নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক প্রার্থী গণসংযোগও করছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হতে অনেকেই নিজ দলের বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আ স ম ফিরোজের দুর্গ বলা হয়, কারণ তিনি বাউফল থেকে সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে একবারই বিএনপি শহিদুল আলম তালুকদার নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি সব বারই ফিরোজ।
শুধু বাউফল উপজেলা নিয়েই পাটুয়াখালী-২ আসন। এতে ১৫টি ইউনিয়ন। এখানে ১০৮টি কেন্দ্রে ভোট হয়। মোট ভোটার দুই লাখ ৭২ হাজার ৯৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৯ আর নারী ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ২০৬।
বাউফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম শহীন, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা। এছাড়া নতুনদের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন জিয়াউল হক জুয়েল।
বাউফলবাসীর দাবি, জুয়েল তরুণ সমাজের অহংকার। তাকে প্রার্থী করা হলে তরুণদের বেশিরভাগ ভোটই নৌকায় পড়বে। সেইসঙ্গে এতে ফিরোজের ‘একচেটিয়া’ আধিপত্যেরও পতন ঘটবে।
তাছাড়া জুয়েলের ওপর ছায়া হিসেবে রয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণকর্তা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই জুয়েল পৌর মেয়র এবং তার ছত্র-ছায়াতেই গড়ে উঠেছেন জুয়েল। পেছনের শক্তি হিসেবে আরও কাজ করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুল মালেক, নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এরা সবাই জুয়েলের পক্ষে সমর্থন জোগাচ্ছেন। কারণ একটাই ফিরোজের দুর্গ ভেঙে নতুন বলয় তৈরি করা। আর একাধিকবার এমপি হওয়ায় ফিরোজের মাঝেও ‘অহমিকা বোধ’ কাজ করে বলে জানান বাউফলের ভোটাররা।
স্থানীয়রা মনে করেন, ফিরোজ একাধিকবার এমপি হওয়ায় নিজের ভেতর অহংকার তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলার চেস্টা করেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ। এলাকায় উন্নয়ন বলতে কিছু স্কুল-কলেজের ভবন, মসজিদ মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ করেছেন। তবে উল্লেখ করার মতো কিছু দেখা যায়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই নাজুক।
তাই এবার ফিরোজের বিকল্প দেখতে চান স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা। সেদিক দিয়ে পৌরসভার মেয়র জুয়েল অল্প সময়ে কাজ ও ভালোবাসায় মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। যদিও সরকারি জরিপে ফিরোজের পক্ষেই সমর্থন বেশি। তাতে হয়তো এবারও ফিরোজই নৌকার প্রার্থী হবেন। সেক্ষেত্রে নৌকা ঠেকাতে জুয়েল গ্রুপ বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ সুযোগে আসনটি দখলে নেওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন জামায়াতের প্রার্থী তথা ২০দলীয় জোট প্রার্থী ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। যদিও এখানে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে বিএনপি’র কাছে জামায়াত যে সব আসনের ভাগ চেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম পটুয়াখালী-২ আসনটি।
নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে যারাই আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন সবাই আমার বাবার হাত ধরে উঠে এসেছেন। বাউফল আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার পেছনে আমার বাবার অবদান রয়েছে। এখান মানুষ আমাকে চায় তাই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
এদিকে, পটুয়াখালী-২ আসনে এবারও বিএনপি’র মনোনয়ন চান সাবেক এমপি মো. শহিদুল আলম তালুকদার, বাউফল উপজেলা বিএনপি সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক তালুকদার, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন।
তবে বিএনপি নেতারা কেউ এলাকামুখী না। শহিদুল আলম তালুকদারের রয়েছে কর্মী পেটানো, পুলিশ পেটানো ও সাংবাদিক পেটানোর কলঙ্ক। আর ফারুক তালুকদার ঢাকা কেন্দ্রীক রাজনীতিতে। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কম। সেক্ষেত্রে জামায়াতই হতে পারে পটুয়াখালীর দাবিদার।
সোমবার (০১ অক্টোবর) পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাজার রোডের মোখলেছ ভবন, বাউফল পৌরসভা, কালাইয়া ইউনিয়ন, দাসপাড়া ইউনিয়ন, আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন, নওমালা ইউনিয়ন ঘুরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ নির্বাচনী এলাকার এমন হালচাল।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমার দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, সেক্ষেত্রে আমিই প্রার্থী। আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার তিনিও চান, কিন্তু তিনিতো এলাকাতেই আসেন না। আর মুনির না কে যেন আছেন, তিনিও দেখি নির্বাচন করতে চান। এরা কেউ টিকবেন না। আর জামায়াতের কোনো ভোট নাই। বাউফলে জামায়াত এক দুই হাজার ভোট পায়। তাদের আসলে কোনো অস্তিত্ব নাই।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তিন মাস থাক আর একদিন আগে হোক আমরা বিজয়ী হব। পিটাপিটির ভোট না হলে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমার সঙ্গে কখনো ভোটে জেতেনি।
অন্যদিকে, জামায়াতের ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। এখানকার সব মানুষ আমাকে চায়। জোটের প্রার্থী হলে আমি বিজয়ী হবো। আর বিজয়ী হলে সবাইকে নিয়ে আধুনিক বাউফল গড়ব। নির্বাচনের পর আমার নেতাকর্মী বা সমর্থক দিয়ে কেউ নির্যাতিত হলে সমস্ত দায়ভার আমার। জনগণ যে শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিয়াউল হক জুয়েল ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
নির্বাচন নিয়ে বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আবারও অ স ম ফিরোজ নৌকার প্রার্থী এবং বিজয়ী হবেন। এখন নির্বাচনের আগে অনেক মৌসুমী প্রার্থী আসবেন তারা আওয়ামী লীগ নামধারী, তাতে কিছুই হবে না।
অন্যদিকে, বিএনপি’র নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে বাউফল উপজেলা বিএনপি’র দফতর সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমরা এক মাস কেনো ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালী-২ বিএনপি জোটের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবে এখানকার মানুষ।
বিগত দুই নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পাটুয়াখালী-২ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে শুধুমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র মো. শহিদুল আলম তালুকদার ৬৯ হাজার ৭৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ স ম ফিরোজ ৫২ হাজার ৮০৪ ভোট পেয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও আসনটি পুনুরুদ্ধার করেন আ স ম ফিরোজ।
সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়ে ৯৮ হাজার ৩০৩ ভোট, আর বিএনপি’র প্রার্থী একেএম ফারুক তালুকদার পান ৫৮ হাজার ২৬৪ ভোট। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে তো বিনাভোটে এমপি হন ফিরোজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৮
এসএম/টিএ