ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সমাজ সংস্কারক সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ (২) | ড. ফজলুল হক সৈকত

বিশেষ রচনা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫
সমাজ সংস্কারক সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ (২) | ড. ফজলুল হক সৈকত

প্রথম কিস্তির লিংক |

কর্মময় রাজনৈতিক জীবন মনসুরকে রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যঙ্গ-রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছে প্রবলভাবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ, রাজনৈতিক নেতাদের চিন্তার অস্বচ্ছতা, টিপিক্যাল বাঙালি প্রবণতা এবং তথাকথিত সমাজসেবকদের প্রকৃত রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

সমকালীন সামাজিক দুর্গতি মনসুরের সমাজ-সাহিত্য ভাবনার মূল বিচরণ-ভূমি। সমাজ-রূপান্তরের কারিগরদের কাজ সত্যের সন্ধান। নামাজ-ধর্ম-পীর প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন মনীষীর ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। আবুল মনসুর আহমদ আমাদের সমাজের ধর্মলগ্নতা বিষয়ে তাঁর নিজস্ব চিন্তা প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। ধর্মীয় ফিলোসফি তাঁর রাজনৈতিক চেতনাকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর মুক্তবুদ্ধি, উদারচিন্তা ও সৎসাহস শিক্ষিত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের অহঙ্কার ও আত্মতৃপ্তিকে কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক প্রতারণা আর কল্যাণবিমুখতা থেকে পাঠ নিয়ে তিনি মানবিক বোধে স্নাত হতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ যেখানে প্রশ্নহীন—জিজ্ঞাসাবিমুখ, সেখানে তিনি সমাজসেবাকে জীবনের ব্রত ও চূড়ান্ত ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করেছেন। রাজনীতি ছিল তাঁর মন্ত্র  আর সাহিত্য ছিল অস্ত্র। তিনি উনিশ ও বিশ শতকীয় সাহিত্য-প্রবণতাকে আত্মস্থ করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ‘উনিশ ও বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাঙালি মুসলমানের নবজাগরণের ঊষালগ্নে সৃষ্টিমুখর সাহিত্য জাতীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে অপরিসীম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ’ (মাহমুদ, ২০০৫, ৪) আয়না গ্রন্থটির জন্য কাজী নজরুল ইসলাম ‘আয়নার ফ্রেম’ শিরোনামে ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। প্রথম প্রকাশের ওই ভূমিকার শেষাংশ এখানে উদ্ধৃত করছি:
আবুল মনসুরের ব্যঙ্গের একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এই যে, সে ব্যঙ্গ যখন হাসায় তখন হয় সে ব্যঙ্গ কিন্তু কামড়ায় যখন, তখন হয় সে সাপ; আর সে কামড় গিয়ে যার গায়ে বাজে তার মুখের ভাব হয় সাপের মুখের ব্যাঙের মত করুণ। কিন্তু সে হাসির পিছনে যে অশ্রু আছে, সে কামড়ের পিছনে যে দরদ আছে, তা যাঁরা ধরতে পারবেন, আবুল মনসুরের ব্যঙ্গের সত্যিকার রসোপলব্ধি করতে পারবেন তাঁরাই। বন্ধুবরের এই রসাঘাত কশাঘাতের মত তীব্র ও ঝাঁঝালো। কাজেই এ রসাঘাতের উদ্দেশ্য সফল হবে, এটা নিশ্চয়ই আশা করা যেতে পারে। (উৎস: আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, ১৯৯৮, ৪৭১)

