ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ভাগ হয়ে যাওয়া পাশের গ্রামের কবি | জ্যোতিকা জ্যোতি

গুণের জন্মদিনে / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
ভাগ হয়ে যাওয়া পাশের গ্রামের কবি | জ্যোতিকা জ্যোতি ছবি: সংগৃহীত

আমাদের বাড়ি আমাদের গ্রামের শেষ বাড়ি। বাড়ির সামনেই একটা বিল, একটা বড় রাস্তা, কিছু জমি তারপর আরেকটা গ্রাম।

আমাদের গ্রাম ময়মনসিংহে, ওই গ্রামটা নেত্রকোণায়। আগে এই দুই গ্রাম একই জেলায় ছিল। এখন এরা আলাদা! আমাদের বাড়ির সামনে আমি যতবার দাঁড়াই, বিল পেরিয়ে চোখ যখনই ওই প্রতিবেশি গ্রামটায় যায় তখন দুজন মানুষের কথা আমার মনে আসে। নির্মলেন্দু গুণ আর হুমায়ূন আহমেদ। ভাবতেই ভালো লাগে এই দুই ক্ষণজন্মা ব্যক্তি আমার প্রতিবেশি। কেন যেন এক বিরক্তিকর আফসোস তৈরি হয়—কী দরকারটা  ছিল এই জেলা জেলা ভাগাভাগির! এই ভাগাভাগি যেন এই দুই মানুষকে আমাদের কাছ থেকে ভাগ করে নিতে চায়।

তবে সেই গ্রামের বাতাস, কবিতা  আমাদের গা স্পর্শ করে, আবার নেত্রকোণার সুখে দুখে আমাদের নেত্রের কোণাও চিকচিকে হয়। জেলার সীমানা বাতাস বা কবিতাকে আটকাতে পারে না।   সেই ‘পরিবর্তনহীন, শান্ত  স্থির বোকা গ্রাম’-এর কবি ও তাঁর কবিতা হয়ে ওঠে আমার ভীষণ প্রিয়, তিনি নির্মলেন্দু গুণ, আমার প্রিয় কবি। তাঁর কবিতা পড়েই কবিতার প্রতি নেশা তৈরি হয় আমার। তাঁর কবিতার দেশ, আকাশ, জল, কাশবন আমার ভীষণ চেনা। আমি তাঁর কবিতা পড়ি আর অবাক হই এই চেনা লাঙ্গল, মুগুর, আইল, ধানক্ষেত, মহকুমা স্টেশন, পাটশাক, শুকনো মরিচ কী অদ্ভুতভাবে কবিতা হয়ে ওঠে! বাদ যায়নি রমনা, রেসকোর্স, ‘রৌদ্রদগ্ধ ঢাকা’, মার্ক্স, লেলিন কিংবা আফ্রিকা।

কী সহজ ভাষা—যেন জীবনের সাথে মিলে যায়! নির্মলেন্দু গুণের কবিতা যেন আমার চেনা জীবনের গল্প বলে। পড়তে পড়তে সেই গল্পের দৃশ্য আমার কাছে এত জীবন্ত হয়ে ওঠে—মনে হয় যেন আমি সিনেমা দেখছি। এমনকি তাঁর দুই লাইনের কবিতাও। আর এই একেকটা কবিতার সিনেমা একই পরিচালকের বানানো কোনোরকম মুদ্রাদোষে দুষ্ট না। বৈচিত্রে ভরপুর যেখানে জীবনের সব গল্প আছে। আছে ঘাম, শ্রম, কৃষক, শ্রমিক, চাষা, মজুর, নেতা, প্রেমিক, নারী, পুরুষ, কবি, ঈশ্বর, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, প্রলিতারিয়েত কিংবা একজন যেকোন মানুষ। আমি তাঁর কবিতায় পুরো বাংলাদেশ দেখি। তাঁর কবিতায় সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ক্ল্যাশ করে না, তিনি যেন মানুষতন্ত্রের কবি।

আজ কবির জন্মদিন। তাঁর জন্য শুভকামনা। তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু কামনা করি। আরো কবিতা তৈরি হোক। আর ‘একদিন তোমাকে শাসন করা অসম্ভব ভেবে পূর্ণিমার রাতে মরে যাব’, ‘সংসার মানে সংসার ভাঙ্গা—সংসার তুমি’, ‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই’, ‘তোমার চোখ এত লাল কেন?’, ‘আইচ্ছা ফুলির বাপ, আমাগো একটু একটু জমিন  অবেনা? জমিন চাওয়া কি পাপ?’, ‘শুধু একবার তোমাকে ছোঁব তারপর হব ইতিহাস’, ‘এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব?’, ‘তুমি খুলে দাও সেই নবজীবনের দ্বার, পরশনে যার পৃথিবীর অধিকার ফিরে পায়  প্রলেতারিয়েত। আমি এই বীরভোগ্যা বসুন্ধরা দেব তোমাকেই। ’—আসক্তিকর এসব লাইনের মতো তৈরি হোক আরও অজস্র লাইন! পাঠকের মনে আমার মতো নেশা তৈরি হোক। শুভ জন্মদিন প্রিয় কবি।



বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।