ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

জাপার দুর্গে হানা দেবে আ’লীগ, চাপে বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
জাপার দুর্গে হানা দেবে আ’লীগ, চাপে বিএনপি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির লোগো

রংপুর: আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে উত্তরের নগর রংপুরে বিভিন্ন এলাকা সরগরম হয়ে ওঠেছে। ভোটের হাওয়ায় দুলছে বিভাগের ৩৩টি আসনের নির্বাচনী মাঠ। এরই মধ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রচারণা চালিয়ে নিজেদের জানান দিচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

সাদা কালো-রঙ্গীন দীর্ঘ ব্যানার, পোস্টার ও সামাজিক সচেতনামূলক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগাম বার্তা দিয়েও নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করছেন অনেকে।  

রংপুরসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা মাঠে সরগরম থাকলেও এক্ষেত্রে  ধর-পাকর, হয়রানি ও গায়েবি মামলার অভিযোগ তুলে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি।

 

জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি খোশমেজাজে নিজ দলের কৃতিত্ব ও সুনাম ছড়িয়ে নিজেদের ভোট ব্যাংক বাড়াতে তৎপর রয়েছে। প্রচারণায় অবহেলিত রংপুরে সরকারের সুদৃষ্টি রয়েছে উল্লেখ করে সরকারের বিভিন্ন  উন্নয়ন তুলে ধরছেন তারা।  

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দাবি, বিগত কোনো সরকারের সময়ে এই বিভাগে এত উন্নয়ন হয়নি যতটা আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। তাই জোট হোক আর না হোক জাতীয় পার্টিকে এসব আসনে ছাড় দিতে নারাজ তারা।  

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, রংপুর বিভাগের আসনগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে তাদের। এরশাদের প্রতি এসব আসনের জনগণের একচেটিয়া সমর্থন রয়েছে। বরাবরের মতো এবারও জাতীয় পার্টি এগিয়ে থাকবে।  তাই জোটে থাকলে ৩৩ আসনই চাইবে জাতীয় পার্টি।  

এ প্রসঙ্গে মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এস এম ইয়াসির বাংলানিউজকে বলেন, রংপুরে জাতীয় পার্টি ঘাঁটি। সর্বশেষ নির্বাচনে পার্টির চেয়ারম্যান মহোদয়ের কথা অনুযায়ী অনেকেই ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে কিছু আসন হাতছাড়া হয়েছিলো। এবার আমরা কোনো ছাড় দেবো না।  

এদিকে সারাদেশের মতো রংপুর হামলা-মামলা ও হয়রানির অভিযোগ তুলেও মাঠে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি।  উত্তরাঞ্চলের  এসব আসনে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে পালন করতে হচ্ছে কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ে কোনো জানান দিতে পারছেন না দলটির নেতা-কর্মীরা।  

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটের হিসাব-নিকাশে রংপুর বিভাগে বরাবরই এগিয়ে জাতীয় পার্টি। যদিও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় পার্টির অধিকাংশ আসনেই ভাগ বসায় আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে বিভাগে বিএনপির ভোট ছিলো মাত্র ১৩ শতাংশ।  

বিএনপি নেতাদের দাবি, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ তাদেরই বেছে নেবে।  

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে ভোটের লড়াইয়ে জাতীয় পার্টি এগিয়ে থাকলে হোচট খায় ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ১৯৯১ সালে বিভাগের ৩৩টি আসনে- জাতীয় পার্টি ১৭টি, আওয়ামী লীগ ৯টি, বিএনপি একটি। আর অন্যান্য দল পেয়েছিলো ছয়টি আসন।  

১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি ২১টি, আওয়ামী লীগ ৮টি, বিএনপি ৩টি আসন পায়। আর অন্যান্য দল পায় একটি আসন।

২০০১ সালে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের আসন কমে আর বাড়ে বিএনপির। সে সময় বিএনপি ৯টি, আওয়ামী লীগ ৬টি, জাতীয় পার্টি ১৪টি আসন পায়  এবং অন্যান্য দল ৪টি আসন পেয়েছিলো।

২০০৮ সালে বিএনপির ঘরে একটি আসন না জুটলেও বাড়ে আওয়ামী লীগের। ওই বছর আওয়ামী লীগ ১৯টি জাতীয় পার্টি ১৩টি এবং অন্যান্য দল একটি আসন পায়।  

আর সর্বশেষ ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। সে সময় আওয়ামী লীগের ঝুড়িতে বিভাগের ২২টি আসন চলে যায়। আর জাতীয় পার্টি পায় সাতটি। আর অন্যান্য দল পায় ৪টি আসন।  

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সাফি বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে রংপুরের কেউ তেমন উন্নয়ন করেনি যতটা আমাদের সরকার করেছে। বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, তিস্তা সড়ক সেতুসহ নানা উন্নয়ন হয়েছে। রংপুরের মানুষ এসব উন্নয়ন দেখে নৌকাকেই ভোট দেবে।

মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহফুজ উন নবী ডন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে দলীয় প্রধানকে (খালেদা জিয়া) আটকে রাখা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দের মুক্তিসহ কেন্দ্রঘোষিত ছয় দফা মেনে নেওয়া না হলে আমরা নির্বাচনে যাবো না। আর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে রংপুরের আসনগুলোতে বিএনপি এগিয়ে থাকবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।