ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমার নির্বাচিত নাটকের কথা | শাকুর মজিদ

বইবাহিত গদ্য ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
আমার নির্বাচিত নাটকের কথা | শাকুর মজিদ

শেক্সপিয়ায় আর ইবসেনের নাটক পড়ার পর আমার ‘খায়েস’ হলো নাট্যকার হবার। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় রিডার্স ডাইজেস্টে পড়া একটা গল্প Half of you, half of me পড়ে ঐ গল্প থেকে লিখে ফেললাম নাটক—ফিফটি ফিফটি।

কথা ছিল, সেবছর (১৯৮৩ সালে) কলেজের বার্ষিক নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ হবে। নাটকের শিক্ষক সেরকমই ভেবেছিলেন। কিন্তু নাট্য সম্পাদকের কাছথেকে নাটক লেখা খাতাটি ‘হারিয়ে’ যাবার কারণে সে যাত্রায় আমার আর নাট্যকার হওয়া হলো না।

১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বুয়েটে ভর্তি হয়ে গ্রামের বাড়িতে অবসর বসে থাকি। আর শুক্রবার রাত ১০টায় সিলেট বেতার, সোমবার রাত ১০টায় ঢাকা বেতারের রেডিও নাটক শুনি। সিলেট বেতার থেকে আঞ্চলিক ভাষায় নাটক প্রচার হতো। গ্রামের লোকেরা নতুন ব্যাটারি কিনে বালিশের কাছে রেডিও রেখে ফুল ভলিউমে আঞ্চলিক ভাষার নাটক শুনত এবং পরেরদিন সকালবেলা রোদ পোহাতে পোহাতে লোকজন নাটকের কাহিনী নিয়ে আলাপ করত। একবার এক পারিবারিক দুর্নীতির কথা গ্রামের মানুষকে জানাব বলে লিখে ফেললাম সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটক—যে যাহা করোরে বান্দা আপনার লাগিয়া। নাটক জমা দেয়ার ১০ দিনের মাথায় ‘রাষ্ট্রীয় কার্যে ব্যবহার্য’ লেখা খয়েরি খামে আমার কাছে একটা রেজিস্ট্রি চিঠি আসে। ভেতরে নাটকের চুক্তিপত্র। ৩৫০ টাকার মানি রিসিপ্ট, সেখানেই প্রথমবারের মতো আমার নামের আগে ‘নাট্যকার’ শব্দটি যুক্ত হয়।

এক মাসের মাথায় ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮৫ তে প্রচার হয়ে যায় এ নাটক। এখনো অনেকে এই নাটকটির কথা আমাকে বলেন। পরের বছর বেতারের অনুরোধে লিখি আরেকটা, প্রচারও হয়। আমি চলে আসি ঢাকা। সিলেট বেতার আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়।

১৯৮৬ সালে ক্লাস শুরু হয় বুয়েটে। আমি নাটক-ফাটক ভুলে যাই। ১৯৯৩ সালে বুয়েট থেকে বেরিয়ে ফার্ম দেই। পার্টনার (তৌকির আহমেদ) নাটক করে। ওর নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ি। কোনোটা ভালো লাগে, কোনোটা না। বিটিভিতে প্রচার হয়—এ সপ্তাহের নাটক। এক সুন্দরী ঘোষিকা আর্টিফিশিয়াল হাসি দিয়ে বলেন, দর্শক মণ্ডলী, আমন্ত্রণ জানাচ্ছি এ সপ্তাহের নাটক দেখার জন্য। নাটক-অমুক, নাট্যকার-অমুক, প্রযোজক-তমুক’। তারপর হাসি বন্ধ হয় এবং নাটক শুরু হয়।

আমার ইচ্ছা জাগে একবার তাঁর কণ্ঠে নিজের নাম শুনতে। ১৯৯৬ সালে পরপর দু’ সপ্তাহে লিখে ফেলি দুইটা নাটক। প্রথমটা ‘লন্ডনী কইন্যা’, পরেরটা ‘শেষ দৃশ্য’। ‘লন্ডনী কইন্যা’ সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার, পরেরটা প্রমিত বাংলায়। তখন প্যাকেজ যুগ শুরু হয়েছে। গাজী রাকায়েত আমার আরেক পার্টনার। আমাকে নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ‘শেষ দৃশ্যে’র স্ক্রিপট নিয়ে গেল রাকায়েত। সে-ই প্রডিউসার, সে-ই নায়ক। নাটক প্রচার হলো ১৯৯৮ সালে। ‘লন্ডনী কইন্যা’র জন্য প্রডিউসার পাই না। দুবাই প্রবাসী আমার এক বন্ধু মোস্তোফা কামাল অর্ধেক লগ্নি করল, আমি দিলাম বাকি অর্ধেক। নাটক প্রচার হলো বিটিভিতে। তারপর নানা ঘটনা।

এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই এক-দুইটা লিখি। টিভির নাটক শেষ লিখেছি ২০০৪ সালে। ২০১০ সালে সুবচনের গিয়াস আর তরুণ পরিচালক সুদীপ আমাকে দিয়ে লেখালো মঞ্চ নাটক—মহাজনের নাও। মঞ্চের জন্য লেখা এটাই আমার প্রথম নাটক যেটা মঞ্চস্থ হলো। এটা লিখে মজা পেয়ে গেছি। এখন মনে হচ্ছে মঞ্চের জন্য আরো কিছু নাটক লেখা দরকার। টেলিভিশনের নাটকগুলো এখন সাবান-পালা, সেলকো-পালা, ওখানে আর যা আছে—আছে, শিল্প নাই। সুতরাং আমিও নাই। টাকা পয়াসার খুব ঠেকায় না পড়লে আমি আর যাচ্ছি না ওখানে। নতুন মঞ্চনাটক লিখছি—হাছনজানের রাজা।

ভাবলাম, এই নাটকগুলোর স্ক্রিপ্ট একটা বইয়ের মধ্যে রেখে দিলে কেমন হয়! অয়ন প্রকাশনের মিঠু কবীর এমন কথা শুনতেই উল্লসিত হয়ে পড়েন। প্রুফ কাটার পর বইয়ের সাইজ গিয়ে দাঁড়াল ১৮ ফর্মা। হিসেব করে দেখা গেল দামও অনেক। কে কিনবে ?

২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর আমার ৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঞ্চ ও টেলিভিশনের জন্য লেখা আটটি নাটক নিয়ে বই প্রকাশ হলো। সে রাতেই ছোট্ট একটা অনুষ্ঠানে এর মোড়ক উন্মোচন করলেন একসময়ের বিটিভির ডাক সাইটে প্রডিউসার (এবং পরে ডিডিজি) খ ম হারুন। তৌকিরসহ আরো অনেক বন্ধু উপস্থিত ছিল। এবার বইমেলায় যে চারটি নতুন বই আসছে তার মধ্যে নাটক নিয়ে লেখা আমার দ্বিতীয় বই এই নির্বাচিত নাটক।



বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।