প্রসঙ্গত, ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে ‘সওগাত’ পত্রিকায় কাজ করার সময় আয়না’র গল্পগুলো প্রথম সে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে ছিল হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সাম্প্রদয়িকতা-বিষয়ক রচনা ‘ধর্ম-রাজ্য’, আর্যসন্ন্যাসীদের গো-হত্যা বন্ধের আন্দোলন-সংক্রান্ত ‘গো দেওতাকা দেশ’, ধর্মীয় ভণ্ডামি-বিষয়ক লেখা ‘হুজুর কেবলা’ রাজনৈতিক-সামাজিক চেতনা-সম্পৃক্ত গল্প ‘বিদ্রোহী-সংঘ’। আয়না গ্রন্থাকারে প্রকাশের অল্পকালের মধ্যেই আবুল মনসুর আহমদ বাংলা সাহিত্যে একজন শক্তিশালী ব্যঙ্গ-রচয়িতার মর্যাদা লাভ করতে সমর্থ হন। পরবর্তী গল্পগ্রন্থ ফুড কন্ফারেন্স (প্রথম প্রকাশ: ১৯৪৪)-এর রচনাগুলো ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ সময়কালে রচিত। তৎকালীন শেরে বাংলার মন্ত্রীসভার আমলকে এই গ্রন্থের গল্পগুলোর স্যাটায়ার স্পর্শ করেছিল বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে নামগল্পসহ ‘সায়েন্টিফিক বিযিনেস’ ও ‘জনসেবা ইউনিভার্সিটি’ বেশ সাড়া জাগানো কাহিনি। দুঃশাসন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে প্রবলকণ্ঠ এইসব রচনা। ‘ফুড কন্ফারেন্স’ গল্পের কিছু অংশ তুলে ধরা যেতে পারে:
‘দেশে হাহাকার পড়েছে; কারণ নাকি খোরাকির অভাব। সে হাহাকার অবশ্যি ভদ্রলোকেরা শুনতে পাননি; ভাগ্যিস অভুক্ত হতভাগ্যদের গলায় চিৎকার করে কাঁদবার শক্তি নেই। ... অভুক্ত কঙ্কারসার আধ-ল্যাংটা হাজার হাজার নর-নারী প্রাসাদশোভিত রাজধানীর রাস্তঘাটে কাতার করছে। তাতে রাস্তায় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এইসব রাস্তায় আগে-আগে গাউন শাড়ি পরা পরীর ভিড় হতো। আর আজ কিনা সেখানে অসুন্দর অসভ্য কুৎসিত অর্ধোলঙ্গ স্ত্রীলোকেরা ভিড় করছে! কি অন্যায়!... গ্র্যান্ডহোটেলে ফুড কমিটির বৈঠক। শেরে-বাংলা মহিষে-বাংলা সিংগীয়ে-বাংলা টাটুয়ে-বাংলা গাধায়ে-বাংলা কুত্তায়ে-বাংলা পাঁঠায়ে-বাংলা বিল্লিয়ে-বাংলা শিয়ালে-বাংলা প্রভৃতি নেতৃস্থানীয় সমস্ত বাঙালিই ফুড কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। মন্ত্রীরা এক্স অফিসিও মেম্বার। তাঁরা অবশ্য কমিটির মেম্বর হিসেবে আর মাইনে পাবেন না; তবে মিটিং-এ হাজির হওয়ার জন্য ফিস্ পাবেন। সদস্যের মধ্যে শেরে-বাংলার ভাগ্নের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তাতে কারুর আপত্তি করার উপায় নেই; শেরে-বাংলার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সেই শর্তেই। আর খোদ শেরে-বাংলা বলেন, শেরে বাংলার ভাগ্নে হলে ব্রিলিয়েন্ট হতেই হবে, যথা, শিয়ালে-বাংলা। ’ (আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, ১৯৯৮, ৮৭-৯০)

