এ সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে বিএনপি। মাকড়সার ঝুলের বিস্তার ঘটা দেখে ঠিকই আন্দাজ করার জো- কতটা সাংগঠনিক দুর্বলতা তাদের!
মিঠাপুকুর উপজেলা হেডকোয়ার্টার হিসেবে পরিচিত শাপলা মার্কেট এবং তার পাশের উপজেলা পরিষদ।
এ কী হাল তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর দল বিএনপির মতো একটি বড় সংগঠনের কার্যালয়ের! পাওয়া গেলো না কোনো নেতাকেও।
দলটির নেতার খোঁজ হচ্ছে শুনে পাশের প্রেসক্লাব (উপজেলা) থেকে বেরিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক বাংলানিউজকে বলেন, কোমড় ভাঙা দলের আবার কিসের নেতা। জামায়াত-শিবির করেই তো দলটা মরলো।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে তিনি আরও বলেন, বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ! প্রতি রাতে এখানে ফল রাখেন খুচরা ও স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। সকাল হতেই তা নিয়ে বসেন বাজার ও মোড়ে-মোড়ে।
এমন একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখাও হলো। জানতে চাইলে নাম বললেন, সুনীল চন্দ্র মহন্থ (৬৫)। স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি ছাত্রনেতাকে টুকটাক চাঁদা দিয়ে এই অফিস এখন ব্যবহৃত হয় ফলের আড়ৎ হিসেবে।
সুনীল ক্যামেরার সামনে বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি অফিসে গত এক বছর ধরে কলা রাখি; গুদাম ঘরের মতো। আজ পর্যন্ত কোনো দিন কোনো আয়োজন দেখিনি। শুধু আমিই নই, আরেক ব্যবসায়ী রাখেন আম।
''মরা দল'' বিএনপি যৌবন সঙ্কটে, এমন মত দিয়ে সেই সাংবাদিক পাশ থেকে বলে উঠলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে রংপুর-৫-এর এই আসন জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে জামায়াত নির্ভরতায় আস্তে আস্তে বিএনপি তথা খালেদার সূর্য ডুবেই গেলো! এখন এখানে নেতা খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও জেলা বিএনপির ড. মমতাজ উদ্দিন আর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খাজা নূর'র নাম লোক মুখে শোনা যায়।
তবে ২০১৫-তে সরকার পতন আন্দোলনের সময়ও মিঠাপুকুরে বিএনপি নয়, মাঠে নেমেছিল জামায়াত-শিবিরের লোকজন।
জামায়াতের অন্তত হাজার ৫০ ভোট ব্যাংক এখানে আছে বলে জানা যায়।
উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আলহাজ মো. বাবর আলীর (৭২) সঙ্গে কথা হয়। বলেন, বিএনপির কোনো প্রার্থীই নেই এ আসনে। আওয়ামী লীগ ও জাপার রাজনীতিই মূল হালচাল। তবে জামায়াতের যে ৫০ হাজারের মতো ভোট, সেটি আমরা ধরতে পারবো যদি ঠিক মতো গুছিয়ে কাজ করা যায়।
এছাড়া যুুদ্ধাপরাধ ইস্যু, নিবন্ধন বাতিল এবং ৫ জানুয়ারি থেকে ব্যর্থ আন্দোলনের পরও দলটির সাহস হবে কিনা প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রংপুর-৫ আসনটির আয়তন প্রায় ৫১৫ দশমিক ৬২ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে রংপুর সদর ও পীরগাছা উপজেলা, দক্ষিণে পীরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর, পূর্বে পীরগাছা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে বদরগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ উপজেলা। ইউনিয়ন ১৭টি, মৌজা ৩১০টি, গ্রাম ৩১৩ এবং ওয়ার্ড ১৫৩টি। বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) এইচ এন আশিকুর রহমান; তিনি চারবারের বিজয়ী।
বিএনপির কি সত্যিই এখানে নাজুক অবস্থা? এ নিয়ে জানতে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার পায়রা চত্বর সংলগ্ন জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে যাওয়া। তবে সেখানেও লোকজন নেই। নিভু নিভু জ্বলে বাল্ব। মামলার ভয়ে পালিয়ে-পালিয়ে পার্টি অফিসে আসতে হয় বলে এক নেতা জানালেন। ফোন করে অনুরোধে ডেকে আনা হলো পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজুকে।
নাজু বাংলানিউজকে বলেন, মিঠাপুকুরে বিএনপি সংগঠিত নয়। প্রার্থীর মতো প্রার্থী নেই। যারা আছেন তারা জুনিয়র, ফলে ফাইট হবে না। এতে এখানে বের হয়ে আসার সম্ভাবনা কম। এছাড়া পূর্বের জোট থাকায় জামায়াত শক্তিশালী। নুুরুল হুদা সুলতান ও অ্যাডভোকেট বদরুল ইসলাম চুন্নুর কথা বলতে হয়; তারা বিএনপির যোগ্য ও সিনিয়র ক্যান্ডিডেট ছিলেন, তারা ইন্তেকাল ফরমাইয়েছেন।
চলবে...
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
আইএ
** হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
** বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর!