে এই এলাকাটি ধানের শীষের। ধানের শীষ মার্কা নিয়ে যে কেউ দাঁড়ালেই তার পক্ষে ভোট পড়বে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকার সঙ্গে মার্কা ধানের শীষের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ’

বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও কথা বলে টের পাওয়া গেল বিষয়টি। পলক না মনোনয়ন পেলে নিশ্চিন্তে এ আসনে জয়লাভ করবেন তারা-- এমন কথাই জানালেন স্থানীয় তৃণমূল বিএনপির এক নেতা। তিনি বললেন, ‘পলক এলাকায় উন্নয়ন করেছেন এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। উন্নয়নের কারণে এলাকায় তার একটা জনপ্রিয়তার ভিত্তিও ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। সিংড়ায় জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন পলকই। ’

সব মিলিয়ে সিংড়া ঘুরে একটা কথাই বোঝা গেল, এলাকার ভোটের রাজনীতিতে ধানের শীষের একটি ভিত্তি রয়েছে। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রাখা এবং এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজের একটি ব্যক্তি ইমেজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন পলক। এ কারণে সামনের নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তবে ধানের শীষের জনপ্রিয়তার সঙ্গে মূলত লড়াই হবে পলকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৭
আরআই/এইচএ/

আরও পড়ুন
** মার্কা পেতে কোন্দল নেই সিংড়া বিএনপিতে
** সিংড়ায় পলকই নৌকার মাঝি, কোন্দল নেই মনোনয়নে
** সিংড়ায় পলককে ঘিরে রাখে জনতা

** ‘সব ঠিক থাকলে’ নাটোরে ধানের শীর্ষ নৌকা তুমুল লড়াই
** পরিবারতন্ত্রেই অটল নাটোর বিএনপির একনায়ক দুলু
** নাটোর সদরে নৌকা ডুবতে পারে গ্রুপিং-কোন্দলে
** নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানে
** ছোট শহরের বড় পলিটিকস নাটোরে
** সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর
** চামড়া কিনছে না ট্যানারি, হাহাকার নাটোরের চামড়ার হাটে
** নাটোরে লিচুর রাজা চায়না থ্রি, কম যায় না মোজাফফরও
** আহ বৃষ্টি!, কি যে স্বস্তি!
** মায়ের কোলে ফিরলো হারিয়ে যাওয়া শিশু

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।