ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দিদিকে | শুভ্রনীল সাগর

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
দিদিকে | শুভ্রনীল সাগর

*
এইসব রাস্তাগুলো কামিনী গন্ধের। পিঁপড়ে বলছিল, পুকুরপাড় থেকে লেবুতলা কতদূর? সে খুব জোরেসোরে হাঁটে, তাড়াহুড়ো।

আকাশে চাঁদ উঠলে ভাবে, এই বুঝি কাছে এলো বাতাবি ফুল। সে দৌঁড়োয়, কীর্তিনাশা। মেঘ-তারা ভেসে থাকে। পুকুরপাড়, লেবুতলা...

তুমি কল্পনাই করতে পারবে না যে, ওটা ছিল জামগাছ—তবে দেখলে বিশ্বাস হবে...

অরণ্যের সঙ্গে আমাদের চিরকালীন ব্যবধান; অথচ জানলা গলে ছাটের মতন বৃষ্টির সুখ আসে। এখানে পাতা ঝরলে জাতীয় সংগীত বাজে না...


*
বর্তমান সংকলনে আমরা বৃক্ষপাঠ শিখেছি মাত্র; পাতারঙ, ফুলের আকার। অবশ্য গাছকে কাঁদতে দ্যাখেনি কেউ—তবে কি হৃদয়ের ধারণা মিথ্যে?

পিঁপড়ে জানায়, সে জামতলা থেকে ফিরছে পুকুরপাড়। এখানে পথ নিয়ে আমাদের আলোচনা আবশ্যক। কাক ও বকের গল্পটা তো তুমি জানোই—বকের জ্বর এলো, গলাব্যথা। সবাই দেখতে যাবে। পথে শেয়ালের সঙ্গে দেখা। শেয়াল বলল, একটু দাঁড়াও,আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে...

বরাবরই পথ বক্ররেখা। পুরোটা প্রকাশ হয়েও বি:দ্র: লিখে রাখে...


*
ছেঁড়াচাঁদ
মাছের সঙ্গে সাঁতরায়
ঝুঁটিবাঁধা স্মৃতিটুকু তার
              গিলেছিল চিলে...

ছেঁড়াচাঁদ
এসব কিছুই বলেনি...


*
ব্যথা সম্পর্কিত ধারণার অভাবে আমাদের আসলে কোনও পূর্ব প্রস্তুতি থাকে না। হঠাৎ পেয়ে যাই, পাওয়ার পরেও ভাবতে হয় কী পেলাম! নগরীর ভীষণ রাত্তিরে আমার ব্যথা আসে, নির্জন। ডু ইউ নো হার পারসোনালি? আচ্ছা, আমি কি তাকে স্ত্রীলিঙ্গ ধরে নিচ্ছি! অবশ্য তোমার ক্ষেত্রেও যে একই ঘটবে তা কিন্তু না। দুটো নীল পাত্রে একত্রে জল নিলে, কোন পাত্রের জল বেশি নীল দেখায়?

আনন্দ প্রতীকধর্মী, পারম্যুটেড—বাজারের ব্যাগ ঢেলে কাঁচালঙ্কা বাছার মত...


*
পর সমাচার, আমাদের এখানে বর্ষাকাল—কচুপাতা বর্ষা ঠেকাতে জানে। মা বলে, এ আষাঢ় মাসের ঘোর—এই জলে কই মাছ উঠে আসে ডাঙায়। আমার স্থলেই বাস। কোন বর্ষণ আমাকে নিয়ে যাবে কইয়ের দেশ? টিনের চাল বেয়ে কানাচে গড়ানো জলের মত কান্না আসে, ভেসে যাই—বাঁশখোলা বন্দরমুখো ভৈরব ঘোলা মনে...

অনেক বৃষ্টি হলে তোমার কথা মনে হয়
জানি তো, জানলা খুলে দেবে...


*
বিদ্যুৎ চলে গেলে আমি চট করে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকাই। ফুলস্পিড ব্লেডত্রয়ী কি দারুণ নিস্তেজ হয়ে আসে। ক্রমশ থেমে যায় গুঞ্জন। তখন ব্লেডগুলো আলাদা করে দেখা যায়। বৃত্তাকার বদল হতে হতে ভাবি, এই বুঝি থেমে যাবে—তবু ঘুরেই যায়। তেরো, চোদ্দ...

ঠিক এইসময় আমি একটি ব্লেডের পক্ষ নিই। মনে মনে বলি, ব্লেডটি দেয়ালঘড়ির সোজাসুজি গিয়েই থামবে, থামুক। ধীরে ধীরে দেয়ালঘড়ির দিকে যায়। আধাশোয়া আমি উঠে বসি। ব্লেড দেয়ালঘড়ি ছাড়িয়ে দেয়ালের দিকে থামে। বসে থাকা আমি বসে থাকি...


*
তোমার হাত কাটলে সময়ের আগেই সন্ধ্যা হয়, ক্ষারীয়।
এখানেও রক্ত ভেসে এলো
হাত ধোওয়া জলে...

সকল কুড়োবো বলে ভোরবেলা উঠি...


*
এটা সত্যি যে, প্রত্যেক ফুলেরই একটা বাড়তি পাপড়ি থাকে—অদৃশ্য। ফুল ঝরে গেলেও তোমার জন্য রেখে যায় স্বপরাগ আরম্ভ...


*
এর আগেও আকাশে লেগেছে শারদ
এর আগে আকাশ দেখা হয়নি...


*
জানা কাকে বলে, যা কিছু বিচ্যুত কারকে অপাদান—এই? জানতাম চালের ভেতর লুকিয়ে রাখলে পেকে ওঠে কাঁচাগাব। ‘আমি তোমাকে জানি’—এহেন সরলবাক্য নিঃসঙ্গতার মতই দ্বিধাগ্রস্ত। কিছুক্ষণ পর পর কমা ফেলে যায়...

বালির বুকেই চূড়ান্ত ঘর বাঁধে ঢেউ
এতটা কাল মানুষ মানুষকে সয়ে গেল
                                  এই জেনে...


*
শ’-এর আগে আটানব্বই হয় জানি। সাতানব্বই সাপমুখো—এঁকেবেঁকে লেজ তার বারোতে। ঊনপঞ্চাশ সুবিধাবাদী কেননা এরপর পঞ্চাশে মই। এরপর আট, একচল্লিশও। বাইশ বামন হয়েও ভালোবাসে চুয়াল্লিশ চাঁদকে। এভাবে বাষট্টি, তেষট্টি শেষপর্যন্ত একেকটি ক্যারেকটার বনে যায়...

কেউ ‘এক’-এ থাকতে চায় না, অথচ একলা হতে চায়...


*
যদি হৃদয় ভুল করে
ফের জিজ্ঞাসায় ফিরে এসো...


*
তারপর হৃদয় ফুলঘরে গেলাম। ওরা বলল, আমরা এসব বেচি না; কাঠের বোতাম আপনি পাশের দোকানেই পেতে পারেন।

বোতাম নিষ্পলক
বোতাম জড়
বোতাম বিষাদের মত ওৎ পেতে থাকে

কেবল তোমার হয়েই কিছু বলে না...


*
জল
জমাট নীরবতা
সন্ধ্যা হলে কলেজ মাঠে বসে।

                   তোমাকে ছুঁতে চায়নি...


বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।