ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

টাঙ্গাইল-৩: বিএনপিকে ঠেকাতে রানার বিকল্প নেই 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৮
টাঙ্গাইল-৩: বিএনপিকে ঠেকাতে রানার বিকল্প নেই  টঙ্গাইল-৩

টাঙ্গাইল: আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী মাঠে ততই প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। 

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনটি টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে বহুল আলোচিত। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

 

এর আগে ২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ আসন থেকে তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  

২০১৪ সালের আগস্টে পুলিশি তদন্তে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার পর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। আর এই সুযোগে আসনটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য মাঠে রানা এমপির বিরোধী অর্ধডজন প্রার্থী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

এরা হচ্ছেন- ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম লেবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ তুহিন, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. শহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক জিবিজি কলেজের সাবেক ভিপি এস আকবর খান, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নুরুল আলম তালুকদার, সাবেক এমপি ডা. মতিউর রহমানের ছেলে তানভীর রহমান, তেজগাঁও কলেজের বাংলা বিভাগের প্রফেসর অধীর চন্দ্র সরকার।

এই আসনটিতে ১৯৭০, ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপির চাচা আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান খান শাহজাহান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির শওকত ভুইয়া। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাইদুর রহমান খান মোহন এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে শামসুর রহমান খান শাহজাহান আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। পর পর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ। ১৯৯১ ও ২০০১ বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
 
অপরদিকে এ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা চারবারের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ, জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মাঈনুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির ঘাটাইল উপজেলা শাখার সভাপতি, জেলা জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন ও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজাত আলী খান রয়েছেন।  

এ আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন। তবে আসনটি ধরে রাখতে এবং বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদকে ঠেকাতে বর্তমান এমপি আমানুর রহমানর খান রানার বিকল্প নেই বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকায় তার মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা অনিশ্চিত বলেও জানিয়েছেন তারা। এ আসনে আমানুর রহমান খান রানা দলীয় মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলেও অনেক মনে করছেন।

১৯৯১ থেকে চারবার এমপি থাকায় লুৎফর রহমান খান আজাদ এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম করেছেন অনেক। দলে তার একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তিনি খুব শক্তিশালী বলে এলাকার ভোটাররা মনে করেন।  

আওয়ামী লীগের সরকার দলীয় এমপি আমানুর রহমান রানা টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। এমপি রানা দলীয় মনোনয়নের জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রানার সমর্থক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হেষ্টিং বাংলানিউজকে জানান, রানা বিরোধীরা বিভক্ত থাকলেও সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ আছে। দলের হাইকমান্ড তার জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে তাকেই এ আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন।  

এ আসনে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম লেবু। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।  

এ আসনে আরেক প্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. মো. শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও দলের প্রার্থীদের পক্ষে তার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা।  

নির্বাচনে প্রার্থীতা বিষয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১/১১ সময়কালে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের মুক্ত করার জন্য ঢাকার রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি ও আইনি সহায়তা টিমের সঙ্গে কাজ করেছি। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে দ্বিধাবিভক্ত দলকে একমাত্র আমিই ঐক্যবদ্ধ করতে পারব এবং নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
 
এক সময়ের তুখোর ছাত্রনেতা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট এস আকবর খান নির্বাচন এলেই এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে বা পরে এলাকায় তার কোনো যোগাযোগ না থাকায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে।  

জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমি নিয়মিত গণসংযোগ করে চলেছি। দলের হাই কমান্ড আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে ধানের শীষ বিজয়ী হবে।  

এদিকে ঘাটাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, জেলা জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন ও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজাত আলী খানও মাঠে রয়েছেন।  

একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের এ আসনে দুই লাখ ৭২ হাজার ৫২৯ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩২ হাজার ৫৭৫ জন এবং নারী এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।