ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নান্দনিক চিত্রকর্মে নজর কাড়ছে মহাখালী ফ্লাইওভার

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
নান্দনিক চিত্রকর্মে নজর কাড়ছে মহাখালী ফ্লাইওভার ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি/…তোমার জন্যে গলির কোণে/ভাবি আমার মুখ দেখাব/মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। ’ নগরজীবনের নান্দনিক স্থাপত্য বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়ে যায় বলেই বুঝি কবি বড় আক্ষেপ করে এই পঙক্তি রচনা করেছিলেন।

বিশেষ করে ঢাকা শহরের অবস্থা তো এমনই। সব সৌন্দর্য মলিন করে দেয় বিজ্ঞাপন।

রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের প্রায় প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের পথ-ঘাটে এখন অগণিত বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও নানা রঙের মনোলোভা ও চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এসব বিজ্ঞাপনের বাড়াবাড়িতে ত্যক্ত-বিরক্ত।

বিজ্ঞাপনের আড়াল থেকে নগরের মূল সৌন্দর্যকে বের করে আনতে শুরু হয়েছে এক নতুন আয়োজন—স্ট্রিট আর্ট। আর এই আয়োজনে ঢাকার মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচের অংশে সম্প্রতি দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম আঁকা শুরু হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের সহযোগিতায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মহাখালী ফ্লাইওভারে স্ট্রিট আর্ট শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার মাস মার্চের মধ্যে পুরো মহাখালী ফ্লাইওভারের স্ট্রিট আর্ট সম্পন্ন করা হবে। শহরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতেই এই উদ্যোগ।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাজ শেষ হলে ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় টেবিল টেনিস বোর্ড এবং দাবা খেলার বোর্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

মহাখালী ঘুরে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের নিচের পিলারগুলোতে ব্যানার-পোস্টার তুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাদা রঙ করা হয়েছে। ধবধবে সাদা রঙের ক্যানভাসে ফুটে উঠছে চোখজুড়ানো গ্রাফিতি। তাতে শোভা পাচ্ছে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি এবং শিক্ষণীয় বিভিন্ন বিষয়। এছাড়া চিত্রকর্মে ফুল, পাখি, মাছ, সূর্য যেমন আছে; তেমনি আছে ঘোড়ার গাড়ি, পালকি, রিকশা আর ঢাক-ঢোলও। লাল, সাদা, নীল, হলুদসহ বাহারি সব রঙে চোখ ধাঁধানো রূপ নিয়েছে মহাখালী ফ্লাইওভার।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলেছন, ঢাকা শহর একটি দ্রুত বর্ধনশীল শহর। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশের অবনতি ঘটছে। পোস্টার লাগানো, ময়লা আবর্জনা ফেলে দেওয়া, গাড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি কারণে শহর দিন দিন নোংরা ও দূষিত হয়ে উঠছে। এই সমস্যা সমাধানে স্ট্রিট আর্ট একটি কার্যকর উপায় হতে পারে বলেই এই ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর স্ট্রিট আর্টের মাধ্যমে নান্দনিক চিত্রকর্ম তৈরি করে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং পরিবেশকে আরও মনোরম করে তোলা হবে।

এ বিষয়ে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালী চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকেও একজন ব্যক্তি এমন শিল্পকর্ম দেখতে পারবেন ফ্লাইওভারের মতো আধুনিক স্থাপনার গায়ে। এই শিল্পকর্মের রঙ, এর সৌন্দর্য তাদের মানসিক শান্তি দেবে। শহরের বুকেও মনে করিয়ে দেবে তার শেকড়ের কথা। রঙের নান্দনিকতায় এভাবেই ইতিবাচকতার চর্চা হবে।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি ফ্লাইওভারের বিভিন্ন পিলারে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে, যাতে কেউ এসব চিত্রকর্ম নষ্ট করতে না পারে। এই দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্টের ওপর পোস্টার লাগালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেয়র বলেন, আমরা শহরকে দৃষ্টিনন্দন করার অনেক কাজই করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে কাজগুলো কিছুদিন পরেই পোস্টারের আড়ালে ঢেকে যায়। মহাখালীতে যে দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্ট করা হয়েছে, তার ওপর আমি কোনো পোস্টার দেখতে চাই না। যে পোস্টার লাগাবে তাকে সবাই মিলে প্রত্যাখ্যান করবো। এতো সুন্দর চিত্রকর্মে পোস্টার লাগালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। পোস্টার লাগিয়ে এই শহরকে নোংরা করার অধিকার কারও নেই। যারা পরিবেশ নষ্ট করে, তাদের ধিক্কার জানাতে হবে।

একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলতে চাই, তারা গাড়ি-বাড়ি কিংবা অর্থসম্পদের জন্য দেশ স্বাধীন করেননি। তারা কেবল দেশের কথা ভেবেই স্বাধীনতা এনেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা। তারা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। আমরা পরাধীন থাকবো না। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা মানেই রাস্তায় ময়লা ফেলে দেওয়া না। স্বাধীনতা মানেই আইন ভঙ্গ করা না। স্বাধীনতা মানেই লাল লাইট জ্বলার পরেও গাড়ি চালানো না। দেশটাকে ও শহরটাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশকে অর্জিত হয়েছে সে দেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।