ঢাকা: চলে গেলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগের আবাসস্থল হোস্টেলে তিনি মারা যান।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় কবি হেলাল হাফিজের তুমুল জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। পরে তিনি আরও কিছু বই লিখেছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।
২০১৯ সালের নভেম্বরে হেলাল হাফিজ বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। যেখানে কবিতা ও কবি জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেন। বলেন শৈশব, যৌবন থেকে শুরু করে কবি হয়ে ওঠার গল্প ও প্রেমসহ বিভিন্ন বিষয়ে।
কবির এই প্রয়াণে তার পুরনো সেই সাক্ষাৎকার সংক্ষেপিত আকারে তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বাংলানিউজ: এতো বছর পর (২০১৯) কেন নতুন বই?
হেলাল হাফিজ: বড় কারণ হচ্ছে দুটো। প্রথমত আমি কম প্রতিভাবান। আর দ্বিতীয় কারণ- আলস্য আমার অসম্ভব প্রিয়। সত্যি বলতে কি, আমার কাছে নারীর চেয়েও প্রিয় হচ্ছে আলস্য। এ জন্য জীবনে অনেক দণ্ড দিতে হয়েছে।
বাংলানিউজ: শুধু কি এটাই কারণ?
হেলাল হাফিজ: আমি আমার কবি জীবনের শুরু থেকেই কম লিখেছি। এ জন্যই এতোকাল আমার একটিই বই ছিল- যে জলে আগুন জ্বলে। এই সবেমাত্র দুই সন্তানের জনক হলাম। কবিতা বলতে আমি যা মনে করি, সেটা হলো- কবিতা পাঠককে আলোড়িত, আন্দোলিত করতে পারে। পুরো কবিতা যদি নাও হয়, একটি বা দুটি পঙক্তি যদি পাঠকের মনে ও মননে গেঁথে না যায়, তাহলে কবিতা লেখা অর্থহীন। কবিতা কালজয়ী হবে কিনা সেটা একটু সময়ের ব্যাপার। সময় না গেলে তা বোঝা যাবে না।
বাংলানিউজ: অনেকেই তো প্রতিনিয়ত লিখে চলেছেন?
হেলাল হাফিজ: গদ্য অনেক সময় জোর করে লিখে ফেলা যায়। আমার মনে হয়, কবিতার বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। আমরা অনবরত লিখছি। সেগুলো গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু সেগুলো বানের স্রোতের মতো ভেসেও যাচ্ছে, টিকছে না। সে জন্যই কবি জীবনের শুরু থেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, আমি অল্প লিখবো, কিন্তু পাঠক যেন আমার কবিতা মনে রাখে। যে জলে আগুন জ্বলে কবিতার বইয়ে তা কতোটুকু করতে পেরেছি সেটা পাঠকই ভালো বলতে পারবে। আমি বলতে চাই না।
বাংলানিউজ: ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ বইটি নিয়ে একটু বলবেন?
হেলাল হাফিজ: ১৯৮৬ সালের পর ২০১৯ সালে এ বইটি বেরুলো। এই ৩৩ বছরে আমি কয়েকশ কবিতা লিখেছি। সেই কবিতাগুলো অধিকাংশই অনুকাব্য।
বাংলানিউজ: ছোট আকারের কবিতা লেখার কারণ কী?
হেলাল হাফিজ: বর্তমানে প্রযুক্তি, বিশেষ করে ফেসবুকের অনেক প্রভাব। সময় কাটানোর জন্য আমি সারাদিন ফেসবুকের সামনে বসে থাকি। ফেসবুকে লম্বাচওড়া কথা বলা যায় না। সংক্ষেপে বলতে হয়। এর প্রভাব পড়েছে মনোজগতে। শুধু আমার নয়, যে কোনো মানুষের। ফলে কথা ছোট হয়ে গেছে। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থেও অনুকাব্য ছিল, জনপ্রিয়ও হয়েছে।
যাই হোক ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ বইয়ের অধিকাংশই অনুকাব্য। এই প্রযুক্তির প্রভাব আমি খুব মন্দ মনে করি না। সময়ের বড্ড অভাব। ব্যস্ততা। উপন্যাসের পাঠক যতটা আছেন, কবিতার পাঠক তারচেয়েও কম। মানুষ কবিতাবিমুখ হয়ে পড়েছে। মানুষকে কবিতার কাছে টানার জন্য, ফিরে তাকানোর জন্য ইচ্ছা করেই এই পথটা অবলম্বন করেছি। আমার ধারণা, এই সব অনুকাব্য মানুষের মনে এবং মননে দোলা দেবে। কিছু কিছু পঙক্তি হয়তোবা মনোজগতে, মস্তিষ্কে, করোটিতে স্থায়ী আসন করে নিতে পারবে। এ ব্যাপারে দৃঢ় মনোবল ও বিশ্বাস আমার আছে। বাকিটা দেখা যাক।
বাংলানিউজ: বইটিতে তো ৩৪টি কবিতা আছে?
