ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ময়মনসিংহ-৭

কোন্দলে ‘ছন্দহারা’ আ’লীগ, নির্ভার বিএনপি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৮
কোন্দলে ‘ছন্দহারা’ আ’লীগ, নির্ভার বিএনপি  ময়মনসিংহ-৭ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনটি নৌকার ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু শিল্পায়নের সম্ভাবনা জাগানিয়া এই উপজেলাটিতে কোন্দলে কাবু ক্ষমতাসীন দলটি। মনোনয়ন নিয়েই দলটিতে গৃহবিবাদ তুঙ্গে। 

দলীয় তিন সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, আব্দুল মতিন সরকার, রেজা আলী ও টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত মেয়র এ.বি.এম.আনিসুজ্জামানের মধ্যেই মনোনয়ন নামের ‘সোনার হরিণ’ নিয়ে তীব্র বিরোধ রয়েছে। নিজেদের মধ্যকার এমন দ্বন্দ্বে রীতিমতো ‘ছন্দহারা’ দলটি।

 

আবার মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম.এ.হান্নান দীর্ঘদিন যাবত কারাবন্দি থাকায় তার আর নির্বাচনের মাঠে ফিরে আসার সুযোগ নেই। এই শুন্যতায় আসনটিতে নিজের ছোট ভাই মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে প্রার্থী করতে চান বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এমপি।  

রওশন এরশাদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘জোট অটুট থাকলে আসনটি আমাদের। সেক্ষেত্রে এবারও আওয়ামী লীগের কাছে আমরা আসনটি চাইবো। এবং মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকেই প্রার্থী করা হবে। ’ 

তবে জোটগতভাবে আসনটি এবারও কি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হবে না কি আওয়ামী লীগ থেকেই প্রার্থী করা হবে এমন সমীকরণের বিপরীতে মাঠে একেবারেই নির্ভার বিএনপি।  

দলটির সক্রিয় কর্মকাণ্ড না থাকলেও বরাবরের মতো এবারও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটনই প্রার্থী হবেন এমনটি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ায় বেশ নির্ভার নেতাকর্মীরা।  

জানা গেছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনটিতে সংসদ সদস্য ছিলেন আলেম হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। তার কর্মী-সমর্থকদের দাবি, ওই সময়ে উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ড শেষ করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। এখনও দলীয় সব কর্মসূচিতেই সক্রিয় রয়েছেন মাদানী।  

ধানের শীষের জোয়ারের সময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে রেকর্ড গড়েন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির তৎকালীন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রেজা আলীর কাছে মনোনয়ন হারান।  

আবার দশম জাতীয় সংসদে প্রথমে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির এম.এ.হান্নানকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন রেজা আলী। ভদ্র ও সজ্জন হিসেবে তার সুনাম রয়েছে।  

নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে আব্দুল মতিন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু। উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। এবারও আমি মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী। ’ 

দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আলীর দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে তিনি বলেন, ‘আইয়ুব সরকারের আমলে রেজা আলীর বাবা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ত্রিশালের বাসিন্দা নন। তার বাড়ি কুমিল্লায়। আমার দাবি ত্রিশালের বাসিন্দা থেকেই যেন দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। ’ 

এ বিষয়টিতে মতিন সরকারকে সমর্থন করে সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন মাদানী বাংলানিউজকে বলেন, জনমত পক্ষে রয়েছে এবং জন্মসূত্রে ত্রিশালের বাসিন্দা এমন কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। বহিরাগত কাউকে দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। ’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা আইয়ুব সরকারের আরও আগে মন্ত্রী ছিলেন। তবে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন না। আমিই প্রথম ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষের প্রার্থীকে পরাজিত করেছি। অতীতের কোনো নির্বাচনে যা অন্য কেউ করতে পারেনি। এতেই আমার গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ’ 

দলীয় তিন সাবেক সংসদ সদস্যের বিপরীতে ভোটের মাঠে ব্যাপক নাড়া দিয়েছেন ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এ.বি.এম.আনিসুজ্জামান। কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে টানা দু’বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। তার বাবা প্রয়াত আবুল হোসেন ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।  

বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বহুদিন কারাবরণের ইতিহাস রয়েছে আনিসের বাবার। ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতির পথ মাড়িয়ে এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন আনিস।  

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দুই মেয়াদে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়ে এবং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রিলেশন স্থাপন করে ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি।  

নিজস্ব কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় রাজনীতিতে দুর্বার গতিতেই ছুটছেন এই ‘পৌর পিতা’। নিজের মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী। দলের নেতাকর্মীরাই আমার প্রাণশক্তি। সবার সহযোগিতা চাই। ’ 

আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আইনজীবী  সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আলম মিলন পাঠান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য শাহিন পারভেজ লিটন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সরকার জুয়েল।  

দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় উঠান বৈঠক, মতবিনিময় ও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন মিলন পাঠান। তাকে ঘিরে দলের তরুণ নেতাকর্মীদের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার।  

মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের উন্নয়নের ‘ম্যাজিক’ ভোটারদের সামনে তুলে ধরেছি। মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ’ 

উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন শাহিন পারভেজ লিটন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পারিবারিকভাবেই আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে রাজনীতিতে রয়েছি। আমরা আর বহিরাগত এমপি দেখতে চাই না। আমি আশাবাদী দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। ’ 

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর বিপরীতে আসনটিতে বিএনপি’র একমাত্র প্রার্থী বলতে গেলে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে সংসদ সদস্য না হয়েও এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন।  

হাইকমান্ডের সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ওয়াকিবহাল। তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কিছুটা দূরত্ব রয়েছে। দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন রোগী দেখে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন তিনি।  

তার বিপরীতে দলটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটনের অনুসারীরা মনে করেন, তার হাত ধরেই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যানও হয়েছেন জয়নাল।  

এছাড়া ডা. লিটনের ‘লন্ডন কানেকশন’সহ নানা হিসাব-নিকাশে তিনি রীতিমতো ‘আন্ডারডগ’ প্রার্থী।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।