ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

খারাপ আবহাওয়ায় ফাঁকা অফিস!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
খারাপ আবহাওয়ায় ফাঁকা অফিস! গাইবান্ধা বিএনপি অফিস, ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা থেকে: সার্কুলার রোডের ৮৯ বছরের পুরনো বিল্ডিংটির বাইরে ও ভেতরের সাঁটানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও দেওয়ালিকা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেলো, এটি জেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস।

এক কক্ষ বিশিষ্ট অফিসে একজন মাত্র লোক। নাম মো. আলম।

গত ২৬ বছর ধরে এ অফিসে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আলম।   
 
হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির কারণে গত সাড়ে তিন বছর দলীয় কার্যালয় এড়িয়ে চলছেন বিএনপি নেতারা- এ চিত্র সারাদেশেই। তবে সম্প্রতি সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি শুরুর পর এই দৃশ্যের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।

বিএনপির বেশিরভাগ জেলা কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সারাদিন যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, সন্ধ্যার দিকে নেতা-কর্মীরা একবারের জন্য হলেও পার্টি অফিসে ঢুঁ মারেন। বিএনপি অফিসের কর্মী আলম, ছবি: বাংলানিউজ

কিন্তু রোববার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় গাইবান্ধা জেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে একজন নেতা-কর্মীরও দেখা মিললো না! বহু যুগের পুরনো বিল্ডিংয়ের পুরো ফ্লোরটা স্যাঁতসেঁতে ভেজা। আসবাবপত্র বলতে কাঠের একটা টেবিল ও প্লাস্টিকের ১০/১২টি চেয়ার!

চারটি চেয়ার বাদে বাকি চেয়ারগুলো এক পাশে একটার উপর একটা সাজিয়ে রাখা। অপর পাশে পেতে রাখা চারটি চেয়ারের একটিতে বসে ছিলেন মো. আলম।
 
অফিস নেতা-কর্মী শূন্য কেন? জানতে চাইলে আলমের দ্রুত উত্তর, খারাপ আবহাওয়ার কারণে নেতা-কর্মীরা আসেননি। অন্যদিন ঠিকই আসেন।
 
টানা ২৬/২৭ বছর বিএনপির অফিসে চাকরির সুবাদে বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। সে কারণেই হয়তো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দিনটিকে নেতাদের জন্য অফিসে আসার প্রতিকূল আবহাওয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন তিনি।
 
অথচ সামান্য দূরেই আওয়ামী লীগ অফিসটা নেতা-কর্মীতে জমজমাট। প্রতিকূল আবহাওয়া তাদের ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি। পাশে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অফিসেও নেতা-কর্মীর উপস্থিতি টের পাওয়া গেলো।

বিএনপি অফিসের দীর্ঘ দিনের স্টাফ মো. আলম বোঝানোর চেষ্টা করলেন, পুরনো ভবন। বৃষ্টি হলেই ছাঁদ বেয়ে পানি পড়ে, ফ্লোর ভিজে যায়। তাছাড়া আজ কোনো অনুষ্ঠানও নেই। সে কারণে অফিসে কেউ আসেননি।
 
তবে নেতা-কর্মীরা না এলেও প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে আসতে হয় আলমকে। প্রায় শত বছরের পুরনো বিল্ডিংটির লোনা ধরা দেয়াল ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার রাখেন তিনি। ভেজা ফ্লোরটাও ধুয়ে-মুছে রাখেন। তিনি নিয়মিত দরজা-জানালা খুলে রাখায় গুমোট গন্ধ বাসা বাঁধতে পারে না ঘরটিতে।

কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনে ঠিকই বাসা বেঁধে ফেলেছে অজানা এক ভয়! সে কারণেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাসদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অফিসে দলীয় নেতাকর্মীর আসা-যাওয়া থাকলেও বিএনপি অফিসে নেই।
 
স্থানীয়রা বলছেন, আগে বাধা দিলেও ইদানিং বিএনপি নেতা-কর্মীদের খুব একটা বাধা দেয় না পুলিশ। আদতে আরাম-আয়েশপ্রিয় নেতারা অনুষ্ঠান ছাড়া অফিসমুখী হতে চান না!
 
সার্কুলার রোডের মুদি দোকানী নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নেতারা ঘর থেকে বের হন না। কেউ কেউ নিজস্ব কাজ করেন। সারাদিন অফিস খোলা থাকলেও সেখানে আসেন না।

রেল গেটের চা দোকানে চা খেতে খেতে কথা হয় মো. ইউনুস মোল্লা, সুজন হালদার ও রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তারা বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নেতারা খুব একটা বেশি বের হন না। জেলা বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারিও অনুষ্ঠান ছাড়া অফিসে আসেন না। সংগঠনের অন্য নেতারাও অফিস এড়িয়ে চলেন। তবে ভোটের দিক থেকে বিএনপি পিছিয়ে নেই। নির্বাচনে গেলে তারা অনেক ভোট পাবে।

অফিস স্টাফ মো. আলম বাংলানিউজকে বলেন, ভালো ভোট হলে গাইবান্ধার পাঁচটি আসনেই বিএনপি বিপুল ভোটে জিতবে। গাইবান্ধার জনগণ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পাগল’ হয়ে আছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এজেড/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।