হেলাল হাফিজ: আমার লেখা ৩৪টি কবিতা আছে। তবে বইয়ে মোট কবিতা ৩৫টি। একটি আমার নিজের লেখা নয়। আমার আব্বা খোরশেদ আলী তালুকদার একজন উঁচু মানের কবি ও শিক্ষক ছিলেন। ‘পিতার পত্র’ নামে তার লেখা একটি কবিতা আমি বইটিতে সংযুক্ত করেছি।
বাংলানিউজ: এর কারণ কী?
হেলাল হাফিজ: ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ বইয়ে আমার লেখা ৩৪টি কবিতার যে কেন্দ্রীয় সুর, সেই সুরের অনুপ্রেরণা আমার আব্বার ওই দুইটি পঙক্তি।
বাংলানিউজ: কীভাবে?
হেলাল হাফিজ: যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র, তখন একটি লিটলম্যাগে আমার বেদনাবিধুর একটি কবিতা পড়ে আব্বা চিঠি লিখেছিলেন। তখন কিন্তু চিঠিই ছিল একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। ধরো আমি ৫০-৫৫ বছর আগের কথা বলছি। সে যাই হোক। চিঠিতে আব্বা সাংসারিক কথাবার্তা শেষে পুনশ্চ হিসেবে দুই পঙক্তির একটি কবিতা লিখেছিলেন।
বাংলানিউজ: কী ছিল সেই পঙক্তি?
হেলাল হাফিজ: ‘রেটিনার লোনাজলে তোমার সাঁতার/ পিতৃদত্ত সে মহান উত্তরাধিকার। ’
বাংলানিউজ: তারপর?
হেলাল হাফিজ: এই পঙক্তির মাধ্যমে তিনি আসলে আমাকে এক ধরনের স্নেহসিক্ত আদেশ ও ভবিষ্যতের পথরেখা নির্দেশ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেদনাকে শিল্পে রূপান্তর করার কথা। এই বেদনা তোমার পিতা, জনক হিসেবে উত্তরাধিকার হিসেবে দান করে গেলাম। এ বেদনাকে লালন করে পরিপুষ্ট করে, আশ্রয়প্রশয় দিয়ে শিল্পে রূপান্তর করো।
বাংলানিউজ: বেদনাকে শিল্পে রূপান্তর...
হেলাল হাফিজ: আমি নিজেও মনে করি, যে কোনো শিল্পের জন্য বেদনা খুবই জরুরি। বেদনা ছাড়া কোন শিল্প হয় না।
বাংলানিউজ: ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কীভাবে তৈরি হলো?
হেলাল হাফিজ: আমি এ বইটির পান্ডুলিপি তৈরির জন্য অন্তত পাঁচ বছর সময় নিয়েছি। গত ৩৪ বছরে কিন্তু আমার আরও দুইটি বই বেরিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো মৌলিক বা নতুন নয়। ২০১২ সালে ‘কবিতা একাত্তর’ ও ২০১৯ সালে ‘এক জীবনের জন্ম যখন’। এগুলো মূলত দ্বিভাষিক বই। আমার কবিতাগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করাটাই ছিলো মূল লক্ষ্য। সে অর্থে এ বইটি আমার দ্বিতীয় মৌলিক বই। এতো কাল সবাই বলতো, আমার একটিমাত্র বই, এখন সবাই বলবে দুইটি বই। এর পাণ্ডুলিপি করতে গিয়ে ২০০ কবিতা নিয়ে বসেছি। সেখান থেকে প্রেম, বিরহ ও প্রযুক্তির প্রভাব সবকিছু মিলিয়ে চেষ্টা করেছি এমন একটা সুর তৈরি করতে, যা আমার এই পূর্ববর্তী বক্তব্যকে হৃষ্টপুষ্ট করবে। সমর্থন করবে।
বাংলানিউজ: শৈশবেই আপনি মাতৃহারা হয়েছিলেন। এর প্রভাব কী আপনার কবিতায় পড়েছে?
