এ আসনের ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় আসনটি খালেদার আসন হিসেবে খ্যাত। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এ আসনে নিশ্চিতভাবেই এমপি পদে প্রার্থী হবেন খালেদা জিয়া- এমনটাই মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
এদিকে খালেদা জিয়া এমপি হবার পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দলের সভানেত্রী হিসেবে থাকার কারণে নির্বাচনী এলাকা অভিভাবকশূন্য হয়ে যায়। শুধু এমপি নির্বাচিত হতেই খালেদা ফেনীর মেয়ে বলে পরিচয় দেন- এমন অভিযোগ ভোটারদের। খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসনে প্রার্থী হলেও আ’লীগ শক্ত প্রার্থী মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হওয়া কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অনেকেই মনে করছেন আসনটিতে বর্তমানে খালেদার দলের অবস্থা নাজুক।
উপজেলা বিএনপির কমিটিগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা স্থানীয় নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন। আবার মামলা-হামলায় কোন নেতাকে কাছে না পেয়ে তৃণমূল ঝুঁকছে আ’লীগের দিকে। এতে বিএনপির সাংগঠনিক দেওলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তৃণমূল সংগঠনে কোন্দল চরম পর্যায়ে রয়েছে। স্থানীয় সংগঠনে চলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সবমিলিয়ে বিশৃঙ্খল বিএনপি খালেদা জিয়াকে প্রার্থী হিসেবে নিয়ে সুশৃঙ্খল আ’লীগের সামনে কতটুকু দাঁড়াতে পারবে, সেটাই বারবার আসছে আলোচনায়।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ভিপি বলেন, আগামী নির্বাচনে নেত্রী এ আসন থেকে প্রার্থী হবেন। পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় এ আসনের প্রতি নেত্রীর বাড়তি দুর্বলতা রয়েছে। এ আসনে খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আসনটিতে ১৯৯০ থেকে ২০১৪, দীর্ঘ চব্বিশ বছরে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জয় পাননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার মহাজোট প্রার্থী হিসেবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ কাউন্সিলে জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাকে স্থানীয়ভাবেও শক্তিশালী করেছে। এমপি হওয়ার পর সংসদীয় আসনে নিয়মিত জনসংযোগ ও যাওয়া-আসার মাধ্যমে জাসদের সাংগঠিক ভিত্তি পুনর্গঠনেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে এই আসনে তাকে ‘হেভি ওয়েট’ প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে কমিটি গঠনের পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে শিরিন আখতার নিয়মিত এলাকায় কর্মীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনেও এ আসনটি জাসদের পাবার সম্ভাবনা বেশ জোরালো। আর সে কারণেই কিছুটা স্বস্তিতে আছেন শিরিন আখতার।
প্রার্থীতা সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পতনে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। মনোনয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।
অপরদিকে এ আসনে ইতোপূর্বে আ’লীগের কোন এমপি নির্বাচিত না হলেও বিগত ১০ বছরে স্থানীয়ভাবে সাংগঠনিক ভিত্তি বেশ মজবুত হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে সদস্য থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের ১ জন ছাড়া সবাই আ’লীগ থেকে নির্বাচিত। বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত এ আসনটি এখন পরিণত হয়েছে আ’লীগের ঘাঁটিতে।
তাই আসনটিতে দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাদিক নেতা। স্থানীয় রাজনীতিতে অন্তরালের কারিগর প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম এ আসনে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন চাইলে অন্য কেউ প্রার্থী হবেন না বলে জানা গেছে। তবে সম্প্রতি জেলা যুবলীগের কাউন্সিলে নাসিম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না।
আসনটিতে একসময়ে মন্ত্রী ছিলেন লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম (অব)। ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি, পরে জাপা থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত এ আসনের এমপি-মন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে জাপা প্রার্থী এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করে খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান জাফর ইমাম। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।
এছাড়া আ’লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায় রয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পান তিনি। পরবর্তীতে আসনটি জাসদকে দেওয়া হলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। সম্প্রতি নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি মিটিংও করেছেন।
এছাড়াও আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তালিকায় আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তার বাড়ি ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে। আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনি ঢাকা নাকি এলাকা থেকে প্রার্থী হবেন তা এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে তিনি এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর এলাকার উন্নয়ন ও সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে তার নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগ অনেক শক্তিশালী ও সংগঠিত।
তার নেতৃত্বে ছাগলনাইয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা ইতিপূর্বে জাসদের এমপি শিরিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। তিনি মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল জানান, দল তাকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে তিনি নৌকা প্রতীককে জয়ী করতে পারবেন।
অন্যদিকে ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ এম এ কাসেম নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। এর আগেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি ছাগলনাইয়ায় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আলোচনা বাড়ছে। খালেদার আসন কি খালেদার থাকছে না কি চলে যাবে আবারও মহাজোট কিংবা আওয়ামী লীগের ঘরে?
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
এসএইচডি/এমজেএফ