ভৈরব, চিত্রা ও রূপসা নদীর পাড়ের তিন উপজেলা রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসন। এবার এ আসনে আ’লীগ-বিএনপি দু’দলেই রয়েছে একাধিক প্রার্থী।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- শিল্পপতি ও তারকা ফুটবলার সদ্য উপ-নির্বাচনে বিজয়ী আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি, সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছেলে জেলা পরিষদ সদস্য খালেদীন রশিদী সুকর্ণ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তেরখাদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সাবেক সংসদ মোল্যা জালাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল।
গুঞ্জন রয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে ব্যবসায়ী নেতা ও সাবেক ফুটবল তারকা আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে।
তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী বলছেন, সালাম মোর্শেদী খুলনা-৪ আসনে উপ-নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিলেও জাতীয় নির্বাচনে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ আসনটি আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্তিশালী। এজন্য সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মোস্তফা রশিদী সুজার অবদান অনেক। সে কারণে অনেকে তার একমাত্র ছেলে জেলা পরিষদ সদস্য খালেদীন রশিদী সুকর্ণকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে চান।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান জামাল, সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তেরখাদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, এ আসনের মনোনয়ন চাইবেন বলে তাদের ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন।
সালাম মোর্শেদী বাংলানিউজকে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। ৪ আসনে মহান নেতা সুজাকে হারিয়েছি। ওই আসনে তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি শক্তিশালী নেতা, দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তার রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ আমি শেষ করতে চাই। ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হবে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী ও মনোনয়ন বোর্ড আমাকে এ আসনে মনোনয়ন দিবেন বলে আশা রাখি।
খালেদীন রশিদী সুকর্ণ বাংলানিউজকে বলেন, এ আসনে বাবার উত্তরসূরী হিসেবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মাথা পেতে নেব।
অপরদিকে বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক শিল্পপতি শরীফ শাহ কামাল তাজ এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
শাহ কামাল তাজ ২০০৮ সালে এ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরাজয়ের পর বেশ কয়েক বছর এলাকায় সাংগঠনিক কাজে অংশগ্রহণ করলেও গত কয়েকবছর খুলনায় তার কোন তৎপরতা নেই। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।
যে কারণে আসন্ন নির্বাচনে তাজকে ছাড় দিতে নারাজ আজিজুল বারী হেলালের সমর্থকরা।
খুলনা জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু বাংলানিউজকে বলেন, দলের দুঃসময়ে, কর্মীদের দুঃসময়ে যিনি পাশে থাকেন তিনিই নেতা। দীর্ঘ ১০ বছর আমাদের দল ক্ষমতায় নেই, আগে একজন শিল্পপতি প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হলেও কখনো কর্মীদের খোঁজ নেননি। এলাকার মানুষের কথা দূরে থাক। তাই এ জনপদের কৃতিসন্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করিনা।
বিএনপি নির্বাচনে এলে আপনাকে মনোনয়ন দিবে এ ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী? এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজুল বারী হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেবে এটা শতভাগ আশা করি। সারা বাংলাদেশে যেকোন জায়গায় নির্বাচন করতে পারি, বিএনপি আমাকে সেই ভাবে জানে। ২০০৮ সালে ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচন করে ১ লাখ ১৮ হাজার ভোট পেয়েছি। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম বা যে কোনো স্থানে আমাকে মনোনয়ন দিতে পারে। কিন্তু আমার জন্ম যেহেতু খুলনাতে। আমি এখানে আমি বেড়ে উঠেছি। সেভাবে বিবেচনা করলে হয়তো আমাকে খুলনায় মনোনয়ন দিতে পারে। তবে আমার অভিপ্রায় খুলনাতে নির্বাচন করার।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের কমিটি রয়েছে তারা অতন্দ্র প্রহরীর মত ভোট কেন্দ্রগুলো পাহারা দিতে দিবে। সারা বাংলাদেশের মানুষ যদি ভোটাধিকার পায় তবে ধানের শীষে অনায়াশে জিতে যাবে।
এছাড়া ২০দলের শরীক খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০দলীয় জোটের মিটিংয়ে খেলাফত মজলিস সারা দেশে ৩৫টি আসন দাবি করেছি। তার মধ্যে খুলনা-৪ আসন অন্যতম। বিগত দিনে ছাড় দিয়েছি। এবার কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, খুলনা-৪ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৪১ হাজার ৬৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মোস্তফা রশিদী সুজা। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে মোস্তফা রশিদী সুজা ৫৯ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়ে এ আসনে পুনরায় জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি নেতা এম নুরুল ইসলাম ১ লাখ ২ হাজার ৯৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা জালাল উদ্দিন ১ লাখ ৯ হাজার ২১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা রশিদী সুজা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সুজার মৃত্যুর পর এ আসনের উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সালাম মুর্শেদী নির্বাচিত হন।
খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, খুলনা-৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) আসনের রূপসা উপজেলায় মোট ভোটার এক লাখ ৩৬ হাজার ৮৬৯ জন, দিঘলিয়া উপজেলায় মোট ভোটার ৮৬ হাজার ২৪৪ জন এবং তেরখাদা উপজেলায় মোট ভোটার ৮৭ হাজার ১০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
এমআরএম/এসএইচ