হেলাল হাফিজ: মাতৃহীনতার বেদনাই আমাকে কবি করে তুলেছে। মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স মাত্র তিন বছর। বোধবুদ্ধি, বিবেচনা তৈরি হয়নি। মাতৃবিয়োগটা সবচেয়ে বড় বেদনা। যে কোনো আত্মীয় মারা যাওয়াটাই বেদনার। তবে মায়ের মতো পরম আত্মীয় আর হয় না। এতো বড় বেদনা!
আমার দুঃখ সেখান থেকেই শুরু। দুঃখ, বেদনা কিন্তু শুধু কান্নাকাটির বিষয় না। এটা উপভোগেরও বিষয়, এবং এটা থেকেই শিল্প তৈরি হয়। ভালো ও মৌলিক শিল্প বেদনা থেকেই শুরু হয়। সে বয়সে বুঝতে পারিনি। যত বয়স বেড়েছে, এ বেদনা আমাকে গ্রাস করেছে, আচ্ছন্ন করেছে। মাতৃহীনতার বেদনা আমাকে কবি হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
বাংলানিউজ: মাতৃহীন শৈশব আপনার কীভাবে কেটেছে?
হেলাল হাফিজ: কৈশোর ও প্রথম যৌবনে আমার ঝোঁক ছিল খেলাধূলার দিকে। আমি ফুটবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিসও খেলতাম। যখন দশম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকে তখন থেকেই আমি কবিতা লেখা শুরু করি। কলেজে ওঠার পর মনে হলো আমি কবিতাই লিখবো।
বাংলানিউজ: আপনার ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি লিখেছিলেন ছাত্রজীবনে। এটি আপনাকে তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছিল। সে কবিতা লেখার পেছনের গল্পটা যদি একটু বলতেন?
হেলাল হাফিজ: ঊনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থান পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীকে গ্রাস করে রেখেছিল। মিছিলে গেলাম কি গেলাম না, কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য কিনা এগুলোর জন্য কেউ অপেক্ষায় ছিল না। সে সময় ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি লেখি। এর দুই পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। এটা সময় আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিল। এতোটাই প্রভাবশালী, প্রতাপশালী ছিল সে সময়। এ পঙক্তি দুইটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যায়। পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার নাম ছড়িয়ে পড়ে। আহমদ ছফা ও কবি হুমায়ুন কবির এ পঙক্তি দুইটি দিয়ে দুই রাতের মধ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে চিকা মেরে দেন।
বাংলানিউজ: পশ্চিম পাকিস্তান সরকার আপনাকে তখন কিছু বলেনি?
হেলাল হাফিজ: না। আমার ব্যক্তিজীবনে কোনো প্রভাব পড়েনি।
বাংলানিউজ: আপনি শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন?
হেলাল হাফিজ: আমি ছাত্রজীবনে শিক্ষকতা শুরু করি। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র, তখন আব্বার সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এর জন্য এক বছর বিরতি নিয়ে আমি মুন্সীগঞ্জ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করি। পরের বছর আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হই।
বাংলানিউজ: ১৯৭২ সালে তো আপনি সাংবাদিকতায় যোগ দিলেন?
হেলাল হাফিজ: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অবজারভার গ্রুপ থেকে দৈনিক পূর্বদেশ প্রকাশ শুরু হয়। আমি সেখানে সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে যোগ দিই। ১৯৭৫ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন। যতো সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েন, তাদের প্রত্যেককে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া হয়। আমি এক বছর বসে বসে বেতন পাওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি হয়। কিন্তু সরকারি চাকরি করবো না বলে যোগ দিইনি। এই তো আমার বেকার জীবন শুরু।
বাংলানিউজ: আপনি তো এ সময় জুয়া খেলতেন?
