ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

বগুড়া-৫: লটারির জুয়ায় চোখের বিষ এমপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
বগুড়া-৫: লটারির জুয়ায় চোখের বিষ এমপি ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধন করছেন এমপি হাবিবর রহমান

বগুড়া থেকে ফিরে: জুয়া যে অপরাধ সেটা তো সবারই জানা। তাস বা বিভিন্ন ধরনের খেলায় বাজি রেখে অর্থের আদান প্রদানই জুয়া। এটা সবাই খেলে না, অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্তত বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে। তবে ধুনট আর শেরপুরের সাধারণ মানুষের কাছে এই জুয়া এখন স্বাভাবিক। কারণ এটা হচ্ছে লটারি জুয়া। যেখানে লটারির টিকিট কিনে নারী-পুরুষ-আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা সবাই জুয়ায় অংশ নেয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় জুয়াকে স্বাভাবিক হিসেবে মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান। ১৮ দিন মেলা চলার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতেই প্রশাসন বন্ধ করে লটারি জুয়া।


 
ধুনট বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, একজন সংসদ সদস্য যখন প্রতিদিন লটারির জুয়ার মঞ্চে উঠে পুরস্কার ঘোষণা করেন এবং পরের দিন মানুষকে টিকিট কাটতে উৎসাহ দেন, তখন বুঝতে হবে তিনি এই জুয়ার ব্যবসা থেকে লাভ করছেন।
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও হাবিবর রহমানের প্রতি বিস্তর অভিযোগ শোনা যায়। লটারির জুয়া থেকে শুরু করে গ্রামের বালু মহালের অবৈধ বালু উত্তোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দুর্নীতি, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা, ছেলে ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দুর্নীতিসহ অভিযোগের পাহাড়ে চাপা পড়ে আছেন তিনি। এরই মধ্যে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
 
বগুড়া-৫ আসনে কিন্তু ২০১৪ সাল নয় শুধু, ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে জয় পেয়েছিলো। তবে এই হাবিবর রহমানের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ কেন? সংগঠনের নেতাকর্মীরা কি বলেন? আর সুর্নিদিষ্ট অভিযোগইবা কি?
 বগুড়া-৫ আসনে ভোটের আলোচনা
২০০৮ সালের নির্বাচনে শেরপুর উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকেন হাবিবর রহমান। সেই সময় ধুনট উপজেলা থেকে প্রায় ১৭ হাজার ভোটের সাপোর্ট পেয়ে জয় লাভ করেন তিনি।
 
ধুনট উপজেলা সভাপতি টিআই নুরুন্নবী, স্থানীয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক। পরিচয় হতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপি’র বিরুদ্ধে। বলেন, এখানে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক প্ররিশ্রম করেছে নেতাকর্মীরা। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন নিয়ে আসেন হাবিবর রহমান। তিনি দলের জেলা বা উপজেলা কোন পর্যায়েই ছিলেন না। তারপরও সবার মিলিত চেষ্টায় পাশ করে আসেন। তবে তিনি আসলে রাজনৈতিক চেতনা থেকে রাজনীতিতে আসেননি। ব্যবসা করতে এসেছেন এবং করছেন।
 
লটারি জুয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে স্বাধীনতা মেলার নামে জুয়ার আসর বসান স্বয়ং এমপি। লটারির টিকিটে থাকে নৌকার ছবি। তিনি নিজেই প্রতিদিন জুয়ার ফল ঘোষণায় আসতেন এবং সবাইকে টিকিট কিনতে উৎসাহিত করতেন। আমরা বিষয়টি ডিসি অফিসে জানালে, সেখান থেকে খেলা বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়।
 
বগুড়া জেলায় মেলার নামে জুয়ার আয়োজক হিসেবে বাচ্চুর নাম শোনা যায়। স্বাধীনতা মেলার নামে জুয়া আয়োজন করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ জানায়। এমপি হাবিবর রহমানের ইন্ধনেই দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেন বাচ্চু। অভিযোগ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আল মাসুদসহ আরো কয়েকজনের। তিনি বলেন, আমাদের আট জনের বিরুদ্ধে তিনটি করে মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়।
 
বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ধুনট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পোথুয়াবাড়ি থেকে বিলকাজুলি পেচিবাড়ি পর্যন্ত গ্রামে তিনি বালু উত্তোলন করেন। সেখানে কিছু অংশ তিনি বালুমহাল হিসেবে লিজ নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন গ্রামের পর গ্রাম মানুষের ঘরবাড়ি সরিয়েও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গত মে মাসের প্রথম দিকে ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী।
 
উপজেলা যুবলীগের সদস্য রাজীবুজ্জামান রাজিব বলেন, এমপি একসময় পুলিশে চাকরি করতেন। সেখান থেকে এসেছেন রাজনীতিতে। জনগণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কম। নির্বাচনী এলাকায় এমপি'র নিয়োগ দুর্নীতি, বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজে এবং আত্মীয়দের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।