এই মিশনে বাংলানিউজ টিমের একজন কর্মী হিসেবে ঘোরাফেরা করছি ঐতিহ্যবাহী জেলা শহর।
১০টি ইউনিয়ন ও দেশের অন্যতম প্রাচীন পাবনা পৌরসভা নিয়ে গঠিত পাবনা-৫ সংসদীয় আসন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মওলানা আব্দুস সোবহানকে হারিয়ে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন প্রিন্স। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
প্রথম দফা এমপি হওয়ার পর সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্মে এমপি প্রিন্সের পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে অভিযোগ ওঠে। এ কারণে সে সময় সমালোচিতও হন তিনি।
তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফের নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকটাই এসব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই এমপি।
জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনের আগেই নিজের ক্লিন ইমেজ গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয়েছেন তিনি, পাবনা ঘুরে শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য পাওয়া গেল এমনটাই।
পাবনায় শহরের কেন্দ্রস্থল আব্দুল হামিদ রোড। এই রোডেই অবস্থিত পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। অন্যান্য অনেক জেলার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের থেকে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি অবশ্য অনেক বেশি বনেদি। ব্রিটিশ আমলের পুরনো একটি দ্বিতল ভবনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে আধুনিক একটি দ্বিতল ভবন। সামনেই খোলা অনেকটা জায়গা জুড়ে চত্বর। উপরে রয়েছে স্টিলবার দিয়ে তৈরি টিনের শেড। শেডের নিচে খোলা চত্বরে রাখা আছে টেবিল ও চেয়ার।
রোজার প্রথম দিন দুপুর বেলা হলেও দেখা গেল চত্বরে রাখা চেয়ারে বসে আড্ডা মারছেন বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
নতুন ভবনটির একটি কক্ষে দেখা গেল, পাঞ্জাবি পরিহিত দুই প্রৌঢ় ভদ্রলোককে চেয়ারে বসে কথা বলতে। একজনের পরনে সাদা পাঞ্জাবি এবং কাঁচাপাকা চুলে বঙ্গবন্ধুর ব্যাকব্রাশ স্টাইল দেখে বুঝে গেলাম, নেতৃস্থানীয় কেউ হবেন। জানা গেল, তিনি মনির উদ্দিন আহম্মেদ মান্না। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
জানালেন, পাবনার আওয়ামী লীগে এক সময় গ্রুপিং কোন্দল থাকলেও এখন তেমন কোনো সমস্যা নেই। নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আছে, তবে তা সহিংসতার পর্যায়ে নেই।
মনোনয়নের ব্যাপারে জানালেন, বর্তমান এমপি প্রিন্সই মনোনয়ন লাভের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে মনোনয়ন চাইতে পারেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি রাগীব হাসান টিপুও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়া আছেন দুদকের সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ক্লিন ইমেজের লোক হওয়ায় তারও সম্ভাবনা আছে।
এমপি প্রিন্স সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবই প্রকাশ করলেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা তৃণমূলের এই নেতা।
জানালেন, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে সম্পূর্ণ দূরে আছেন এমপি প্রিন্স। অনেক লোককেই চাকরি দিয়েছেন। বিনিময়ে কোনো টাকা নেননি। এছাড়া সন্ত্রাসীদেরও আর প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ আছে। প্রতিদিনই নিয়ম করে সন্ধ্যার পর পার্টি অফিসে বসেন তিনি। দলের জেলা সভাপতি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ঈশ্বরদী কেন্দ্রিক হওয়ায় জেলায় দলের প্রায় সব কর্মকাণ্ডই এমপি প্রিন্সকে ঘিরে সম্পন্ন হয়।
মান্নার কথার সত্যতা পাওয়া গেল শহরের ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক কালামের (ছদ্মনাম) সঙ্গে আলাপ কালেও।
শহরের গোবিন্দা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এই প্রৌঢ় রিকশা চালকের রিকশায় করেই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরলাম পাবনা শহরে।
সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর যেন স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে পুরোটা সময় থেকে গেলেন তিনি। অনেকটা জোর করেই খাওয়ালেন চা। বোঝা গেল, রিকশাচালক হলেও অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন তিনি। খোঁজ রাখেন এলাকার রাজনৈতিক হালহকিকতেরও।
গোবিন্দা এলাকায় তার বাড়ির পাশেই কেষ্টপুর এলাকায় বাড়ি এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্সের। এমপিকে চেনেন অনেক আগে থেকেই।
এমপি প্রিন্স বর্তমানে অনেক জনসম্পৃক্ত বলেই জানালেন কালাম। নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে তার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন অনেকেই। তবে কারও কাছ থেকে টাকা পয়সা খাওয়ার অভিযোগ তার কানে আসেনি বলে জানালেন এই রিকশা চালক।
রাতে কথা হলো এমপি প্রিন্সের সঙ্গে। এমপির বাড়ি সংলগ্ন লাইব্রেরির বাজারে। সেখানে একটি চায়ের স্টল ‘সকাল সন্ধ্যা’য় প্রতিদিন রাতেই নিয়ম করে এলাকার মানুষজন ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসেন এমপি প্রিন্স। রাত দশটার দিকে সেখানে পাওয়া গেল এমপি প্রিন্সকে। লাল চা খেতে খেতে আলাপ হলো এমপির সঙ্গে।
প্রিন্স জানালেন, দ্বিতীয় দফায় এমপি হওয়ার পর তিনি আরও বেশি জনসম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
মনোনয়নের প্রসঙ্গে জানালেন, তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে যদি না পান, তবে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামবেন।
কথা হলো মনোনয়নে ক্ষেত্রে এমপি প্রিন্সের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের সঙ্গেও।
পাবনা পৌরসভায় সাবেক মেয়র ও সদর উপজেলার দুই দুই বারের নির্বাচিত এই উপজেলা চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তার বাড়িও শহরের কেষ্টপুর এলাকায়। সন্ধ্যায় ইফতারের পরে তার বাড়িতেই পাওয়া গেল তাকে। কোনো ধরনের আড়ম্বর ও নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত নন তিনি। বাড়ির নিচতলার অফিস ঘরে সাধাসিধে পোশাকে বসে আছেন একাই।
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকলেও মনোনয়ন নিয়ে এমপির সঙ্গে তার কোনো কোন্দল নেই বলেই জানালেন মোশাররফ। নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোনো নির্বাচনে হারেননি তিনি। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাই দলীয় মনোনয়ন চাইবেন তিনিও। তবে না পেলেও ক্ষতি নেই। বললেন, প্রিন্স বা অন্য যে কেউ নমিনেশন পেলেও তার জন্য কাজ করবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৭
জেডএম/