প্রায়শই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা বলি। কিন্তু সেই ব্রিটিশ ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ পর্যন্ত আজ অবধি বিদেশের পণ্যের ওপর আমাদের নির্ভরতা রয়েছে বহাল-তবিয়তে। এই নির্ভরতা, পণ্য-উৎপাদন, বাজার-অর্থনীতি—এসবের পিছনের কথা আবুল মনসুর তুলে ধরেছেন তাঁর ‘গ্রো মোর ফুড’ গল্পের ক্যানভাসে। তিনি লিখেছেন:
‘ভারতবর্ষ দেশটা ছিল বরবারই উর্বর। এ দেশের মাটিও ছিল আগে থেকেই খুব লায়েক। আমরা ইচ্ছা করলেই বে-এন্তেহা ফসল আবাদ করতে পারতাম। কিন্তু আমরা এতদিন ইচ্ছেই করিনি। ইচ্ছেটা আমাদের হলো না দুটো কারণে। প্রথমত বেশি ফসল আবাদ করার দরকার ছিল না; দ্বিতীয়ত বেশি রকম ফসল আবাদ করা আইনসঙ্গত ছিল না। দরকার ছিল না এই জন্য যে, এদেশে বেশি ফসল হলে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যেত। এটা ঠিক হতো না, কারণ ভারতবর্ষ ধলা আদমিদের মার্কেট—বাংলা ভাষায় যাকে বলা হয় বাজার। বাজারটা হচ্ছে গিয়ে বেচাকেনার জায়গা। বাজারে ফসল আবাদ হয় কে, কবে শুনেছেন! ভদ্দরলোকদের সুবিধের জন্য ধানক্ষেত ভেঙ্গে বাজার বসানো নতুনও নয়, অন্যায়ও নয়। অতএব ভারতবর্ষ স্বভাবতই এবং আইনানুসারেই ভালো মানুষদের বাজার হয়েই থাকল—চাষা-ভুষোদের আবাদের ক্ষেত হতে পারল না। ’ (আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, ১৩৮-১৩৯)

আবুল মনসুর জানতেন ‘রেসপনসিবিলিটি উইদাউট রাইট’ এবং ‘রাইট উইদাউট পাওয়ার’ অসম্ভব। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্ব আর দায়িত্ব পালনের নিমিত্ত ক্ষমতা—এই দর্শনের ওপরেই যে আমাদের দেশের রাজনীতি দাঁড়িয়ে গেছে, সেই সত্য অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি। এদেশে স্থানীয় সরকার যে দুর্বল, মন্ত্রীরা যে ক্ষমতাহীন, আর ‘প্রাদেশিক স্বয়ত্তশাসন একটা ধোকাবাজি’ তা অবলীলায় বলতেও পেরেছেন মনসুর। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি-সম্বন্ধে তিনি সতর্ক সৈনিক। চিন্তায়, কাজে, বক্তৃতায় সরব ছিলেন বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে। আর বাঙালির সাহিত্যের ভাষাও যে বাংলা হওয়াই উচিত, সে বিষয়ে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ১৯৪০ সালে ‘লাহোর প্রস্তাব’ গ্রহণের পর কলকাতায় মুসলমানদের মধ্যে ভাষা-সচেতনতা সংগঠনের লক্ষ্যে সৃষ্টি হয় ‘পূর্ব-পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি’। এই সোসাইটির প্রথম সম্মেলনে, ১৯৪৪ সালের ৫ মে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ মিলনায়তনে, সভাপতির ভাষণে আবুল মনসুর আহমদ যে তাৎপর্যপূর্ণ মতামত প্রকাশ করেন, তার খানিকটা পাঠকের জন্য তুলে ধরছি:
‘বাঙলার মুসলমানদের যেমন একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, তেমনি তাদের একটা নিজস্ব সাহিত্যও আছে। সে সাহিত্যের নাম মুসলমানী বাঙলা সাহিত্য বা পুঁথি সাহিত্য। ... পূর্ব-পাকিস্তানের সাহিত্যিক রেনেসাঁ আসবে এই পুঁথি সাহিত্যের বুনিয়াদে। আমরা আবার পুঁথি সাহিত্যে ফিরে যাব—সে কথা বলছি না। আমার মতলব এই যে, বাঙালী মুসলমানের সাহিত্যের প্রাণ হবে মুসলমানের প্রাণ এবং সে সাহিত্যের ভাষাও হবে মুসলমানেরই মুখের ভাষা। ... আজকার তথাকথিত জাতীয় সাহিত্যে বাংলার মেজরিটি মুসলমানের জীবনই যে শুধু বাদ পড়েছে তা নয়, তার মুখের ভাষাও সে সাহিত্যে অপাংক্তেয় রয়েছে। মুসলমানের আল্লা-খোদা, রোযা-নামায, হজ্জ-যাকাত, ইবাদাৎ-বন্দেগি, অযু-গোসল, খানাপিনা সমস্তই বাংলা সাহিত্যের দিকপাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের কাছে বিদেশী ভাষা। এ যুলুমবাজির মধ্যে কোনও জাতির সাহিত্য গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং পূর্ব-পাকিস্তানের সাহিত্য রচিত হবে পূর্ব-পাকিস্তানিদের মুখের ভাষায়। (সূত্র: রহমান, ২০০২, ১০৪-১০৫)

