ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আশির দশকের কিশোর ক্যাডেটের ডায়েরি | ফায়াজ আহমেদ মিরাজ

পাঠ / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৫
আশির দশকের কিশোর ক্যাডেটের ডায়েরি | ফায়াজ আহমেদ মিরাজ

ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের রি-ইউনিয়নের পর সুবর্ণ এক্সপ্রেসে করে ঢাকা ফিরছিলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে অসাধারণ ঘটনাবহুল তিনটি দিন কাটানোর পরও নস্টালজিয়া কাটেনি তখনও।

বিশেষ করে ট্রেন যখন কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, অতীতের কত স্মৃতি যে উঁকি দিচ্ছিল মনের ভিতরে, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমরা যারা ছুটিতে কলেজের সামনে দিয়ে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতাম, তাদের জন্য এই মুহূর্তটি খুবই আবেগের। মনে হলো হাজারও স্মৃতির এক পশলা মেঘ এসে আমাকে পুরোপুরি ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেল।

স্মৃতিকাতর আমি আনমনে রি-ইউনিয়ন থেকে পাওয়া সুভেনিরগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। এর মধ্যে ‘ক্যাডেটের ডায়েরি’ বইটিও ছিল। লেখক আমাদেরই কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেট বড় ভাই—শাকুর মজিদ।

প্রথমে বইয়ের ভূমিকায় চোখ বোলাই। ‘কেন এ ডায়েরির প্রকাশনা’—এই অংশটি পড়েই হাত থেকে বইটি আর নামাতে ইচ্ছে করল না। এরপর তো বলা যায় একরকম গোগ্রাসেই গিলতে থাকা। অবশ্য শুধু পড়েছি বললে ভুল হবে। পড়ার মাঝে কখনও কখনও নিজেই ক্যাডেট শাকুর হয়ে গেছি। কখনও আবার নিজের ক্যাডেট জীবনের স্মৃতির মধ্যেই হারিয়ে গেছি। কোথা দিয়ে সে সময় পার হয়ে গেছে, টেরই পাইনি!

এটি লেখকের পরিণত বয়সে লেখা কোনও মৌলিক গ্রন্থ নয়, বরং কিশোর বয়সে লেখা ডায়েরির প্রায় হুবহু সংকলন। বইয়ের নাম থেকেই সেটা বোঝা গেলেও, ভূমিকাতে লেখক সে কথা পাঠকদের আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, আমার কাছে এ ব্যাপারটিকেই বইটির মূল আকর্ষণ বলে মনে হয়েছে। অভিমানী কিশোর এক ক্যাডেটের অল্প অল্প করে বেড়ে ওঠা, কঠিন অনুশাসনের মধ্যে বিকশিত হওয়া, জীবনের সহজ সরল আনন্দ থেকে শুরু করে রূঢ় বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নেয়া—এরকম অনেক অব্যক্ত গল্পই বুদ্ধিমান পাঠকের কাছে ধরা দেবে, যার সবটা হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু ডায়েরি লেখার ধারাবাহিকতায় ঠিকই সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে।

সেই সাথে আশির দশকের কিছু ছবি, আর সে সময়কার রাষ্ট্রীয় ও সামাজ জীবনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার ছোট ছোট বর্ণনা—সবমিলে মনে হলো আমি নিজেই সেই কিশোর ক্যাডেটের স্মৃতিতে ভর করে কালের সাক্ষী হয়ে রইলাম। হুবহু ডায়েরি বলেই হয়ত আবেগ এতটাই খাঁটি। নিঃসন্দেহে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে পারবে বইটি থেকে। কেউ কেউ হয়ত ডায়েরি লেখারও উৎসাহ পাবে নতুন করে।

প্রতি ছুটিতে দুদিনের জার্নির পর বাসায় ফেরা, ডায়েরি হারিয়ে ফেলা, বন্ধুদের প্রতি অভিমান, আবার পরবর্তীতে সেই অভিমানেরই নিখাদ ভালোবাসায় রূপ নেওয়া—এরকম অনেক মিলই পেয়েছি আমার নিজের ক্যাডেট জীবনের সাথে। বইটি পড়তে পড়তে নিজের বা কোনও কাছের বন্ধুর ক্যাডেট জীবনের একইরকম স্মৃতি মনে করে কখনও আনমনে হেসে ওঠা, আর কয়েকবার এদিক ওদিক তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে চোখ মোছা—রি-ইউনিয়নের এরকম একটা উপসংহার আমার খুবই প্রয়োজন ছিল।

ক্যাডেটের ডায়েরি | শাকুর মজিদ
অন্যপ্রকাশ | প্রচ্ছদ: মাসুম রহমান | পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৬ | মূল্য ২২৫ টাকা



বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।