ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে (পর্ব-৫) | আবদুল্লাহ আল-হারুন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে (পর্ব-৫) | আবদুল্লাহ আল-হারুন

মৃত্যু চেতনা

মৃত্যুর হাজারটা ব্যাখ্যার (ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ) অধিকাংশের মধ্যে একটা সত্য পাওয়া যায়, ‘এ পৃথিবীতে পার্থিব দেহের অবসানেই মানবজীবনের সমাপ্তি ঘটে না’। ঘোর নাস্তিকেরা জীবনকে শুধুমাত্র বায়োলজিকাল সংজ্ঞায়, জীবন-মৃত্যুর মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ রাখেন।

একসময় আমিও তাই বিশ্বাস করতাম, এখন আর করি না। প্রায সব ধর্মে  পরকাল ও শেষবিচারের কথা বলা হয়েছে। তবে মূল ব্যাপারটা হলো, আপনি মৃত্যুকে দু’ভাবে চিন্তা করতে পারেন- ধর্মীয় ও নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে। দু’টোই বিশ্বাস। আমি মৃত্যুকে দেখি আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোতে।

সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত মৃত্যু গবেষক ডা. এলিজাবেথ কুবলার রস  ২০০৪ সালে মারা গেছেন। আমার সৌভাগ্য, আমি দু’বার তার সঙ্গে মোট আট থেকে নয় ঘণ্টা কথা বলেছি। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষের আজন্ম শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি সব লোপ পেয়ে একটা সার্বজনীন ও আন্তর্জাতিক অস্তিত্ব চলে আসে। সে তখন সমস্ত ভাষা বোঝে, সব ভাষায় কথা বলতে পারে’।  

আমি মৃত্যুর সময় রাফি নামে এক নারীর মুখে স্পষ্ট স্বরে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের আবৃত্তি শুনেছি। ঠোঁট নড়েনি, জিহ্বাও অসাড় ছিলো, শুধু আওয়াজ বেরিয়ে এসেছে। নিজের কানে না শুনলে আমি কোনোদিনই বিশ্বাস করতাম না। ওইসময়ে তার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীও শুনেছে। ওরা ভেবেছে মা, ল্যাটিন ভাষায় কথা বলছে! আমাদের দেশে যেমন কোনো কথা না বুঝলে পরিহাস করে তাকে সংস্কৃত বলা হয়, তেমনি এখানে অবোধ্য সবই ল্যাটিন! অনেকেই অনেক ব্যক্তিগত গোপন কথা এমনকি স্ত্রীকেও (বা স্বামীকে) বলতে দ্বিধা করেন যা আবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আধ্যাত্মিক গুরুকে বলেন। এটা সম্পূর্র্ণ মানবিক, সবাই সব কথা সবাইকে বলতে পারে না। মৃত্যুর আগে তাই যাত্রী তার নবপরিচিত ‘বিশ্বাসী’ হজপিসের বন্ধুকে সব বলার (সবসময় নয়) জন্য ব্যাকুল হয়। বিশ্বাস অর্জন করাটাই বড় কথা। বিশ্বাস না করলে কেউ তার একান্ত কথাগুলো আরেকজনকে বলতে পারে না।
 
মৃত্যুর সঙ্গে যদি ভয়ের বাঁধটি তুলে দিয়ে তাকে চেনার চেষ্টা করা হয়, দেখা যাবে- তাতে ভয়ের কিছুই নেই। মৃত্যু আরেকটি জীবনের প্রারম্ভ। এতে বিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করতে তো কোনো দোষ নেই। মৃত্যুকে তখন নিজের আপন বন্ধু বলে মনে হবে। ১৯৯৭ সালের পর এতোবার মৃত্যুকে গায়ে নিঃশ্বাস লাগার মতো নিকট সান্নিধ্যে পেয়ে এবং স্বচক্ষে দর্শন করে, আমি এখন মৃত্যুকে আমার পরমপ্রিয় বন্ধু বলে মনে করি। আমার আন্তরিক বিশ্বাস, তার মাধ্যমেই আমার এ পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অবহেলা, অবিচার, উপেক্ষা আর অনাদরের চির সমাপ্তি হবে।