হেলাল হাফিজ: এ কথা সত্য আমি জুয়া খেলেছি। তবে খেলা হিসেবে নয়, জীবিকা নির্বাহের জন্য জুয়া খেলেছি। অনেকদিন জুয়া ছিল আমার উপার্জনের পথ। তারপর ‘দৈনিক দেশ’ নামে একটি কাগজের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে যোগ দেই। ১০-১২ বছর চাকরির পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ দৈনিক যুগান্তরে ৮-৯ বছর চাকরি করেছি। এরপর আর স্থায়ী চাকরিতে কাজ করি না। বয়স আর শরীরেও কুলায় না এখন। আর একা মানুষ, জীবন চলে যায়।
বাংলানিউজ: আপনার বান্ধবী ভাগ্য তো হিংসা করার মতো। তাহলে একা হয়েই থাকলেন কেন?
হেলাল হাফিজ: এটা ভালো হতো যদি এই প্রশ্ন সেই সব বান্ধবীদের জিজ্ঞাসা করা যেতো। আমার বান্ধবী ভাগ্য বেশ ভালোই ছিলো। হয়নি। ব্যাটে-বলে হয়নি। এটা হতেই পারে। এটা একদিকে ভালোই হয়েছে। সেই অপূর্ণতা মিটে গেলে এসব কবিতা নাও হতে পারতো। সেই অপূর্ণতা থেকে ভালো কবিতা। অমরত্বর জন্য এটাই ভালো।
বাংলানিউজ: এই একাকী জীবন ভালো লাগে?
হেলাল হাফিজ: একাকীত্ব একেক বয়সে একেক রকমের অনুভূতি আমার কাছে। পড়ন্ত বেলায় বসে থাকলে মনে হয়, পাশে একজন বন্ধু থাকলে ভালোই হতো। এই সময় একা একা চলাটা বেশ কষ্টকর। তারপরও পোড়া কপাল নিয়ে যারা জন্ম নিয়েছে, উপায় নেই। জীবন কাটাতে হবে। যতো সুন্দরভাবে পারা সম্ভব। শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতে একাকীত্ব উৎসর্গ করতে পারলে মন্দ কী।
বাংলানিউজ: আপনি তো একা একটা হোটেলে থাকেন?
হেলাল হাফিজ: গত ৭-৮ বছর একা একটা হোটেলে থাকি। প্রথম আমি যেদিন সেখানে যাই, সে যে কী আলোড়ন-তোলপাড় আমার ভেতরে। আমি ছাড়া প্রত্যেকে রুমে অপরিচিত মানুষ। পরের সকালে সবাই চলে যাচ্ছে। আমি একা আছি। আবার পরের দিন নতুন বোর্ডার আসছে। প্রথম রাতটি অবর্ণনীয়। একই সঙ্গে বেদনার ও আনন্দের। সে রাতে পঙক্তি লিখেছিলাম। ‘তুমি আমার নিঃসঙ্গতার সতীন হয়েছো’। এটা লেখার পর বুকের ভারটা, দমবন্ধটা অনেকটা লাঘব হয়েছে। এক ধরনের ভেন্টিলেশন ছিল এই পঙক্তি।
বাংলানিউজ: জীবনের এই পর্যায়ে এসে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিকে কীভাবে দেখেন?
হেলাল হাফিজ: আমার যোগ্যতা ও প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি অনেক বেশি। এতো বেশি যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও শেষ করা যাবে না। একা একা কেঁদেছি, উপভোগও করেছি তেমনি। আমার কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই। বরং কৃতজ্ঞতা কীভাবে প্রকাশ করবো তা ভেবে পাইনি। এজন্য চুপ থাকা ভালো। নীরবে হয়ে থাকি। এই আর কী!
হেলাল হাফিজের ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি কবিতা:
সুন্দরের গান
হলো না, হলো না।
শৈশব হলো না, কৈশোর হলো না
না দিয়ে যৌবন শুরু, কার যেন
বিনা দোষে শুরুটা হলো না।
হলো না, হলো না।
দিবস হলো না, রজনীও না
সংসার হলো না, সন্ন্যাস হলো না, কার যেন
এসবও হলো না, ওসব আরও না।
হলো না, হলো না।
সুন্দর হলো না, অসুন্দরও না
জীবন হলো না, জীবনেরও না, কার যেন
কিছুই হলো না, কিচ্ছু হলো না।
হলো না। না হোক
আমি কী এমন লোক!
আমার হলো না তাতে কী হয়েছে?
তোমাদের হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