ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

বরিশাল-৫ এ সমানে সমান আ’ লীগ-বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
বরিশাল-৫ এ সমানে সমান আ’ লীগ-বিএনপি বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

বরিশাল-৫ আসন ঘুরে: ১৯৭৯ সাল থেকে সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী-ই টানা বিজয়ী হয়েছেন। সেই হিসেবে বলা যায় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি!

তবে সেখানে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) হন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরণ। অবশ্য সেবার নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।

সরকার গঠনের মাস তিনেকের মাথায় মৃত্যুবরণ করলে ওই বছরের ১৫ জুনের উপ-নির্বাচনে এমপি হন তার স্ত্রী জেবুন্নেসা আফরোজ।

তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, এমপি হওয়ার পর বরিশালের রাজনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি নগর আওয়ামী লীগের সদস্য জেবুন্নেসা। দলেও সেভাবে রাজনৈতিক কোনো সাংগঠনিক দক্ষতাও দেখাতে পারেননি তিনি।

যদিও স্বামীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করার সম্ভাবনা তার রয়েছে। হিরণের কর্মী-সমর্থকরাও দলে কোণঠাসা।

বর্তমানে বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ করছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

শেখ হাসিনা সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে ফের আসনটিতে প্রার্থী হতে চান জেবুন্নেসা। প্রার্থী হতে চাইছেন মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও, যারা এরই মধ্যে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।

জনসংযোগ মাঠে থাকলেও সেক্ষেত্রে মনোনয়নের জন্য একটু বেগ পেতে হতে পারে হিরণপত্নির। তবে এ বিষয়কে কোনো ‘ফ্যাক্টর’ মনে করছেন না জেবুন্নেসা।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমি এলাকায় জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নেও অবদান রেখে চলেছি। কাজ করেছি নদী ভাঙনের শিকার মানুষের কল্যাণে। এছাড়া আমার সময়ে বরিশালে কোনো টেন্ডারবাজি হয়নি।

‘এছাড়া সরকারের নারীর ক্ষমতানের বিষয়টি বিবেচনা করে আমি আবারও মনোনয়ন পাবো বলে শতভাগ আশাবাদী,’ যোগ করেন জেবুন্নেসা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, বরিশাল সদর আসনে বরাবরই বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে বিচার বিশ্লেষণ করে জনসম্পৃক্ত রয়েছেন এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে হবে। এক্ষেত্রে ভুলে যেতে হবে সব কোন্দল-গ্রুপিং। অন্যথায় ফের আসনটি ছিনিয়ে নিতে পারে বিএনপি।

এদিকে চরমোনাই পীর সাহেবের দল ইসলামী আন্দোলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানালেন অনেকেই। বিষয়টি খোলাসা করে স্থানীয় দুই প্রবীণ রাজনীতিক বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

এক্ষেত্রে চরমোনাই পীর সাহেবের সমর্থকরা একটি ফ্যাক্টর। কারণ তাদের প্রায় ২০-২৫ ভোট রয়েছে। তারা যেদিকে কাঁত হবেন, এমপি হবেন সে দলেরই।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। এ নিয়ে এলাকায় এরই মধ্যে প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

যোগাযোগ করলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই, মহানগর ও জেলায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন, এখানে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। তবে নির্ধারণ করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। তবে যেই আসুক আমরা নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করবো।

মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, মহানগরের সাবেক নেতা মশিউর রহমান খান, আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন রিপন, আরেফিন মোল্লা প্রমুখ। নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তারা।

প্রস্তুতিতে এগোচ্ছে বিএনপিও

২০০৮ সাল থেকে দেশজুড়ে ‘হতাশা’য় দিন কাটাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ব্যতিক্রম নয় বরিশালও। যেকোনো ধরনের কর্মসূচি তাদের করতে দেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূলে মামলা-গ্রেফতারের ‘শঙ্কা’ থাকলেও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে ডা. এহতেশামুল হক নাসিম বিশ্বাস বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের মাহাবুব উদ্দিন বীরবিক্রমকে পরাজিত করেন।

পরে ডা. নাসিম বিশ্বাসের মৃত্যুতে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা মজিবর রহমান সারওয়ার। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলেও ২০০৮ সালে প্রায় ৬ হাজারের বেশি ভোটে এ আসনে এমপি হন সরওয়ার।

তখন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছিলেন কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। তাই নিবার্চনে অংশ নিলে গুরুত্বপূর্ণ আসনটির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগরের সভাপতি মজিবর রহমান সারওযারের।

এ বিষয়ে কথা বারবার সারওয়ারের মোবাইলে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনও খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে আছি। সারওয়ারের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।

তবে বরিশালের এ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ইচ্ছায় কাজ করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ জাহান শিরিন। কারণ তিনিও ওই আসন থেকে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চাওয়ার জন্য প্রচারণা করেছেন। মনোনয়ন পেতে সারওয়ারকে মুখোমুখি হতে পারে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁনের।

এ বিষয়ে বিলকিছ জাহান শিরিন বলেন, গত ৩২ বছর ধরে রাজনীতিতে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। দলের আনুগত্য থেকে নিবেদিত হয়ে দুঃসময়ে পাশে ছিলাম এবং আছি। তাই আমি আমার আসন বরিশাল-৫ এ নিজেকে যোগ্য হিসেবে মনোনয়ন চাইছি। আশা করি দল মূল্যায়ন করবে।

এদিকে আসনটিতে একক প্রার্থী দেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। স্থানীয়রা বলছেন, ইসলামী দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এছাড়া মনোনয়ন চাইতে পারেন জাতীয় পার্টির মহসিন উল ইসলাম হাবুল। তিনি প্রচারণা চালালেও দলটিতে কোন্দল চরমে। মহানগর জাতীয় পার্টি ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে চলছে এ গ্রুপিং। আর জেলা বাসদের সভাপতি ইমরান হাবিব রুম্মনও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৫৮ ভোট। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৪ এবং ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪ রয়েছেন নারী ভোটার।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।