ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবি শামসুর রাহমানের বাড়ি

কবির জন্মদিনে ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
কবি শামসুর রাহমানের বাড়ি

মোহাম্মদ আসাদ ||

ঢাকার শ্যামলী এলাকায় মানুষজনের বসবাস শুরু পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, পাকিস্তান আমলে। তখন এই এলাকা শ্যামল ও সবুজের সমারোহ।

আর সে কারণেই এলাকার নামকরণ হয় শ্যামলী। বর্তমানে শ্যামলী কংক্রিটে তৈরি আধুনিক ঢাকার অংশবিশেষ। এখানেই বসবাস করতেন বাংলাদেশের অন্যতম কবি শামসুর রাহমান। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট কবি শামসুর রাহমান পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবি এই বাড়িটিতেই থেকেছেন। এর আগে পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন কবি। পুরনো দালান আর ঘিঞ্জি গলির ওই এলাকাতেই কবির শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো অতিবাহিত হয়েছে। পরবর্তীতে শ্যামলীতে।

শ্যামলীর বাড়িটির দোতলায় বসে কবি শামসুর রাহমান রচনা করেছেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলো। শ্যামলীর ১ নম্বর সড়ক থেকে কবির বাড়িতে পৌঁছানো খুব কঠিন কাজ নয়। দোতলা বাড়ির সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। দুইটি আম গাছ, মেহেদীর ডালপালা আর আলুর লতায় ছাওয়া  সাদামাটা একটি বাড়ি।


বাড়ির সামনে নেইম ফলকে কালো কালি দিয়ে লেখা ‘শামসুর রাহমান’। তার আগেই ‘কবি’ কথাটি লেখা ছিল—সেই কালো রং মুছে দেয়া আছে।


এক তলায় এক পাশে অনেকটুকু খোলা জায়গা। এইখানটাই একদিন বাংলা ভাষার প্রধান এই কবির পদচারণায় মুখর ছিল। এই খোলা জায়গাটির চারপাশে দেয়ালে লাগানো আছে কবির কয়েকটি ছবি। কোনো ছবিতে কবি শুভ্র চুলে হাসি মুখে জীবন্ত পোর্ট্রেট। কোথাও বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। কোনো ছবিতে লিখছেন, কোনোটায় আবার পড়ছেন। প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন এমন ছবিও আছে। তার পাশেই বাইরে লোহার তৈরি দোলনাটি আছে আগের মতোই। কবি অসুস্থ হওয়ার আগে নিয়মিতই এই দোলনায় বসে দোল খেয়েছেন দুই নাতনিকে নিয়ে।


বাড়িটির দোতলায় ছিল কবির লেখার ও শোবার ঘর। তার পাশেই বাইরে খোলা জায়গাটিতে খাবার টেবিল পাতা। দোতলায় যাওয়ার আগেই চোখে পড়ে দেয়ালে কবির একটি ছবি। কবির মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশির্বাদ করছেন।


সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে দোতলায় উঠলেই কবির খাবার টেবিল। গোলাকার একটি টেবিলকে কেন্দ্র করে ছয়টি পুরনো চেয়ার নিস্তব্ধতার সাক্ষ্য বহন করছে।


তার তিন পাশে দেয়ালে ছবি আর ছবি। কবি শামসুর রাহমানের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ইতিহাস এই ছবিগুলোতে। বাবা, মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পুত্রবধু, দুই নাতনী  আর তার স্ত্রীর সাথে আবেগময় সময়ে তোলা এই ছবিগুলো। এখানে কবির বেশি ভাগ ছবিই তার স্ত্রী এবং দুই নাতনীর সাথে। কবির জীবনের সাথে মিশে থাকা ছোট্ট দুই নাতনী নায়না রাহমান বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ইংরেজি নিয়ে। দীপিতা রাহমান পড়েন নবম শ্রেণীতে। দীপিতা রাহমানই দাদার  পথ ধরে হাঁটছেন। ভাবছেন দাদাকে নিয়ে। এরই মধ্যে কিছু কবিতাও লিখেছেন দীপিতা। দাদার উত্তরসূরি হবেন—এমনটিই তার মা টিয়া রাহমানের বিশ্বাস। টিয়া রহমান আছেন শ্বশুরের এইসব স্মৃতিচিহ্ন আঁকড়ে ধরে।


খাবার টেবিল পেরিয়ে ডানে ঘুরলে বামে শোবার ঘর আর ডানে কবির লেখার ঘরটি। কবির লেখার ঘরটি একেবারেই সাদামাটা। একটি চেয়ার একটি টেবিল আর তিনটি বুকসেলফ ছাড়া কবি ব্যবহার করেছেন—তেমন কিছুই নেই এখানে। তবে অবাক লাগে একেবারে সাধারণ একটি চেয়ারে বসে বাংলার অন্যতম প্রধান কবি তার অসাধারণ সব লেখাগুলো লিখে গেছেন। কাঠের সেই চেয়ারে আছে দুইটি ফোম।


কবি-পুত্রবধু জানালেন এই ঘরে ছিল একটি ছোট্ট খাট। ভেঙ্গে যাওয়ায় সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর টুকিটাকি অনেক কিছুই লোকজন নিয়ে যায় বলে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। কবির লেখার টেবিলের ওপর দেয়ালে আছে চারটি ছবি। বাবা-মা এবং স্ত্রীর সাথে এই ছবিগুলো কবি রেখেছিলেন চোখের সামনে।


তিনটি সেলফ ঠাসা কবির বই। ঘরের অন্য প্রান্তে আরো একটি দরজা বেরিয়ে গেছে বারান্দায়। এখানে দাঁড়িয়েই কবি গ্রহণ করতেন মুক্ত বাতাস। বাড়িটির সব কিছুই রয়েছে আগের মতোই। শুধু নেই কবি শামসুর রাহমান। বাড়িটি তার পদচারণার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে নিরন্তর।



বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।