ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৬তম কিস্তি
___________________________________

অতীতে যুগে যুগে, কোনো যুদ্ধ, সংজ্ঞায়িতভাবেই এমন কিছু ছিল যা শিগগিরই নয়ত দেরিতে হলেও একদিন শেষ হতো, নির্ভুলভাবেই হয় জয় নয়ত পরাজয়ে ঘটত সে পরিণতি। অতীতে এও হতো, যুদ্ধই ছিল মানব সমাজকে কাঠামোগত বাস্তবতার স্পর্শে রাখার মূল হাতিয়ার। যুগে যুগে সকল শাসকই তাদের অনুসারীদের বৈশ্বিক কাঠামো নিয়ে একটি মিথ্যা ধারণা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে আসছে কিন্তু সামরিক দাপট নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ রাখা হয়নি কখনোই। আর যতদিন পরাজয় মানেই ছিল পরাধীনতা অথবা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত পরিণতি ততদিন পরাজয় ঠেকানোর পূর্বসতর্কতাও ছিল প্রকট।



বাস্তব সত্যগুলোকে অবজ্ঞার সুযোগ নেই। দর্শন, ধর্ম, কিংবা নীতি বা রাজনীতিতে দুই আর দুইয়ে পাঁচ হলেও হতে পারে, কিন্তু যখন কেউ একটি বন্দুকের কিংবা উড়োজাহাজের নকশা বানাবে তখন তাকে দুই আর দুইয়ে চার মেলাতেই হবে। অকার্যকর জাতিগুলো বরাবরই দ্রুত কিংবা দেরিতে হলেও জয় করে নেওয়া হতো, তাদের কার্যকর হয়ে ওঠার সংগ্রাম তখন আরো প্রতিকূল হয়ে উঠত। কার্যকর রাষ্ট্র হতে হলে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি, কিন্তু তার জন্য অতীতে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সংবাদপত্র, ইতিহাসের বই—এসবই তো বরাবর থেকে গেছে পক্ষপাতমূলক, রং চড়ানো। কিন্তু আজ যেভাবে মিথ্যায়নে সিদ্ধ করা হচ্ছে তা ছিল অসম্ভব। যুদ্ধ ছিল সুবিবেচনার এক সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ, আর শাসক শ্রেণির ক্ষেত্রে সম্ভবত তা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাল। যুদ্ধে যেহেতু জয়-পরাজয় দুই-ই ছিল সেহেতু কোনো শাসকশ্রেণি পুরোপুরি অবিবেচক হতে পারত না।

কিন্তু যুদ্ধ যখন আক্ষরিক অর্থেই এক অবিরাম অনন্ত রূপ নিল, তখন তা ভয়াবহতা হারাল। যুদ্ধ যখন টানা চলতে থাকে তখন সামরিক জরুরৎ বলে কোনো কথা আর থাকে না। কারিগরি অগ্রগতি থেমে যায়, আর ধ্রুব সত্যটিকেও করা হয় অস্বীকার কিংবা অবজ্ঞা। আমরা দেখছি বিজ্ঞান গবেষণা বলতে এখন যা চলছে তা স্রেফ যুদ্ধের জন্যই, কিন্তু সেগুলো অবধারিতভাবেই এক দিবাস্বপ্ন, ফলে কোনো ফল বয়ে আনতে না পারার যে ব্যর্থতা তাও গুরুত্ব হারাচ্ছে। দক্ষতা, এমনকি সামরিক দক্ষতারও আজ আর প্রয়োজন নেই। ওশেনিয়ায় থট পুলিশ ছাড়া আর কোনো কিছুই কার্যকর নয়। তিন প্রধান শক্তির প্রতিটিই যখন অজেয়, প্রতিটিই কার্যত একটি ভিন্ন ব্রহ্মাণ্ড যার অভ্যন্তরে চিন্তার যে কোনো বিচ্যুতিকে সহজেই চালিয়ে দেওয়া যায়। বাস্তবতার বাস কেবল প্রাত্যহিক জীবনের চাহিদার যে চাপ তার মাঝে—খেতে হবে, পান করতে হবে, মাথার ওপর চাই আচ্ছ্বাদন, চাই পরনের বসন, চাই না গলায় গরল ঢেলে কিংবা বহুতলের জানালা দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কিংবা এমন আরো নানা উপায়ের মৃত্যুবরণ।

জীবন আর মরণের মাঝে, আনন্দ আর বেদনার মাঝে এখনও একটি সুস্পষ্ট ফারাক রয়ে গেছে, কিন্তু সেটুকুই সব। বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, অতীত বিস্মৃত হয়ে ওশেনিয়ার নাগরিকেরা মহাকাশের তারকামণ্ডলের বাসিন্দা হয়ে উঠেছে, যাদের একটু জানারও সুযোগ নেই, কোন দিকে উপর আর কোন দিকে নিচ। এমন রাষ্ট্রে শাসক অসীম ক্ষমতাধর, ফারাও কিংবা সিজাররাও যতটা ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেনি। দেশের নাগরিক দুর্ভিক্ষে যাতে বিপুল সংখ্যায় মারা না পড়ে তা নিশ্চিত করা তাদের দায়, আর সামরিক কৌশলে শত্রুদের সমতুল্যে একই নিচু স্তরে থেকে যাওয়াও তাদের কাজ, কিন্তু একবার এর ন্যুনতম অর্জন নিশ্চিত হয়ে গেলেই, সত্যকে তারা যেমন ইচ্ছা তেমন রূপ-আকার দিতে পারে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৮তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।