ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শিল্পকর্মের মহোৎসব ঢাকা আর্ট সামিট

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
শিল্পকর্মের মহোৎসব ঢাকা আর্ট সামিট শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ঢাকা আর্ট সামিট | ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে যেসব কর্মযজ্ঞ বৈশ্বিক শিল্পের দরবারে হাজির হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘ঢাকা আর্ট সামিট’। ইতোমধ্যে এই প্রদর্শনী দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিল্পোৎসব হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে।

করোনা মহামারির জন্য তিন বছর পর গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্রাঙ্গণ এবং গ্যালারিতে ‘সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ঢাকা আর্ট সামিটের ষষ্ঠ আসরের উদ্বোধন হয়।

সামিটে উপস্থাপিত শিল্পকর্ম এবং চিন্তাধারা একজন ব্যক্তিকে স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি সৃজনশীল চিন্তা করতে ও সহযোগিতামূলক সমাধানের সঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে, এমনটা মনে করছেন প্রদর্শনী সংশ্লিষ্টরা।

এবারের আর্ট সামিটের মূল প্রতিপাদ্য ‘বন্যা’। যে নাম কখনও নারীর, কখনও বা দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানোর। একদিকে দুর্যোগ, অন্যদিকে প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই আর সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্প এই প্রদর্শনীতে ফুটে উঠেছে নানান শিল্পকর্মের মাধ্যমে।



দেশ-বিদেশের ১৬০-এর বেশি প্রখ্যাত শিল্পী, কিউরেটর, শিল্প সমালোচক, স্থপতি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের আয়োজন।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্রাঙ্গণ এবং গ্যালারিতে ঘুরে পেইন্টিং, ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট, ভিডিও আর্টসহ শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের শিল্পকর্মের নিদর্শন দেখা গেছে। ঢাকা আর্ট সামিটে শিল্প কত রকমের হয়, তার এক স্পষ্ট ধারণা মিলবে এ প্রদর্শনীতে।

এ দিন বিকেলে দেখা যায়, চিত্রশালার বিভিন্ন তলায় নানান বয়সী তরুণ- তরুণী, বিদেশি দর্শক ও শিল্পীরা প্রদর্শনীটি উপভোগ করছেন।  

চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর বিখ্যাত চরিত্র ‘টোকাই’কে গ্যালারি একটি দেয়ালে প্রদর্শন করা হয়। টোকাই চরিত্রটিকে বরাবরই সমসাময়িক প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এবার শিল্পী ‘টোকাই’ চরিত্রকে দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আহ্বান জানাচ্ছেন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতার আহ্বান জানানো হচ্ছে।



বিকেল চারটায় প্রদর্শনীতে ‘সংকটপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলিকে’ নিয়ে ব্যঙ্গ-কৌতুক ও অঙ্গভঙ্গি করে মতামত প্রকাশ করেন ‘ওগুত’ নামে এক শিল্পী। শিল্প জগতের বাইরের লোকদের সাথে মেলামেশা করেন তিনি। সমাজের সামষ্টিক উপলব্ধিতে পরিবর্তন ঘটনোর প্রচেষ্টা করেন এই শিল্পী। শিল্পকলার সাউথ প্লাজায় এবারের ঢাকা আর্ট সামিটে এই শিল্পী বাঁশের তৈরি রণপা দিয়ে এক প্রতিবাদী পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করেন।

এই রণপায়ে লাগানো রয়েছে প্রতিবাদী কিছু ব্যানার, যেখানে বাংলাদেশে দুষ্প্রাপ্য কিছু পণ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এই পণ্যগুলি হলো—চেরি ব্লসম, অ্যাভাকাডো, ব্লু-বেরি, কিউই ইত্যাদি।

শিল্পী ওগুতের মতে, এই ভারসাম্যমূলক কাজটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, আমরা যে এই দুনিয়ায় পরিশ্রম করে নিজেদের নিঃশেষ করে চলেছি, সেই আমরা এইখান থেকে কী আহরণ করতে পারি? বাংলাদেশিদের সাথে ভারতীয়রাও প্রায় একইরকম জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান জলস্তরকে মোকাবিলার জন্য এই রণপা হতে পারে তাদের জীবন যাপনের সহায়, অস্থিতিশীল মাটিতে হাঁটার নতুন উপায়।

প্রদর্শনীতে তৃতীয় তলায় এক গ্যালারিতে বেতের তৈরি কচ্ছপ এবং তার ওপর ঝুলানো আছে বিভিন্ন জামদানির কারুশিল্প। এখানে শিল্পী শাওন আকন্দ কচ্ছপকে ধীরতার প্রতীক করে প্রদর্শন করেছেন তার এই অনন্য শিল্পকর্ম।



এই শিল্পীর মতে কিছু সাংস্কৃতিক অনুশীলনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ধীরগতি প্রয়োজন, যা যান্ত্রিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গতির বাইরে। তিনি ঐতিহ্যবাহী জামদানি তাঁতিদের সাথে কাজ করেছন, তার চিত্রকর্মে কচ্ছপের মোটিফকে একটি বোনা স্থাপনায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে। তিনি তার সৃজনশীল কাজে বাংলাদেশি কারিগরদের ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করেছেন।

ঢাকা আর্ট সামিটে ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসে প্রদর্শিত শিল্পের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। তিনি ঘুরে ঘুরে ঢাকা আর্ট সামিটে বিভিন্ন শিল্প কর্মগুলোকে দেখছিলেন।

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের শিল্পকর্ম দেখে খুবই ভালো লাগছে। এ ধরনের শিল্পকর্ম আরও দরকার আছে। শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি একটি জাতির সবচেয়ে বড় পরিচয়। একটি জাতির বিকাশে সংস্কৃতি এবং শিল্পকর্ম অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আমরা জানি সংস্কৃতিতে শিল্পকর্ম বা আর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যুগ যুগ ধরে শিল্পকর্ম বা আর্ট মানুষের মনকে বা সৃজনশীলতাকে বিকশিত করতে সাহায্য করে আসছে। আমি মনে করি, এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের জাতি গঠনে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা আর্ট সামিটের যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। এখন পর্যন্ত পাঁচবার সফলভাবে এই প্রদর্শনী হয়েছে। ৯ দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য আয়োজন চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই প্রদর্শনী।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।