পাশাপাশি তারুণ্য নির্ভর, যুববান্ধব ইশতেহার তৈরি করা হলে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৪ কোটি ২০ লাখ ভোটারদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। তাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলে ভারী হবে ভোট বাক্সও।
আবার নিম্ন আয়ের মানুষজন চান, দরিদ্র্যতাকে হিমাগারে পাঠানোর কৌশল উঠে আসুক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ শহরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরে, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নাগরিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে তাদের ভাবনার এসব বিষয়।
ইশতেহারে দরিদ্র্যতা দূরীকরণের ফর্মুলা দেখতে চান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে জুলহাস উদ্দিন। সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার ভোটার তিনি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘দরিদ্র্যতাকে আর দেখতে চাই না। দেশ ডিজিটাল হলেও এখনও অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। গরিব হয়ে জন্মানোর অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে আমাদের সন্তানদের। পড়াশোনা করে তারা উচ্চশিক্ষিত হবে। এজন্য তাদের পড়াশোনার সামগ্রীর দাম হ্রাস করতে হবে। তাদের উদ্যমী করে গড়ে স্বপ্ন পূরণের পথে নিয়ে যেতে হবে। ’
ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি শঙ্কর সাহার কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে কোন কোন বিষয় প্রাধান্য থাকা উচিত? এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়মনসিংহ শিক্ষা নগরী। এখানে আরও মানসম্মত সরকারি কলেজ দরকার। মাত্র ১২ ফিট প্রশস্ত ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কটিকে মহাসড়কে উন্নীত করার অঙ্গীকার থাকতে হবে।
‘নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন বিশেষ উদ্যোগ এবং ঈশ্বরগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রসার ঘটাতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ’
নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের নিশ্চয়তা চান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছে। এখন আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে বন্ধ করতে হবে দুর্নীতি।
শুধু ঈশ্বরগঞ্জেই নয় ময়মনসিংহ সদরেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চান ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ময়মনসিংহ সদরে বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চলের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি জমি রয়েছে। এখানে আলাদা অর্থনৈতিক জোন হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা চাই এখানে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণরা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ফলে তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করার টার্গেট রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। এই বিষয়ে আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইন্টারনেটের দৌলতে গোটা বিশ্ব হাতের মুঠোয়। কিন্তু ইন্টারনেট খরচ অনেক।
‘এটাকে সহনীয় অবস্থায় নামিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদের গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মাদক নির্মুলের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতে চুনোপুটিদের নয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে, এমনটি চান মারুফা আক্তার মৌসুমী নামের আরেক শিক্ষার্থী। ’
ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে পরিচিত নাম অধ্যাপক আমির আহমেদ চৌধুরী রতন। এই রাজনীতিক আবার জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ময়মনসিংহকে আরও এগিয়ে নিতে এখানে ভালো মিলনায়তনের সুবিধা দরকার।
‘এখানে অনেক নাট্য সংগঠন থাকলেও তাদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সরকারি মঞ্জুরি পেলে এসব সংগঠনগুলো সারা বছরই অনুষ্ঠান করে যেতে পারবে। এর পাশাপাশি অনুশীলনের জন্য প্রতিটি সংগঠনকে সরকারি জায়গায় কার্যালয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এমএএএম/এমএ