তবে দল ও সমর্থকরা তাকে চাইলেও বয়স হওয়ার কারণে নির্বাচন করতে নারাজ সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। নিজের পরিবর্তে ছেলে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে এই আসনে দেখতে চান তিনি।
তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নওশাদকে জমির উদ্দিনের বিকল্প মানতে অনেকটাই নারাজ নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে জমির উদ্দিন সরকারের পরিবারের বিএনপি‘র প্রতি অবদানের কারণে বাধ্য হয়ে অনেকেই নওশাদকে জাতীয় নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে যাবেন। তবে নওশাদ জমির দাঁড়ালে ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
পঞ্চগড়-১ আসনে জমির উদ্দিন সরকারের অধিপত্য থাকলেও জেলা সদর তার অনেকটাই বাইরে। জেলা বিএনপিতে তার বিদ্রোহী গ্রুপ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুল ইসলামের প্রভাব বেশি। এই আসনে সরাসরি না বললেও এই পৌর মেয়র নির্বাচনের জন্য নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করেন। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও কর্মীরা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে প্রার্থী মানলেও তার ছেলের বিষয়ে নারাজই বটে।
পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জমির উদ্দিন নিজেও নির্বাচনী এলাকায় আসেন না। তার ছেলে তো পাঁচ বছরেও আসেন না। তৃণমূলের সঙ্গে নওশাদ জমিরের ৫ শতাংশও যোগাযোগ নেই। একজনকে ধানের শীষ হাতে দিলেই যে মানুষ ভোট দেবে তা কিন্তু না। নেত্রীকে চিন্তা করতে হবে নির্বাচনে জিততে হলে তাকে ১৫১টি আসন পেতে হবে। সেভাবেই প্রার্থী দিতে হবে।
পঞ্চগড়-১ আসনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা জানান, নওশাদ জমির প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। যে নেতা ছয় মাসে- এক বছরে নির্বাচনী এলাকায় আসে না। বাপের যোগ্যতায় হয়ত মনোনয়ন পাবেন, স্থানীয় বিএনপি এর জন্য সমর্থনও দেবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের সাথে সম্পর্কহীন নেতাকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া কষ্টকর। এরপরও মেনে নিতে হবে। আমরা তাদের কাছে অর্থ চাই না, শুধু চাই তিন মাস অন্তর অন্তর আসুক, আমাদের সাথে দেখা করুক। তাহলে আমরা উজ্জীবিত হই। তেঁতুলিয়া হলো ব্যারিস্টার জমির উদ্দিনের ঘাঁটি। এখানে উনি বা ওনার ছেলে আসুক নির্বাচনে পাশে থাকব।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিনের বিষয়ে কোনো প্রকার প্রশ্ন না থাকলেও তার ছেলের রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হওয়া উচিত বলে মনে করেন তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলমগীর হোসেন। তা না হলে, ভোটাররা তাকে চিনবেন না। নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপি’র এক নেতা বলেন, ঘরের ভেতর কোট-টাই পরে বসে থাকলে নির্বাচনে জেতা যায় না। বাপ যতই বড় নেতা হোক। রাজনীতির মাঠে থাকতে হলে কোমর বেঁধে নামতে হবে। স্থানীয় নেতাদের সময় দিতে হবে।
এদিকে ছেলের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমি আর নির্বাচনে অংশ নিতে চাই না। বয়স হয়ে গেছে, আমার ছেলে হার্ভাড গ্রাজুয়েট, ব্যারিস্টার, শিক্ষিত। এর থেকে বড় ডিগ্রি আর নেই, নির্বাচনে আসলে ভালো কাজ হবে। আমি চাই সে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলে দাঁড়াক। নেত্রী যদি তাকে মনোনয়ন দেয় সে নির্বাচন করবে। সে না দাঁড়ালেও আমার আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই।
রাজনীতিতে ছেলের সক্রিয়তা নিয়ে তিনি বলেন, আমার রাজনীতির বীজ তার শরীরে। পারিবারিকভাবে রাজনীতির বংশধর। তার উপর উচ্চ শিক্ষিত; রাজনীতিতে আসতে চাইলে ভালো হবে। রাতারাতি তো কেউ ভালো করবে না। সময় লাগবে, চেষ্টা করুক।
রিকশাচালক জহিরুল একনিষ্ঠ সমর্থক বিএনপির। গতবার ভোট না দিতে পারার আক্ষেপ এখনও বুকে বাজে। বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে, ভোট দিতে যাবেন- এ স্বপ্ন দেখেন তিনি।
জহিরুল বলেন, ভোট বিএনপিকেই দেমো। কিন্তু জমির উদ্দিনের ছেলেক হামরা এখনও চিনি না। কোনো ভরসায় ভোট দেমো। ছেলে হামাগের সাথে পরিচয় করি দেবার নাইগবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার তার ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে চাইলেও কেন্দ্রীয় বিএনপি জোটের অংশ হিসেবে পঞ্চগড়ের একটি আসন শফিউল আলম প্রধানের জাগপার জন্য রাখা হতে পারে। সেক্ষেত্রে শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিনা প্রধান বা সহ-ধর্মিনী অ্যধ্যাপিকা রেহানা প্রধানকে পঞ্চগড়-১ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৭
এমসি/জেডএম