রাজনৈতিক কারণে কলকাতা এবং ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে—একথা ঠিক। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব-পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের বিভক্তি যে কেবল রাজনৈতিক নয়, এর পেছনে যে ভাষা ও সংস্কৃতিরও প্রভাব রয়েছে, তা বিশ্বাস করতেন আবুল মনসুর। সাহিত্য ও সংস্কৃতি-বিশারদ এই রাজনীতিবিদ মনে করেন:
‘অবিভক্ত বাংলায় বাংলা সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে প্রাধান্য ছিল হিন্দুদের। তার মানে বাংলা সাহিত্য ছিল মূলত এবং প্রধানত হিন্দু কালচারের বাহক। সে সাহিত্য বাংলার মুসলিম কালচারের বাহক তো ছিলই না বরং  তার প্রতি বিরূপ ছিল। সুতরাং সে সাহিত্যে গোটা-কতক মুসলমানী শব্দ ঢুকাইয়া দিলেই তা মুসলিম কালচারের বাহক সাহিত্য হইয়া যাইত না। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের ভালো-ভালো বই-এর হিন্দু চরিত্রগুলির জায়গায় মুসলমান নাম বসাইয়া দিলেই ওগুলি মুসলিম চরিত্র হইয়া যাইবে না। তাতে মুসলিম সাহিত্যও হইবে না। ... গোশতের বদলে ‘মাংস’, আন্ডার বদলে ‘ডিম’, জনাবের বদলে ‘সুধী’, আরযের বদলে ‘নিবেদন’, তসলিমবাদ-এর বদলে ‘সবিনয়’, দাওয়াতনামার বদলে ‘নিমন্ত্রণপত্র’, শাদি-মোবারকের বদলে ‘শুভ বিবাহ’ ব্যবহার করিলেই আমরা ‘সভ্য’ ‘কৃষ্টিবান’ ও ‘সুধী’ বিদগ্ধ হইলাম, নইলে হইলাম না, এমন ধারণা হীনমন্যতার পরিচায়ক। কৃষ্টিক চেতনা রেনেসাঁর জন্য এটা অশুভ ইঙ্গিত। ’ (বাংলাদেশের কালচার, ১৯৭৬, ২১৭)

‘ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি’ ধারণা লালনকারী সমাজ-সাধক আবুল মনসুর আহমদের চিন্তা ও চোখ প্রসারিত ছিল নানান দিকে ও বিচিত্র বাঁকে। গল্প-উপন্যাস ছাড়াও কবিতা এবং নাটক-নির্মাণের দিকে তাঁর বিশেষ ঝোঁক পাঠকের নজর কাড়ে। তিনি কবিতার কাঠামোয় পরিবেশন করেছেন আসমানী পর্দা (প্রথম প্রকাশ: ১৯৫৭)। পুঁথিসাহিত্যের ঢঙে লেখা এই রচনা ছিল সমকালীন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভণ্ডামির মুখোশে প্রবল আঘাত। বাঙালি হিন্দু সমাজে ছোটদের জন্য সহজ-সরল ভাষায় রামায়ণ-মহাভারত রচিত হলেও মুসলমান সমাজের শিশু-কিশোরদের জন্য তেমন কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ ছিল না, যা পড়ে ছোটদের ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত হতে পারে। তখন তিনি লিখলেন কাসাসুল আম্বিয়া বা পয়গম্বদের কাহিনি—মুসলমানী কথা (প্রথম প্রকাশ: ১৯২৪), নয়াপড়া (প্রথম প্রকাশ: ১৯৩৪) এবং ছোটদের কাসসুল আম্বিয়া (প্রথম প্রকাশ: ১৯৫০)। নাটকের আদলে লেখা গালিভারের সফর-নামা (প্রথম প্রকাশ: ১৯৫৯) বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ সংযোজন। নির্মাণ-কাঠামো এবং উপস্থাপন-কৌশল, যাকে বর্তমান বিশ্বে সাহিত্যতত্ত্বের বিবেচনায় ফরমালিজম বলে বিবেচনা করা হয়—আবুল মনসুর আহমদের কৌশলী প্রয়োগে এই রচনাটি অনন্যতা লাভ করেছে। এই গ্রন্থের ‘রাজনৈতিক বাল্যশিক্ষা’ ও ‘রাজনৈতিক ব্যাকরণ’ বাঙালির চিন্তাজগতে নতুন-যোজনা হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবে। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছিল ‘মিছরির ছুরিতে ব্রেইন অপারেশনের উস্তাদ জর্জ বার্নাড শ’-কে। গ্রন্থটির অন্য তিনটি বৈশিষ্ট হলো—গণতান্ত্রিক-স্বৈরতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থার পার্থক্য-নির্দেশ, পাকিস্তানে ইসলামি শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রবর্তন-প্রয়াসের বিরূপ সমালোচনা এবং সমস্ত কাহিনীর নাটকীয়তা ও সংলাপে বৃহত্তর ময়মনসিংহ-এলাকার আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ-চাতুর্য।

‘বাংলা সাহিত্যে আবুল মনসুর আহমদের যে খ্যাতি তা মূলত ব্যঙ্গ রচনার জন্য। তবে উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও স্মৃতিচারণমূলক রচনায় তিনি যে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন তাও অতুলনীয়। গতানুগতিক ধারা পরিহার করে তিনি প্রবন্ধ-নিবন্ধে রেখেছেন মৌলিক চিন্তার পরিচয়। বিশ শতকের সমাজ সংস্কার ও শোধনের বিষয়টি ঘুরে-ফিরে এসেছে তাঁর রচনায়। চারপাশের যাপিত জীবনের চালচিত্রে যে সঙ্গতি-অসঙ্গতি তা সাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার সাথে সাথে তিনি মুখোশ উন্মোচন করেছেন সেইসব ছদ্মবেশী ভণ্ডদের যারা আমাদের সমাজে দিব্যি ভালো মানুষটি সেজে সাধারণ মানুষকে বোকা পেয়ে ধোকা দিচ্ছে। ’ (একুশের প্রবন্ধ, ২০০৯, ১৩৩)

বিশ শতকের প্রথমার্ধ্বের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাঙালি মুসলিম জীবনের নিবিড় পর্যবেক্ষক ছিলেন আবুল মনসুর। রাজনীতির হালচাল, অর্থনীতির নাজুক দশা, খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ, বিশ্বযুদ্ধ, ভাষা-আন্দোলন প্রভৃতির স্বরূপ রূপায়নে এবং সঠিক দিক-নির্দেশনায় তিনি সমকালের সতর্ক শিল্পী। তাঁর কলমের সাধনা উত্তরকালেও সম্প্রসারিত। দেশ-বিভাগের আশাবাদ এবং পরবর্তীকালে সৃষ্ট হতাশা তাঁর সাহিত্যের উপাদান হয়ে উঠেছে অনিবার্যভাবে। গ্রাম্য দলাদলি, আইনের শাসন-প্রতিষ্ঠায় দুর্বলতা, ধর্ম-ব্যবসা ও কুসংস্কারকে তিনি সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন পরম মমতায়। জোহান বোয়ার-এর দ্য পাওয়ার অব লাইফ গ্রন্থের বাংলা রূপান্তর সত্যমিথ্যা (প্রকাশকাল: ১৯৫০) আবুল মনসুর আহমদের প্রথম উপন্যাস। এর বিষয় সমকালীন সমাজ ও রূপান্তরের চিন্তা। পরবর্তী উপন্যাস জীবনক্ষুধা (প্রকাশকাল: ১৯৫৫) এবং আবেহায়াত-এ (প্রকাশকাল: ১৯৬৮) স্থান পেয়েছে রাজনীতির ক্রম-বিকাশ আর প্রচলিত জীবনধারার বিবরণ ও প্রত্যাশিত পরিবর্তনের প্রবল আশাবাদ। মূলত সমকালীন রাজনৈতিক-সামাজিক সংকটকেই তিনি চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছেন চিন্তা-প্রকাশ-প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। এই প্রসঙ্গে সাহিত্যিক ও দার্শনিক আহমদ ছফার একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করছি:
‘ইতালীয় দার্শনিক বেনেদিত্তো ক্রোচের মতে প্রতিটি জাতির এমন কতিপয় সামাজিক আবেগ আছে যার মধ্যে জাতিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্যাসের আকারে পুরোমাত্রায় বিরাজমান থাকে, রাজনৈতিক পরাধীনতার সময়ে সে আবেগ সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাকে এবং কোনও রাজনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলে সে আবেগই ফণা মেলে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে। সাহিত্যেই প্রথমে এই জাতিগত আকাঙ্ক্ষার রূপায়ণ ঘটতে থাকে। জাতিগত আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলে কোনও মহৎ সাহিত্য যে সৃষ্টি হতে পারে না, একথা বলাই বাহুল্য। ’ (সূত্র: ছফা, ১৯৯৬, ১৯)

স্কুলের সিলেবাসে থাকার কারণে বাংলাদেশে আবুল মনসুর আহমদের ‘রিলিফ ওয়ার্ক’ গল্পটি বেশ পরিচিত। এই গল্পে সামাজিক দুর্নীতি আর অমানবিকতার বাস্তবচিত্র অঙ্কনে লেখকের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘ধর্মের জন্য ব্যবসা’, ‘সেবার জন্য ব্যবসা’, ‘দেশপ্রেমের জন্য ব্যবসা’, ‘কৃষ্টি-সভ্যতা ও মানবতার জন্য ব্যবসা’-র আধ্যাত্মিক রূপায়ণের পরিকল্পনার পরিণতিকে বিষয় করে আবুল মনসুরের লেখা ‘সায়েন্টিফিক বিযিনেস’ বর্তমান বিশ্বে সামাজিক ব্যবসা বা সোশ্যাল বিজনেস-এর প্রাক-ধারণা বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। বাঙালির কেরানি চাকরিপ্রীতি দূর করে তেজারতি বা ব্যবসাবাণিজ্য বিস্তার যে সমাজ-সভ্যতার জন্য কল্যাণকর, তা সমাজ-রূপান্তরের কারিগর আবুল মনসুর উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাঁর ‘আদুভাই’ তো বাংলাসাহিত্যে খুব জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত গল্প। বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আদুভাইয়ের নাম শোনেনি, এমন নজির বিরলপ্রায়। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা, শিক্ষা-সংস্কার আর চিন্তাভুবনে প্রবলভাবে নাড়া-দেওয়া এই গল্পটির ভাবার্থ অনুধাবন করা সত্যিই দুঃসাধ্য। পিছিয়ে পড়া এই সমাজে শিক্ষা যে আজও আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করতে পারেনি, শিক্ষা যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারেনি, তা বোধকরি ঢোল পিটিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। শিক্ষা এবং ভাষা-সংস্কৃতি প্রসঙ্গে আবুল মনসুর আহমদের চিন্তা নানানভাবে বাঙালি বিদ্বৎসমাজকে প্রভাবিত করে। ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। তাঁর ভাষা-সংস্কার-চিন্তা বিষয়ে প্রখ্যাত কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক মন্তব্য করেছেন:
আবুল মনসুর আহমদ এক সময় আমাদের লেখ্য বাংলা ভাষাটিকে দেশজ অনন্যতা দেবার যুক্তিতে কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব এনেছিলেন। নে-সব প্রস্তাবের সামান্যই ছিল ভাষাবিষয়ক; ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক বিবেচনাই তাঁর মন দখল করে ছিল বেশি। ভাষার প্রমিত রূপটি অক্ষত রেখেই যে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, এমন কি আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ভাষাদেহে সংস্থিত করা সম্ভব, এ কথা তাঁর মনেই হয়নি। ’ (অপ্রকাশের ভার, রচনাসমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, ২০০৩, ১৬৯)

আবুল মনসুর আহমদের স্যাটায়ার, ক্রিয়েটিভ রচনা ও নিবন্ধে সমকালীন অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিবেশের বিশেষত, মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশের ক্রমধারার ছবি লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। আর আত্মজৈবনিক বচনে রয়েছে অবিভক্ত ভারত, পূর্ব-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংঘাতের পরিচয়। সমাজ-রূপান্তরের ক্রমধারায় তিনি অনন্য এক কারিগর। তিনি ‘তাঁর রাজনৈতিক, সাংবাদিক ও সাহিত্যজীবনে বাংলার নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একজন সচেতন প্রতিনিধিরূপে সর্বদা সমাজের মূলস্রোতে বা ধারার অন্তর্গত ছিলেন। তিনি বামপন্থী রাজনীতিক ও বৃদ্ধিজীবীদের মত সমাজের বাইরে অবস্থান করে সমাজকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ বা নসিহত করার চেষ্টা করেননি। ’ (রফিকুল ইসলাম, ভূমিকা, আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড) কবি-কথাশিল্পী, সাহিত্য-সমালোচক ও সাহিত্য-সম্পাদক বুদ্ধদেব বসুর ‘সাহিত্যে পাকিস্তান অসম্ভব’ শীর্ষক একটি প্রকাশিত নিবন্ধের প্রতিক্রিয়া-ব্যক্ত-করার-প্রসঙ্গে ১৯৪২ সালের ১ নভেম্বর ‘পাকিস্তান রেনেসাঁ সভা’য় আবুল মনসুর আহমদ ‘সাহিত্যে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য’ শিরোনামে একটি রচনা পাঠ করেন। বক্তব্যের বিষয় এবং পরিবেশনের ঢঙে লেখাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নিবন্ধটির এক-অংশে তিনি বলেন:
সাহিত্য মানব-জীবন হইতে বিচ্ছিন্ন একটা হাওয়াই জিনিস নয় এবং মানব-জীবনকেও রাজনীতি হইতে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব। সুতরাং সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বুদ্ধদেব বাবুর উপন্যাসে স্বীকৃত না হইলেও, তাঁর নিজের জীবনেরই প্রতি পরতে পরতে এটা তিনি দেখিতে পাইবেন যে, যৌন-ক্ষুধার চেয়ে মানুষের পেটের ক্ষুধা কম শক্তিশালী অনুভূতি নয়। অপরের বিয়ে করা বউয়ের প্রতি লোভ হওয়ার নামকে ‘প্রেম’ আখ্যা দিলে অপরের অনাবশ্যক ধনের প্রতি লোভ হওয়াটাকেও কিছুতেই ‘অপ্রেম’ আখ্যা দেওয়া যায় না। দুনিয়ার হাজার মেয়ে মানুষ পড়িয়া থাকিতে একজনের বউ চুরি করিয়া লইয়া যাওয়াকেই আমরা আর্টের রূপ দিতেছি। অথচ দরিদ্রদের ক্ষুধার অন্ন কাড়িয়া-নেওয়া ধনস্তূপের দিকে যদি অন্নহীনেরা বেআইনীভাবে একটু হাত বাড়ায় তবে আমরা তাকে ঘৃণা করিতেছি। এ-ব্যবস্থার প্রতিবাদকে বাঙলার লেখক সমাজ রাজনৈতিক আবর্জনা ও আর্ট-বিরোধী পার্থিব ব্যাপার বলিয়াই আসিতেছেন। স্বয়ং বুদ্ধদেব বাবু এই আর্টবাদীদের গণ্ডি হইতে ‘স্বতন্ত্র’ হইবার চেষ্টা করিতেছেন বলিয়াই বোধ হয়। তাই তিনি রাজনীতি হইতে মুক্ত নন। এটা ভালো কথা। এইখানেই বুদ্ধদেব বাবু আমাদের নমস্য। ’ (উৎস: পূর্ব বাংলার ভাষা, ২০০৪, ১১)

