ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কারণ ছাড়াই বই পড়ুন তবে জেনে নিন কারণগুলোও

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
কারণ ছাড়াই বই পড়ুন তবে জেনে নিন কারণগুলোও

শেষ কবে একটি বই সম্পূর্ণভাবে পড়ে শেষ করেছেন?

ই-বুক পড়েন এমন মানুষের সংখ্যা নিত্য বাড়ছে। তারপরও কাগজের বইয়ের চাহিদা কিছুমাত্র কমে যায় নি।

বই পড়ুয়াদের কাছে কাগুজে বইয়ের ঘ্রাণের চেয়ে প্রিয় আর কিছুই নেই—হোক সেটা অনেক দিনের পুরনো বই কিংবা কড়কড়ে নতুন।

শুধু বই প্রেমিকদের জন্যই না, বই পড়ার উপকারিতা সবার জন্য। যদি এমন হয় যে, আপনার পড়ার অভ্যাস চলে গেছে, সেক্ষেত্রেও নতুন করে শুরু করতে পারেন। কেন বই পড়বেন? নিজেকে দিতে পারেন নিচের দশটি কারণ।

নিজেকে দেখতে পাবার দৃষ্টিকোণ বাড়াতে
গল্পের বইয়ে অন্যের জীবন ও যাপন পড়তে পড়তে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আপনি ভুলে থাকতে পারবেন আপনার জীবনের সব সমস্যা। এছাড়া, অন্যের জীবনের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার গল্প, আশা-হতাশা ও সুখ-দুঃখের গল্প, আপনাকে আপনার জীবনের দিকে সহানুভূতি নিয়ে তাকানোর শক্তি যোগাবে। অন্য মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীটাকে দেখতে সাহায্য করে বই। সেই সাথে অন্যদের বুঝতেও সুবিধা হয়।

একলা না হতে
বই পড়ুয়ারা নিজেদের বিশাল জগতে বাস করেন। বই পড়লে নিজেকে কখনোই একলা মনে হবে না।

মনে মনে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও কল্পনাশক্তি বাড়াতে
বই পড়া আপনার মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যেটা চলচ্চিত্র কিংবা টেলিভিশন করতে পারে না। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস মানুষের কল্পনাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ বই পড়া অনেকটা মনে মনে চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো। পাঠক যা পড়েন, তার একটা ছবি কল্পনা করতে থাকেন। আর এই কল্পনাশক্তিই মানুষের সব ধরনের সৃজনশীল কাজের উৎস। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তো আর শুধু শুধু বলেন নি—জ্ঞান থেকে কল্পনা বড়। কল্পনাশক্তি বেশি হলে, কোনো কিছু সহজেই অদ্ভুত বলে মনে হবে না আপনার। কারণ যেকোন কিছুই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে বর্ণনা করা যায় সেটা আপনি জানেন।

কেননা বই পড়া মস্তিষ্কের জন্য ভালো ব্যায়াম
নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস স্ট্রেস কমাতে বেশ কাজে দেয়। বই পড়ার সময় আপনার চিন্তা ভাবনার গতি ধীর হয়ে আসে। কোনো একটা বই বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকলে, মন রিলাক্স মুডে চলে যায়। তাছাড়া বই পড়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের জন্যে ভালো ব্যায়াম। বই পড়ুয়াদের কোনো কিছু মনে রাখা জনিত সমস্যা—যেমন, আলঝেইমার হওয়ার ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।

নিজের কম জানা টের পেতে
নতুন কিছু পড়া মানে নতুন কিছু জানা। এই জানাটুকু জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রেই হঠাৎ কাজে লেগে যেতে পারে। তাছাড়া, এই বিচিত্র পৃথিবী সম্পর্কে আপনি যে আসলে কত কম জানেন, পড়তে পড়তে সেটা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। অবসর সময়ে অযথা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটিয়ে হতাশ হওয়ার চেয়ে একটা বই নিয়ে বসে পড়া শুরু করতে পারেন। জ্ঞান বাড়ুক কি না বাড়ুক, সময়টা ভালো কাটবে।

নিজের যোগ্যতা বাড়াতে
পড়ার অভ্যাস যার যত বেশি, তার শব্দ ভাণ্ডার তত বেশি শক্তিশালি। আপনার জ্ঞানের পরিধি যতটুকুই হোক না কেন, উপযুক্ত শব্দ দিয়ে গুছিয়ে সেটা উপস্থাপন করতে পারলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়বে। শিল্প, সাহিত্য, বিশ্বসংস্কৃতি আর বিজ্ঞান—সব বিষয়ে আপনাকে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে পারে শুধু বই।

বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে
অনেক সময় এমন হয় না যে একটা রহস্য উপন্যাস পড়ার সময়, শেষ পাতায় পৌঁছানোর আগেই আপনি নিজে রহস্যটার সমাধান করে ফেলেছেন? রহস্য উপন্যাস ও গোয়েন্দা কাহিনী পড়ার অভ্যাস কোনো ঘটনা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মনোযোগী হওয়া শিখতে
ইন্টারনেট পাগল এই বিশ্বে একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে থাকা এখন খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে করতে ইমেইলটা একটু চেক করে নেয়া সাথে অন্য কোনো জরুরি কাজও করতে থাকা—এই ধরনের মাল্টিটাস্কিং আপনার প্রোডাক্টিভিটি অনেক কমিয়ে দেয়। আপনি যদি একজন মাল্টিটাস্কার হয়ে থাকেন, খেয়াল করে দেখবেন একটা কাজে কখনোই আপনি টানা অনেকক্ষণ মনোযোগ দিতে পারছেন না। একারণেই অনেকে মনে করেন একটা মোটাসোটা বই পড়ে শেষ করা খুব সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন একটা কাজ। আসলে, বই পড়ার অভ্যাস যেকোন কাজে মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। মাল্টিটাস্কিং করতে আপনি যত পারদর্শীই হোন না কেন, যেকোন কাজে সফল হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে অখণ্ড মনোযোগ।

কারণ, লেখক হওয়ার তিনটাই শর্ত
আগেই বলেছি পড়ার অভ্যাস আপনার শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে। ভালো লেখার জন্যে ভালো শব্দজ্ঞান প্রয়োজন। তাছাড়া অন্যান্য লেখকরা কী লিখেছেন, কোনো একটা ঘটনা কিভাবে ব্যখ্যা করেছেন সেটা জানার একমাত্র উপায় তাদের লেখা বই পড়া। ভালো লেখালেখি করার কিংবা লেখক হওয়ার তিনটা শর্ত—বই পড়া, বই পড়া এবং বই পড়া।

বিভিন্ন জীবনের স্বাদ নিতে
বই পড়ার জন্যে আসলে আলাদা করে কোনো কারণ দরকার নেই। বইয়ের ভেতরের জগতটা ঘুরে আসা আর সেই জগতের মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ব্যাপারটাই কারণ হিসেবে যথেষ্ট। ওই সব চরিত্র বুঝবার আগেই বদলে দেবে আপনার পৃথিবী। আর, এরই মধ্যে বিভিন্ন জীবনের স্বাদ নেয়া হয়ে যাবে আপনার।

তাহলে? বসে পড়ুন বই নিয়ে। মনোযোগ দিতে সমস্যা হলে ১৫ মিনিট করে মনোযোগ দেয়ার প্রাথমিক চেষ্টা করে দেখতে পারেন।


বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
টিকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।