ব্রাহ্মণবাড়িয়া: মৌসুমের নতুন ধানে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম ধানের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ। প্রতিদিন অন্তত ৬০/৭০ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে এ মোকামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিওসি ঘাটের এই মোকামে বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ অন্তত ৭টি জেলা থেকে হাজার হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে চিটাসহ নানা কারণে মোকামে ধানের সংকট থাকলেও শেষ দিকে এসে বেড়েছে সরবরাহ। সেই সঙ্গে শুকনো ধানের আমদানি বাড়ায় দামের পাশাপাশি বেড়েছে কেনাবেচাও। বর্তমানে প্রতিদিন এই মোকামে ৬০/৭০ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে, যার মূল্য প্রায় ৬/৭ কোটি টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মোকামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে থরে থরে রাখা আছে ধানের বস্তা। এছাড়াও নদীর তীরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নৌকা নোঙর করে ধানের বস্তা বাঁধতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। মিল মালিকরা এসব নৌকায় গিয়ে ধানের তাপমাত্রা ও গুণগত মান যাচাই বাছাই শেষে দরদাম করা নিয়ে ব্যস্ত।
বেপারীরাও ক্রেতাদের নজর কাড়তে নিজেদের আনা ধানের গুনগত মান তুলে ধরে দাম হাঁকাচ্ছেন। দামে মিললে ঘাটেই কেনা-বেচা শেষ করে ট্রাক দিয়ে এসব ধান বিভিন্ন মিলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ধান নিয়ে আসা বেপারীরা জানান, বর্তমানে মোকামে বিআর-২৮ জাতের ধান ১১৫০ টাকা, বি আর-২৯ জাতের ধান ১০৫০ টাকা এবং মোটা জাতের ধান ৯২০/৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ আগেও এসব জাতের ধান ভেজা থাকায় অন্তত ১ থেকে দেড়শ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল।
তারা জানান, বর্তমানে দাম কিছুটা বাড়ায় তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে কোনো সিন্ডিকেট যাতে কৌশলে ধানের দাম কমিয়ে বেপারীদের আর্থিক ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
মিল মালিকরা জানান, ভিজা ধান থেকে চালের উৎপাদন কম হয় বলেই এর দামও কম থাকে। তবে শুকনো ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন বেপারীরা।
তারা আরও জানান, ধানের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পুরো মোকাম জুড়ে প্রতিদিনই বিশাল কর্মযজ্ঞের দেখা মিলে। ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিকসহ সবাইকে সারা দিন ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। বর্তমানে মোকামে আসা ধানের আদ্রতা খুবই ভাল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাল ধানের আমিদানির ওপর নির্ভর করে দাম আরও বাড়বে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল আহমেদ জানান, প্রতিদিন মোকামে হাজার হাজার মণ ধানের আমদানি হচ্ছে। প্রতিদিন ৬০/৭০ হাজার মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ায় ধানের আদ্রতাও ভাল। তাই বেপারীরা ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন। ভিজা ধানের দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণ হলো এটা থেকে চাল উৎপাদন করতে গেলে পরিমাণ অন্তত ২ কেজি কমে যায়। কিন্তু শুকনা ধানে ২ কোজি বেশি থাকে। তবে বেপারীরা ভিজা ধানের যে মূল্য পেয়েছে তাও খারাপ নয়। ভিজা ২৮ জাতের ধান ৯২০ টাকা, ২৯ জাতের ধান ৯শ টাকা এবং মোটা ধান ৮১০ টাকা করে দাম পেয়েছে। বর্তমানে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে, এতে দাম আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু মিল মালিকরা রয়েছেন, যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে ধান অতিরিক্ত মজুদ করে রাখে। যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে প্রশাসন যাতে মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর খাদ্য কর্মকর্তা কাউসার সজীব জানান, বাজার মনিটরিংয়ে জেলায় ১৬টি টিম কাজ করছে। যার মধ্যে ৪টি টিম আশুগঞ্জ মোকামের কার্যক্রম মনিটরিং করছে। এখানে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম থাকার কোনো অবকাশ নেই। কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে মোকামে ধান নিয়ে আসা বেপারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে মনিটরিং টিমগুলো বিভিন্ন মিল প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছে।
এদিকে গত রোববার (৭ মে) থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সরকারিভাবে ১২০০ টাকা মণ দরে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে মোকামে ধানের দাম আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৩
এমএমজেড