বিশ শতকের প্রায় পুরো অংশের রাজনৈতিক-সামাজিক তরঙ্গক্ষুদ্ধ ঘটনাপ্রবাহের কালদ্রষ্টা আবুল মনসুর আহমদ। ১৯২০ থেকে ১৯৭৯—প্রায় ৬০ বছরের ঘটনা-নির্যাস নিংড়ে-নিংড়ে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন সাহিত্যে, আত্মজীবনীতে। যাপিত জীবনের চালচিত্র উপস্থাপনে তাঁর রচনায় কোনওরকম কৃত্রিমতার প্রলেপ নেই। কখনও গল্পের খণ্ডছবিতে, কখনও উপন্যাসের বিরাট ক্যানভাসে, কখনও মননশীল রচনায় কিংবা বক্তব্যের প্রৌঢ়-ভঙ্গিতে সমাজকে তুলে এনেছেন পাঠক-শ্রোতার সামনে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিচিত্র বাঁক-পরিবর্তনেও তিনি সাহিত্যচর্চা থেকে দূরে সরে যাননি। নিরন্তর সাধকের মত কাজ করেছেন। সাহিত্যকে গ্রহণ ও প্রতিপালন করেছেন কৃষ্টির আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিকাশের লীলাভূমি হিসেবে। আর উত্তরকালের প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন চিন্তার কিছু উপাদান এবং বিচরণের খানিক খোলা বারান্দা।

তথ্য-উপাদান সূত্র
১। হায়াৎ মামুদ (সম্পাদিত), নোবেল-ভাষণ: বাক্ থেকে পামুক (পাঁচ মহাদেশের দশ সাহিত্যরথী), প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা ২০০৮, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা।
২। সেলিনা হোসেন, নূরুল ইসলাম (সম্পাদিত), চরিতাভিধান, পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
৩। আশরাফুল হক রাজিব, কাজল ঘোষ, অনন্যা রুমা (সম্পাদিত) হাজার বছরের সেরা বাঙালি, প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০০০, অনন্যা, ঢাকা।
৪। বাংলাপিডিয়া (ন্যাশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ); http://www.banglapedia.org/HT/A_0120.htm
৫। আবুল মনসুর আহমদ, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, দশম সংস্করণ জুলাই ২০০২, খোশরোজ কিতাব মহল, ঢাকা।
৬। সালভাদর দালি, ডায়েরি অব আ জিনিয়াস, সৃষ্টি পাবলিশার্স অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরস, নিউ দিল্লি। সূত্র: কালি ও কলম (আবুল হাসনাত সম্পাদিত), প্রথম বর্ষ: পঞ্চম সংখ্যা, জুন ২০০৪, ঢাকা।
৭। আবুল মনসুর আহমদ, আয়না, চতুর্দশ মুদ্রণ জানুয়ারি ২০০৭, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা।
৮। হোসেন মাহমুদ, বাঙালি মুসলমানের আলোকবর্তিকা ও অন্যান্য প্রবন্ধ, প্রকাশকাল: জুন ২০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা।
৯। আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড (রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত), প্রথম প্রকাশ: জুন ১৯৯৮, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
১০। মুহম্মদ মতিউর রহমান, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য, প্রথমপ্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০২, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা।
১১। আবুল মনসুর আহমদ, বাংলাদেশের কালচার, পরিমার্জিত দ্বিতীয় মুদ্রণ ১৯৭৬, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা।
১২। ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ (প্রধান সম্পাদক), একুশের প্রবন্ধ ২০০৬, প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০০৯, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
১৩। আহমদ ছফা, বাঙালি মুসলমানের মন, দ্বিতীয় প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, বুক পয়েন্ট, ঢাকা।
১৪। হাসান আজিজুল হক, ‘প্রমিত বাংলা ভাষা’, অপ্রকাশের ভার, হাসান আজিজুল হক রনাচাসমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, প্রকাশকাল: ২০০৩, সাহিত্যিকী, ঢাকা।  
১৫। এবাদুর রহমান ও অন্যান্য (সম্পাদিত), পূর্ব বাংলার ভাষা, প্রকাশকাল: ২০০৪, ঢাকা।

লেখক: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়



বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।