ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বঙ্গদেশেও রেনেসাঁ এসেছিল!

ফিচার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫
বঙ্গদেশেও রেনেসাঁ এসেছিল! ছবি: আনন্দ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বঙ্গদেশেও রেনেসাঁ এসেছিল। ঠিক ইতালীয় রেনেসাঁর মতোই শিল্প, সাহিত্য ও স্থাপত্যে।

তবে সীমিত আকারে। অনেকে সেটাকে অস্বীকার করেন, অনেকে বলেন অযৌক্তিক।

কেউ স্বীকার কিংবা অস্বীকার করুক, কারও কাছে যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক মনে হোক- বাংলার রেনেসাঁ নিয়ে পাঠকের কৌতূহল মেটাবে গবেষক গোলাম মুরশিদের অনবদ্য রচনা ‘রেনেসন্স বাংলার রেনেসন্স’।

বুধবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরে নতুন বইটি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদ। সাংবাদিকদের জন্য আয়োজন করা হলেও অনুষ্ঠানে সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রেমীদেরও ভিড় ছিল।

প্রজেক্টরের মাধ্যমে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লেখক বাংলার সেই জাগরণের সঙ্গে ইতালীয় রেনেসাঁর তুলনার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

অনবদ্য এ রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গোলাম মুরশিদ বলেন, বছরখানেক আগে গেল শীতে রেনেসাঁর ওপর আমি একটি  সেমিনার করেছিলাম। তখন সংগঠকরা পীড়াপীড়ি করতে শুরু করলো- এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে। কারণ বই হিসেবে হাতে পেলে বাংলার রেনেসাঁ সম্পর্কে পাঠক বিস্তারিত জানতে পারবেন।

তিনি বলেন, ইতালীয় রেনেসাঁর আগে গ্রিক ও রোমান সভ্যতার চরম বিকাশ  ঘটেছিল। এরপর শুরু হয় মধ্যযুগ, পের্ত্রার্কের ভাষায় অন্ধকার যুগ। সর্বাত্মক উন্নতির পরে বিদঘুটে অন্ধকার, সত্যিই যা ভাববার বিষয়।

লেখক বলেন, ব্যাপক উন্নতির পরেও বর্তমানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা অন্ধকারে আছি। আলোর পর কীভাবে অন্ধকার এসে সবকিছু ঢেকে দেয়, ইতালীয় রেনেসাঁ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারবো।

এসব কথা পাঠককে জানানোর উদ্দেশ্যই বইটি লেখার অন্যতম কারণ বলে জানান গোলাম মুরশিদ।

‘রেনেসন্স বাংলার রেনেসন্স’ বইটির প্রথম অংশে লেখক রেনেসাঁর বিষয়-বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। এরপর বঙ্গদেশে রেনেসাঁ হয়েছিল কিনা; তা ব্যাখ্যা করেন।

তার মতে, ইতালীয় রেনেসাঁ সম্পর্কে না জানলে বঙ্গদেশে রেনেসাঁ হয়েছে কিনা তা বোঝা যাবে না।

গোলাম মুরশিদের মতে, অনেকের পক্ষ থেকে ধর্মীয় রেনেসাঁর কথা বলা হলেও রেনেসাঁ কখনো ধর্মীয় হতে পারে না। বরং রেনেসাঁ যথাযথভাবে হাসিল হলে ধর্মীয় প্রভাব থেকে মানুষের মুক্তি ঘটবে। তবে ধর্মীয় জাগরণ হতে পারে।

তিনি মনে করেন, শিল্প-সাহিত্যে যখনই ধর্মের আছর লেগেছে, তখনই অবক্ষয় শুরু হয়েছে।

গোলাম মুরশিদ বলেন, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী। ভিঞ্চি ছিলেন তার ‘আইনি  বাবার বেআইনি  সন্তান’। এরপরও সমাজ তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করেনি।

রেনেসাঁর বিষয়টি এভাবেই ঘটে বলে মত এই নন্দিত গবেষকের।

তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে সবাই একমত যে, উনিশ শতকে বাংলা অঞ্চলে ভাষা, সাহিত্য, সংগীত ও শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব জাগরণ হয়েছে। সে সময়ে মধ্যযুগীয় সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে বাঙালি আধুনিকতায় পা রাখে। বাংলা ভাষাভাষীদের ভেতরে দেখা দেয় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতা।

গোলাম মুরশিদ মনে করেন, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রমথ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বরা বাংলার রেনেসাঁরই ফসল।

উল্লেখ করা যেতে পারে, গোলাম মুরশিদ একজন গবেষক হলেও তার কৌতূহল  বহুমাত্রিক। ভাষা, সাহিত্য, মানবীবিদ্যা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ইতিহাস নিয়ে তিনি লেখালেখি করেছেন। তার প্রথম কাজ ছিল বৈষ্ণব পদাবলীর ওপর। তার একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা হল, ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া: নারীপ্রগতির একশ বছর’।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।