ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ছবি কথা বলে...

মোস্তফা ইমরুল কায়েস, স্টাফ করেসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
ছবি কথা বলে... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: একটি ছবি অনেক কথাই বলে। অনেক অর্থ বহন করে।

কথা বলে সুখ, দুঃখ,হাসি ও কান্নার। বলে জীবনের পাওয়া না পাওয়ার কষ্টের কথা। সেই সঙ্গে বলে অনাগত ভবিষ্যতের কথাও। হোক সে কথাগুলো দৃশ্যমান বা কল্পনায় আঁকা।

শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলার চিত্রশালায় ঢাকা আর্ট সামিটের ছবির প্রদর্শনীতে বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরে এমনটাই মনে হয়েছে।

ছবি তার কথা নিজস্ব ভাষাতেই বলতে চেষ্টা করে। তাইতো ছবিরও নিজস্ব একটা ভাষা আছে। তবে সেই ভাষা বোঝার মত সক্ষমতা অনেকের নেই। আর নেই বলেই হয়ত অনেকে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন কিন্তু ব্যর্থ হন ছবির ভাষা বুঝতে। কি প্রেক্ষাপটে সে ছবি আঁকা হয়েছে তাও বোঝেন না অনেকেই। আর এখানেই বোঝা যায় দর্শক ও শিল্পী মনের পার্থক্য। দর্শক যেটা ভাবেন অনেক সময় শিল্পীর কল্পনায় আঁকা ছবির ধারের কাছেও হয়ত তা পৌঁছায় না। কিন্তু আবার কেউ ছবি দেখেই বলতে পারেন কি অর্থে আঁকা হয়েছে সেই ছবি? কি  বোঝাতে চেয়েছেন শিল্পী?

শিল্পকলার আর্ট সামিটের দ্বিতীয় তলায় গ্যালারি ঘুরে বেড়ানোর সময় এমন একজন দর্শককে পাওয়া গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী লিসা দু’দিন থেকেই ঘুরছেন আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করছেন প্রতিটি ছবি। এর মধ্যে কিছু ছবি কোন বিষয়কে উপজীব্য করে আঁকা হয়েছে তা তিনি বুঝে গেছেন। তবে বাকিগুলোও তার বোঝা সহজ হতো যদি প্রতিটা ছবির সঙ্গে সেই ছবির চিত্রশিল্পীর সাক্ষাত পেতেন।

লিসা বাংলানিউজকে বলেন, ছবির ভাষা বোঝা আসলেই কঠিন। তারপরও দেখছি আর বোঝার চেষ্টা করছি। তবে কিছু পেরেছি আর বাকিগুলো পারিনি। তার এমন কথা থেকেই বলা যায় ছবির ভাষা সবাই বোঝেন না।

ভ্রমণ অনেকের কাছেই প্রিয়। কিন্তু সেই ভ্রমণের মাঝে কত দৃশ্যই না চোখে পড়ে। বাস বা ট্রেনে পথ চলতে গিয়ে সেকেন্ডে চোখের পলকে হারিয়ে যায় নানান অপরূপ দৃশ্য। তা কি আমরা ছবির ফ্রেমে বাঁধতে চেষ্টা করি! হয়ত কেউ করে থাকে। আর করে বলেই ভ্রমণের বিবর্তনকে ধরে স্থির ফ্রেমে বেঁধে রেখেছেন শিল্পী রাসেল চৌধুরী।

ঢাকা থেকে জামালপুরের দূরত্ব অনেক। কিন্তু সেই দূরত্ব যেন হার মেনেছে তার ট্রেন ভ্রমণের স্থির চিত্রের কাছে। মাত্র ২৬০টি ফ্রেমে সেই দূরত্ব কমিয়ে এনেছেন তিনি। দেখাতে চেষ্টা করেছেন ভ্রমণের বিভিন্ন চিত্রের পরিবর্তন।

তার ছবিগুলোতে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের ওঠানামার দৃশ্য,রেললাইনের আঁকাবাঁকা পথ, ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা,বিকল ট্রেন, রেললাইনের পাশের সর্ষেক্ষেত্রের অপরূপ দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

এসব ছবি দেখে বেশ মুগ্ধ হলেন জার্মানির একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক স্টেফানি অ্যাপেল। হয়তো এ কারণে ওই সাংবাদিক তার একটা ১০ মিনিটের ডকুমেন্টারিতে রাসেল চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারও নিলেন। জানতে চাইলেন কি বিষয়কে কেন্দ্র করে ছবিগুলো তুলেছিলেন এসব ছবি।

রাসেল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাম থেকে শহরে আসতে ভ্রমণের সময় চিত্রের কি কি পরিবর্তন হয় তাকেই ফোটাতে চেয়েছি। কতটা পেরেছি জানি না।

শিল্পী যেমন তার ছবিতে জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাকে তুলে আনেন তেমনি আনেন আরও নানান অনুষঙ্গকে। তুলে আনেন একজন মানুষের জৈবিক চাহিদাকেও। পুরুষ-নারীর বাইরেও যে একটা লিঙ্গ আছে এবং তাদেরও জৈবিক চাহিদা আছে তাই বুঝাতে চেয়েছেন শিল্পী গাজী নাফিস আহমেদ তার ইনার ফেস শিরোনামের স্থির চিত্রে।

তিনি ছবিগুলোকে কয়েকটি ফ্রেমে আলাদা করে বোঝাতে চেয়েছেন ওইসব মানুষের স্বপ্ন আছে। কাউকে কাছে পাওয়ার তীব্র ক্ষুধা আছে। তাইতো ছবির পাশেই একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের হাতে লেখা চিঠি বড় করে তুলে ধরেছেন দর্শকদের সুবিধার্থে। এ কারণে ছবিগুলো দেখার পরই সেই চিঠিখানাও এক নজরে পড়ছেন কেউ কেউ।

শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনী ‘ঢাকা আর্ট সামিট-২০১৬। ’ চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চারদিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে দেশের ৭০ জন সহ  বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০০ শিল্পী, কিউরেটর, লেখক, আর্ট প্রফেশনাল এবং কালেক্টর অংশগ্রহণ করছেন।

সবার জন্য উম্মুক্ত এ প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলছে রাত ১০টা পযন্ত। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশি স্থপতিদের বিশ্বের দরবারে পরিচিত করতে একটি প্রদর্শনীও থাকছে সামিটের আলাদা একটি কর্নারে। এখানে বাংলাদেশের ১৭ জন স্থপতির করা বিভিন্ন ডিজাইন স্থান পাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা,ফেব্রুয়ারি ০৬,২০১৬
এমআইকে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।