ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

জনবলের অভাবে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত হচ্ছে না শিল্পকলার কার্যক্রম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
জনবলের অভাবে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত হচ্ছে না শিল্পকলার কার্যক্রম

ঢাকা: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকী বলেছেন, জেলা পর্যায় পেরিয়ে উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম। এজন্য আগামী বছর থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় প্রয়োজনে ভাড়া অফিসের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এছাড়া বিভিন্ন জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী একাডেমি, আঞ্চলিক একাডেমিসহ দেশের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের নামে সংস্কৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও জনবলের অভাব এবং প্রয়োজনীয় অর্থের জোগাড় না থাকায় সাংস্কৃতিক কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত করা সম্ভব হচ্ছে না।

রোববার (১১ জুন) দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির অংশীজনের সভায় তিনি এ কথা বলেন। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী, শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন জেলার জেলা কালচারাল অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় লিয়াকত আলী লাকী বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পকলা একাডেমি সংগীত, নৃত্য, নাটক, যাত্রাপালা, চলচ্চিত্রসহ শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমকে সংরক্ষণ ও প্রসারে কাজ করছে। আগামীতে আবৃত্তি, ফটোগ্রাফি, শিশু, লোকসংস্কৃতি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে একাডেমির সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শিল্পকলা একডেমির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে স্বীকার করে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, অংশীজনদের সহযোগিতায় সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবে শিল্পকলার কার্যক্রম।

তিনি বলেন, সারা দেশে ৪৪টি জেলায় শিল্পকলা ভবন নির্মাণের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ১৫টি সম্পন্ন হয়েছে। সিরাজগঞ্জে আট কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মিলনায়তন আধুনিকায়ন করছে শিল্পকলা একাডেমি। ৩৬-৩৭টি উপজেলায় শিল্পকলা ভবন নির্মাণ কাজে জায়গা বরাদ্দ নিয়ে বাধা হচ্ছে উপজেলা পরিষদ। ২৫-৩০টি উপজেলায় শিল্পকলা নির্মাণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আগামী বছর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় প্রয়োজনে অফিস ভাড়া করে কার্যক্রম শুরু করা হবে। আর সারা দেশে ২১ জন মনীষীদের জন্মস্থানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। উত্তরা, মিরপুরসহ ঢাকার পাঁচটি অঞ্চলে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে শিল্পকলা একাডেমি।

লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এখন ৬৪ জেলা থেকে ৪৯৩ উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে। উপজেলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণসহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। ৭৬টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নির্মাণ, ১০০টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নাট্যোৎসব আয়োজন, ৬৪ জেলায় স্বপ্ন ও দ্রোহের নাটক নির্মাণ ও উৎসব আয়োজন, ৬৪ জেলায় সাহিত্য নির্ভর নাট্য নির্মাণ ও উৎসব আয়োজন, মূল্যবোধের নাট্যোৎসব নির্মাণ, ঐতিহ্যবাহী নাট্যোৎসব আয়োজন; ঢাকার মিরপুর, ফরিদপুরে, রংপুর বধ্যভূমিতে এবং মেহেরপুরের মুজিবনগরে পরিবেশ থিয়েটার নির্মাণ; পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে, উয়ারী-বটেশ্বরে এবং মহাস্থানগড়ে প্রত্ননাটক নির্মাণ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজনের মাধ্যমে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে শিল্প-সংস্কৃতির আলো প্রজ্বলন করার মহান দায়িত্ব পালন করছে সংস্কৃতি চর্চার এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব, জাতীয় যন্ত্র সংগীত উৎসব, শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব, শিশু চলচ্চিত্র উৎসবসহ জেলায় জেলায় শতাধিক চলচ্চিত্র উৎসব ও জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় জেলায় গড়ে তোলা হয়েছে ফোকলোর সেল, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেল, চলচ্চিত্র সংসদ এবং ঢাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কাইভ ও ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল কো-অর্ডিনেশন সেল। যাত্রাশিল্পের নীতিমালা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুতুলনাট্যে বিশেষ অবদানের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে ‘পুতুলনাট্য পদক’। এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল, সার্ক ফোক ডাল ফেস্টিভ্যাল, এশিয়ান আর্ট ডিরেক্টরস ফোরাম, ঢাকা আর্ট সামিট, সার্ক হ্যান্ডিক্রাফট ভিলেজ, এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল, এশিয়ান থিয়েটার সামিটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজনেও একাডেমি ভূমিকা পালন করে চলছে। এছাড়া শিল্পকলায় সারা বছর শিশু, প্রবীণ, অবহেলিত শিশু, বিশেষভাবে সক্ষম এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের মহতী কর্মের মাধ্যমে শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে একাডেমি ভূমিকা পালন করে চলেছে।

ডিজি লিয়াকত আলী লাকী বলেন, সংস্কৃতির নানা শাখায় অবিরাম বিচরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকাণ্ড এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে। একাডেমি আয়োজিত দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বি-বার্ষিক জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী এবং দ্বি-বার্ষিক নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী শিল্পীদের মেধার বিকাশ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সংগীত, নৃত্য, নাটকের ক্ষেত্রে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান, উৎসব আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতি পিপাসু মানুষকে উজ্জীবিত এবং অনুপ্রাণিত করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।