ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ফের নৌকা কি পাবেন আফছারুল?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
ফের নৌকা কি পাবেন আফছারুল? আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা.আফছারুল আমিন, এম মনজুর আলম, মহিউদ্দিন বাচ্চু, ফরিদ মাহমুদ ও সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার

চট্টগ্রাম: দৃশ্যমান বড় কোনো অভিযোগ নেই চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী) আসনে আওয়ামী লীগের দু’বারের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমিনের বিরুদ্ধে।  অভিযোগ যা আছে, দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার মানুষ তাকে কাছে পাননি।  

আওয়ামী লীগের ভেতরের অভিযোগ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি সক্রিয় নন।   দলের নেতাদের সঙ্গেও দূরত্ব রয়েছে।

 

এসব অভিযোগ ডিঙ্গিয়ে আফছারুল আমিন সামনের নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন কি-না, সেটিই এই মুহূর্তে মাঠে-ঘাটে মানুষের আলোচনার বিষয়।   কারণ, এর মধ্যেই চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।  

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর এম এ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার যেমন আছেন, তেমনি মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং ফরিদ মাহমুদও।   আবার বিএনপির রাজনীতি ত্যাগ করা সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের ‘ঘরে ফিরে প্রার্থী হওয়ার’ কথাও আছে সাধারণ মানুষের আলোচনায়।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন হেভিওয়েট নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান।   বিএনপি নির্বাচনে গেলে তিনি আবারও প্রার্থী হবেন- এমনটাই মনে করেন সাধারণ ভোটাররা।  

নোমানের মতো শক্তিশালী প্রার্থীকে ঠেকাতে আফছারুল কতোটা সক্ষম- সে আলোচনাও চলছে আওয়ামী লীগের ভেতরে।

** আরও জানতে পড়ুন: আফছারুলের আসনে আলোচনায় নাগরিক সমস্যা

চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর-কোতোয়ালি আসনকে ভাগ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে গঠিত হয় চট্টগ্রাম-১০ আসন।   এরপরের দু’টি নির্বাচনেই জয় পেয়েছেন আফছারুল আমিন।   প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন তিনি।  

২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জেতার পর আফছারুল আমিনকে একবারের জন্যও এলাকায় দেখেননি বলে দাবি করেছেন ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম।  

‘এমপিকে তো চার বছরে দেখিনি।   মাঝে মাঝে মেয়রকে দেখি’- বলেন তিনি।


ওয়ারলেস কলোনির বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, ‘এমপিকে তো চিনি না।   অবশ্য আমাদের চেনার দরকারও নাই।   আমরা তো রাজনীতি করি না।   পেট পার্টি করি।   চাকরি করি, ভাত খাই।   এমপি চিনি না, মেয়র চিনি না’।

ভোট দেন কি-না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট তো শেখ সাহেবরে দেই’।

একই এলাকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এবার আফছারুল আমিনের মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে’।

নাসিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বাহাউদ্দিন লতিফী বলেন, ‘এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মসজিদ-কবরস্থানে যথেষ্ঠ টাকা-পয়সা দিয়েছেন এমপি।   তার জনপ্রিয়তাও কিছু আছে।   তবে তাকে সব সময় কিছু লোক ঘিরে থাকেন।   সাধারণ মানুষ তার কাছে যেতে পারেন না’।  

নাসিরাবাদ সিঅ্যান্ডবি কলোনির বাসিন্দা ইয়াছিন ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ তো এমপির কাছে ব্যবসা চান না, বিল্ডিং বানাতে চান না।   নির্বিঘ্নে কাছে গিয়ে মনের কথাটা বলতে চান।   সেটিও যদি তিনি না পারেন...’।

গত ০১ জুলাই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম জহুর আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীর সভায় ডা. আফছারুল আমিনসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে অভিযোগ করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী। নিষ্ক্রিয় নেতাদের পদ ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও প্রায়ই নিষ্ক্রিয় নেতাদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।

ডা. আফছারুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মনোনয়ন ওপরওয়ালার সিদ্ধান্ত আর শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত।   বাকি লোকজন কে কি বলছেন, সেগুলো চিন্তা করারও দরকার নাই।   আমি গত আট বছর মাস্তান-চাঁদাবাজ নিয়ে চলিনি।    অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি।   কর্মীদের নিয়েই চলেছি।   সুতরাং, আবারও মনোনয়ন চাইবো এবং আশা করি পাবো’।  

এলাকায় জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এলাকায় সব সময় যাই।   বড় এলাকা, কোথাও মানুষ এক সপ্তাহ না দেখলে পরের সপ্তাহে ভুলে যান।   তবে জনগণ আমাকে ভালোবাসেন’।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থেকে তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়া এম মনজুর আলম ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।   ২০১৫ সালে আবারও মেয়র প্রার্থী হন।   তবে নির্বাচনের দিন তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।   সম্প্রতি সামাজিক কর্মকাণ্ডে আবারও সরব হয়েছেন শিল্পপতি ও দানবীর হিসেবে পরিচিত মনজুর।  

চট্টগ্রাম-১০ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করবেন- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।


এম মনজুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার আদি বাড়ি, নানার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি সবই চট্টগ্রাম-১০ আসনে।   এখানে আমি স্কুল করেছি।   সামাজিক কাজকর্মও করছি।   এজন্য মানুষ ভাবছেন, আমি নির্বাচন করবো।   তবে আমি এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি।   বুড়ো মানুষ, অবসর নিয়েছি, আল্লাহ কপালে কি লিখেছেন জানি না’।

এলাকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সরব নগর যুবলীগের দুই নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ফরিদ মাহমুদও এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী।  

২০১৪ সালের নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু এবার আশায় বুক বেঁধেছেন।   তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিভিন্ন এলাকায় আমি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছি।   সারা চট্টগ্রামেই করেছি, তবে এ এলাকায় বেশি।   এখন যুবলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি।   সামাজিক কাজও করছি।   আশা করি, এবার মনোনয়ন পাবো’।

প্রথমবার নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন সৃজনশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আলোচিত যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ।   রাজনীতির পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় গল্প-কবিতা লেখালেখি করেন, বইও প্রকাশিত হয়েছে।  

ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘এলাকায় অসুস্থ-অসচ্ছল নেতাদের পাশে যাচ্ছি। শিশুদের মেধা বিকাশের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্গত এলাকার মানুষের কাছে যাচ্ছি।   সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনেও আমার অংশগ্রহণ আছে।   মানুষ এখন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী চান।   জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে আমি সংগঠনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবো’।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান।   আমার বাবাও এ এলাকার এমপি ছিলেন।   রাজনীতিক বাবার সন্তান হয়েও আমি ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করে এ পর্যায়ে এসেছি।   তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন নেতা হিসেবে আমি মনোনয়ন চাইবো’।    

...

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।