ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

সিলেট-৪ আসনে ৩ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৮ জন

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
সিলেট-৪ আসনে ৩ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৮ জন

সিলেট: সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। খনিজ সম্পদ তেল-গ্যাস আর বালু-পাথর-চুনাপাথরের জনপদ এই তিন উপজেলা। 

খনিজ সম্পদের পাশাপাশি তিন উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও সিলেটের পর্যটনকে করেছে সমৃদ্ধ। দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি এই নির্বাচনী এলাকাতেই।

ফলে এই আসনের গুরুত্ব সিলেটের অন্য আসনগুলোর থেকে একটু বেশিই বলা চলে।  

এখানে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইমরান আহমদ। এই নিয়ে পাঁচ মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। ১৯৮৬, ’৯১, ’৯৬ সালেও এ আসনে বিজয়ী হন তিনি। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এই আসনে বিজয়ী হন।  

২০০১ সালে বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম বিজয়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য ২০০৮ সালে দিলদার হোসেন সেলিমকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করে ইমরান আহমদ।  

১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে প্রবাসী আ’লীগ নেতা ফারুক আহমদকে হারিয়ে আবার নির্বাচিত হন তিনি। এলাকায় নন্দিত-নিন্দিত হলেও দল থেকে বার বার তাকেই পছন্দের প্রার্থী হিসেবে দেওয়া হয়। এবারও তার সঙ্গে দলের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন দুই আওয়ামী লীগ নেতা। এদের একজন প্রবাসী ও অন্যজন শিক্ষক।  

ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনজন ছাড়াও ইমরানকে ঠেকাতে মনোনয়ন চান বিএনপির চার নেতা ও জাতীয়পার্টির (জাপা)একজন। তাদের প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে মাঠে তৎপরত রয়েছেন। জনসমর্থন আদায়ে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। ইমরানকে হটিয়ে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ ও উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যক্ষ ফজলুল হক।

ফারুক আহমদ ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। আর অধ্যক্ষ ফজলুল হক দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় সরে দাঁড়ান। আর বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়নের তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম, দলের কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বেচ্ছা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী ও সুপ্রিম কোর্টের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান সেলিম। এছাড়া জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জনসমর্থন আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।  

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বেচ্ছা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে তৃণমূলে রাজনীতি করে আসছি। দলকে সুসংগঠিত করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে এখনো। এরপরও প্রায়ত সাবেক রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আর্দশ থেকে বিচ্যুত হইনি। আশা করি, এই ত্যাগ-তিতিক্ষার আমলে নিয়ে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর দল থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেলে হারানো সিলেট-৪ আসন পুররুদ্ধার করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দেবেন বলেন তিনি।

গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলাম। ২০০৯ সাল থেকে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আছি। তৃলমূলে রাজনীতির সুবাদে এলাকার নেতাকর্মী ও মানুষের সমর্থনে ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। তবে এবার দলীয় সভানেত্রী তাকে মূল্যায়ন করবেন বলে আশাবাদী। আর মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করবেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে আশ্বাস দিয়ে এলাকায় গিয়ে কাজ করার জন্য বলেছেন। ফলে জনমত গঠনে চেষ্টা রয়েছে অবারিত। কিছুদিন আগেও স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন বলেন তিনি।

সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, তৃণমূলে রাজনীতির সুবাদে বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেও জনগণের ভোটে দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানও ছিলাম। এলাকার জনগণের ভালবাসার দরুন সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে প্রার্থী হবো। তাই দল থেকেও মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, জেলা বিএনপির পদে আসার আগে উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলাম। উপজেলায় যুবদলের রাজনীতির সূচনাও (প্রতিষ্ঠাতা) করেন হাকিম।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, অতীত সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী। আর দলের হাইকমান্ড আস্থার মূল্যায়ন হিসেবে আবার এই আসন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে উপহার দেওয়া হবে। কেননা বিগত দিনে তার উন্নয়ন এলাকার জনপ্রিয়তা অতীতের তুলনায় বেড়েছে মনে করেন কর্মী সমর্থকরা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এ আসনে মোট ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ ভোটারের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৮৪ হাজার ৬২ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৪ হাজার ৪১৭ জন।

আরও পড়ুন:

** সিলেট-৩ আসনে প্রার্থীজটে আ’লীগ-বিএনপি-জাপা

**সিলেট-২ আসনে আ'লীগ-জাপায় ৩ চৌধুরী, বিএনপিতে লুনা

**সিলেট-১ আসনে আ’লীগ-বিএনপি, জাপায় ‘নতুন মুখ’

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।