ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

৭৬ বছরে ছোটগল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হক

রফিকুল ইসলাম, রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
৭৬ বছরে ছোটগল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হক

রাবি : আজ উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জন্মদিন। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

এর মধ্য দিয়ে ৭৬ বছরে পা রাখলেন বাংলা ছোটগল্পের এই রাজপুত্র।

কোনো স্বীকৃতিই জাত লেখককে তৃপ্ত করতে পারে না, তার কলমকে বাঁধা বৃত্তের অচলায়তনে আটকে রাখতে পারে না। আর তাই হাসান আজিজুল হকও কথাসাহিত্যের প্রচলিত ধারাকে তো বটেই, নিজের লেখাকেও বার বার নতুন পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছেন। সময়ের সাথে যেমন সমাজের সদর-অন্দর, সমাজের মানুষের ভিতর-বাহির পাল্টেছে, তেমনি পাল্টেছে তার গল্পও।

১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন তিনি। ষাটের দশক থেকেই ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৩৯ থেকে এ পর্যন্ত বহু ঘটনার সাক্ষী তিনি। সে ঘটনাগুলোকেই কাগজে ধরে রাখেছেন পরম মমতায়। সমুদ্রের স্বপ্ন-শীতের অরণ্য কিংবা আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। যে পরিবারে হাসান আজিজুল হকের জন্ম সেই পরিবারের কেউ কেউ চাকরিতে প্রবেশ করলেও তাঁদের পারিবারিক অর্থনীতির শেকড় তখনও কৃষিতেই প্রোথিত ছিল। ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। প্রথম যৌবনেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসান আজিজুল হক।

রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তান সরকারের চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয় তাঁকে। কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর মেধাবৃত্তি ফাইলচাপা করে রাখেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। পরে তিনি এসে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

১৯৫৮ সালে শামসুননাহারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য খান সারওয়ার মুরশিদ নিজে উদ্যোগী হয়ে তাকে রাজশাহী নিয়ে আসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন হাসান আজিজুল হক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন তিনি।

হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: গল্পগ্রন্থ— সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রোদে যাবো (১৯৯৫), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), নির্বাচিত গল্প(১৯৮৭), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প(১৯৯৫)।

উপন্যাস— বৃত্তায়ন (১৯৯১), আগুনপাখি (২০০৬), শিউলি। নাটক— চন্দর কোথায় (জর্জ শেহাদের নাটকের ভাষান্তর) প্রবন্ধ- চালচিত্রের খুঁটিনাটি, একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, কথাসাহিত্যের কথকতা, অপ্রকাশের ভার, অতলের আধি, সক্রেটিস, কথা লেখা কথা, লোকযাত্রা অআধুনিকতা সংস্কৃতি।

শিশুসাহিত্য— লালঘোড়া আমি (১৯৮৪ সালে প্রকাশিত কিশোর উপন্যাস), ফুটবল থেকে সাবধান (১৯৯৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গল্প)। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন থেকে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে হাসান আজিজুল হকের রচনাসংগ্রহ।

তিনি ১৯৬৭ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আরও অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার।

১৯৯৯ সালে 'একুশে পদকে' ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। 'আগুনপাখি' উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।

দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে নিজ বাড়ি 'উজান'-এ লেখালেখি নিয়ে মগ্ন আছেন হাসান আজিজুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।