ঢাকা: প্রাণ-প্রকৃতির কথন, গান আর নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে কাশফুলের ঋতু শরৎকে বরণ করে নিল সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) উৎসবটির আয়োজন করা হয়।
এদিন রাজধানীবাসী কথা-কবিতা ও চিত্রকলায় মেতে ওঠে উৎসবের আমেজে। শিল্পীরা নাচে-গানে ফুটিয়ে তোলেন আবহমান বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য। লোকজ সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখার শপথও ধ্বনিত হয় সবার কণ্ঠে।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে ১৮তম শরৎ উৎসব হয় শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় বর্ণিল হয়ে উঠে উৎসব প্রাঙ্গণ।
শরৎ উৎসবের প্রথম পর্বের শেষভাগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তার সঙ্গে মঞ্চে আসেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি নৃত্যজন অধ্যাপক নিগার চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। সেই সংস্কৃতি, সেই ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলছি। অথচ আমাদের লোকজ সংগীতের টানে কত দেশের মানুষ এ দেশের গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়ায়। আজ সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শরৎ উৎসবের আয়োজন করে সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রয়াস চালিয়েছে। তাদের এই প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমাদের এ দেশের কাঠামো রাষ্ট্রের হলেও মূল ভিত্তি হলো সংস্কৃতি। এ দেশে নানা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও নানা বর্ণের মানুষ মিলেমিশে থাকে। তবে দেশে কোনো কোনো মহল সংস্কৃতির সেই ধারার গতিরোধ করতে চায়।
এর আগে রাগ কোমল ঋষভ আশাবরী পরিবেশনায় উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনা করেন শিল্পী অভিজিৎ কুণ্ডু। এরপর প্রথিতযশা নজরুল সংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ পরিবেশন করেন ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক’; শারমিন সাথী ময়না শোনান অতুল প্রসাদ সেনের ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন দেশে’; রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অনিমা রায় শোনান ‘অমল ধবল পালে’ ও ‘নয়ন ভুলানো এলে’। নবীন শিল্পী শ্রাবণী গুহ রায় শোনান বানি কুমারের ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা শোনান নজরুল সংগীত ‘ভোরের ঝিলের জলে শালুক পদ্ম দোলে’।
দলীয় সংগীত পর্বে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে নজরুল সংগীত ‘নম নম নম বাংলাদেশ মম’ এবং রবীন্দ্রসংগীত ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’; পঞ্চভাস্বরের শিল্পীরা শোনান ‘শরতে আজ কোন অতিথি এলো প্রাণের দ্বারে’। পরে বাফা, সুরবিহারের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে শরতের গান পরিবেশন করেন।
আবৃত্তি পর্বে নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি শোনান নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘কাশবনের কাব্য’। শিশু-কিশোর সংগঠন শিল্পবৃত্তের শিশু শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় শরৎ বন্দনা। দলীয় নৃত্য পর্বে ‘শরৎ আমার স্নিগ্ধতায় অপরূপ তুমি অনন্যা’ গানের সঙ্গে স্পন্দনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন সম্মেলক নৃত্য।
রবীন্দ্রসংগীত ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ হে’ গানের সঙ্গে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন ভাবনার শিল্পীরা। এ ছাড়া বাফা, নৃত্যাক্ষ, কথক নৃত্য সম্প্রদায়, বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের শিল্পীরা সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন।
শরৎ উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বটি শেষ হলে বকুলতলায় শুরু হয় শিশু কিশোরদের উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শিশু-কিশোররা রং তুলিতে এদিন ফুটিয়ে তুলে শরতের নানা রূপ। শুক্রবার বিকেলে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। শিশু-কিশোরদের দলীয় আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি নগরের তরুণ শিল্পীরা পরিবেশন করেন পঞ্চকবির গান। দ্বিতীয় পর্বে ছিল দলীয় নৃত্য, সম্মেলক সংগীত ও একক আবৃত্তি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এইচএমএস/আরএইচ