এর মধ্যে একজন দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে সক্রিয় থাকলেও অন্য দু’জন দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। এই তিন ‘তারকা’র মধ্যে কে হচ্ছেন সিলেট-১ আসনে নৌকার মাঝি?
এ নিয়ে কৌতূহল শুধু সিলেটের রাজনৈতিক ও সচেতন মহলেই নয়, আলোচনা চলছে স্থানীয় ভোটারদের মাঝেও।
মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রত্যাশা, তাদের প্রস্তুতি ও দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে সখ্যতা ও জনসম্পৃক্ততা নিয়েও বাংলানিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন এই তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী। একে অপরের প্রতি সম্মান রেখেই তারা বলছেন, দলের মনোনয়ন পেলে মর্যাদাপূর্ণ আসনটি দলীয় প্রধানকে উপহার দিতে পারবেন।
এ আসনে দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু এবার আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না-এমন কথা একাধিকবার জানিয়েছেন। তার উত্তরসূরী হিসেবে ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন নির্বাচন করবেন- সংবাদমাধ্যমে এমনটিও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
ড. মোমেনও দীর্ঘদিন থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সম্পৃক্ত থেকে এলাকায় নেতাকর্মীদের পাশে রাখার চেষ্টা করছেন। সদ্য সমাপ্ত সিলেট সিটি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন।
ছহুল হোসেনকে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা একাধিকবার বাসায় গিয়েও অনুরোধ জানিয়েছেন। নেতাকর্মীদের অনুরোধ উপেক্ষা করেননি তিনি। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন।
নেতাকর্মীরা একই অনুরোধ করেছেন ড. ফরাস উদ্দিনকেও। তিনিও নির্বাচন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেছেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ ছাড়া কিছু বলতে পারছেন না।
যোগাযোগ করা হলে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমি অনেকদিন হয় সিলেটে এসেছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। এখানে জনগণ ও নেতাকর্মীরাও আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন, এজন্য কৃতজ্ঞ।
‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘মুহিত ভাই নির্বাচন করবেন না, তাই আপনি মানুষের হৃদয় জয় করেন, জয়ী হয়ে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলে তার সম্মান রক্ষা করতে পারবো বলে আশা করছি। ’’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই অর্থমন্ত্রীর হাতে নেওয়া প্রোগ্রামগুলো (প্রকল্প) দেখাশোনা করছি। অনেক উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। অনেকগুলো বাকি রয়েছে। এ মাসেই তা সমাপ্ত হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে পিছিয়ে থাকা সিলেটকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকার যেহেতু উন্নয়ন চায়, তাই একটু ধাক্কা দিলেই উন্নয়ন হয়।
সিলেট-১ আসনে আলোচনায় থাকা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, সবাই জানে সিলেট-১ আসনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে খোন্দকার আব্দুল মালেক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, হুমায়ন রশিদ চৌধুরী, সাইফুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সজ্জন যোগ্যরাই নির্বাচন করেছেন, যাদের বয়স একটু বেশি, পরিচিতিও ব্যাপক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, আমার আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আদর্শ ধরে জনবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রসর হচ্ছেন। আমি লেখালেখি করি, ছাত্র পড়াই। রাজনীতি করলে হয়েতো আরো কার্যকরভাবে করবো। যেহেতু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, নির্বাচন করবেন না, সেজন্য আমি নির্বাচন করার ইচ্ছাটা প্রকাশ করেছি।
অন্যান্য প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তৃণমূলের একটা প্রতিবেদন তো থাকে, তারপর মনোনয়ন কমিটি রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী যাকে ভালো মনে করেন, তাকেই মনোনয়ন দেবেন।
অপর দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী ছহুল হোসেন ও ড. মোমেন সম্পর্কে ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, তারাও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আমিও আশাবাদী। তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি মনোনয়ন দিলে নিরাশ করবো না।
তিনি বলেন, আমাকে হবিগঞ্জের লোক বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। আমি যখন জন্ম নিয়েছি তখন হবিগঞ্জ তো সিলেটেরই অংশ ছিল। আমার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের প্রায় পুরোটা কেটেছে সিলেটে। এখানেই পড়াশোনা করেছি। তাই সিলেটকে নিজের শহর হিসেবেই মনে করি।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন বলেন, নির্বাচনে তার আগ্রহ রয়েছে। সুস্থ আছি, তাই দেশকে আরো কিছু দিতে চাই। আমি চিন্তা করি দল নিয়ে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও আমার বাসায় এসেছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম আপনারা বুঝেন- আপনাদের থেকে কেউ প্রার্থী হলে তাকে সুযোগ দেন। কেউ প্রার্থী না থাকলে আমি দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।
‘আসলে সিলেটের মানুষও চাচ্ছেন আমি নির্বাচন করি। দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্খী ও নেতাকর্মীরাও আমাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করছেন। সবাইকেই বলেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দায়িত্ব দিলে তা যথাযথভাবে পালন করবো। ’
ড. ফরাস উদ্দিন সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, উনি নিঃসন্দেহে ভালো লোক। কিন্তু সিলেট সদর ও সিটির বাইরের বাসিন্দা হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাকে কীভাবে নেবে তা বুঝতে পারছি না।
এছাড়াও এ আসনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আলোচনায় রয়েছে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নামও। কিন্তু সিটি নির্বাচনের পর ‘আর নির্বাচন করবেন না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
সিলেট সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। আসনটি নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে ‘সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার’।
তাই রাজনৈতিক দলগুলোও আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়ে থাকে। মূলত এই জন্যই একাদশ সংসদ নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে প্রার্থী নিয়ে নেতাকর্মী ও সচেতন মহলের জল্পনা-কল্পনা চলছেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
এনইউ/এএটি/এমএ