তাই আমি সবসময় বলি, ‘এসো আমার ঘরে। বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে॥’ 
মৃত্যু হলো সেই যাত্রা, যে যাত্রায় ফিরে আসা নেই, কারন মৃত্যু খুলে দেয় পরবর্তী জীবনের দ্বার।

যা শুরু হয়, তা একসময় শেষও হয়। আমাদের জীবন ও পার্থিব অস্তিত্বের প্রারম্ভ জন্ম দিয়ে এবং এর অনিবার্য সমাপ্তি মৃত্যুতে। এটাই এ পৃথিবীতে একমাত্র মহাসত্য। যার কোনোদিনই পরিবর্তন হয়নি, হবেও না কোনোদিন। মৃত্যু নিয়ে নানা মত। প্রচলিত সব ধর্মেই এর ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে সব ব্যাখ্যাতেই একটা জিনিস লক্ষ্য করা যায়, মৃত্যুকে ভয়ের নিরিখে দেখানোর একটি প্রবণতা। প্রথম মানব-মানবী, আদম-হাওয়া স্বর্গে ছিলেন অমর। পাপের শাস্তি হিসেবে যখন তাদের স্বর্গ থেকে বিদায় নিয়ে পৃথিবীতে আসতে হলো, সঙ্গে সঙ্গে তাদের অমরত্বও ত্যাগ করতে হলো। পৃথিবীতে তাদের সন্তান-সন্ততিরা আর কোনোদিনই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না। এতে এই বোঝানো হয়েছে, পৃথিবীতে জন্ম মানেই মৃত্যু অনিবার্য। এই কাহিনিতে আমাদেরকে আদি পিতা-মাতার পাপের উত্তরাধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার প্রথম ও অমোঘ শাস্তি হলো- দেহান্তর, আমরা চাই বা না চাই। কাজেই মৃত্যু শব্দটির সঙ্গে একটি চিরন্তন ভয় বাসা বেঁধে আছে। নিঃসন্দেহে মুত্যু নিয়ে আমাদের এই আদি ভয়টির উৎস ধর্মবিশ্বাসের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। মৃত্যুর পরে শেষ বিচার, স্বর্গ-নরক, মৃত্যুর পরে জীবনের ইংগিত। কিন্ত এতেও ভয়! পাপীর গোর আজাব, শেষ বিচারের দিনে পাপ-পুন্যের বিচার এবং স্বর্গ বা নরকবাসের শুভ ও অশুভ সম্ভাবনা সবই মৃত্যুর পরে যদি কোন জীবন থাকে, তাকে ঘিরে অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কে মধ্যেই আমাদেরকে সদা ব্যস্ত রাখে। স্বাভাবিকভাবেই ভাবনাটি আসে, ‘না মরলে’ তো এসব সংকট হত না! কাজেই মুত্যুই সমস্ত ভয়ের ভিত্তি হয়ে জীবনে প্রতি মুহূর্তে ঘাতকের মত আমাদের পিছে পিছে ফেরে! একটি বাংলা সিনেমার গানে এই লাইনটি ছিল, ‘ও তোর যম আছে পিছে!’


কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না, মৃত্যুভয়টি মানুষের সবচাইতে বড় ভয়। এটা এড়ানোর জন্য কতোরকম চেষ্টাই না আমরা করে থাকি! অন্তরের অন্তস্থলে (অবচেতন মনে) আমরা অবোধ শিশুর মতো কল্পনা করি, ‘সবাই মরলেও আমি মরবো না’। আমাকে শেষযাত্রার এক ধনী যাত্রী, মৃত্যুশয্যায় সকাতরে অনুরোধ করেছিলো, যদি আমি ওকে অন্তত আর একটি বছর বাঁচাতে পারি, ব্যাংকে ওর যা টাকা আছে সবই আমায় দিয়ে দেবে! তার মেয়েটির সদ্য বিয়ে হয়েছে, তার গর্ভের একটি সন্তান দেখে সে মরতে চায়! একবার একজন বলেছিলো, তোমরা তো ভারতীয়, কতো রকমের যাদুবিদ্যা জানো, দয়া করে শুধু তিনটি মাস বাঁচিয়ে রাখো আমায়। আমি ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপটি দেখে মরতে চাই। এজন্য যতো টাকা লাগে, তোমায় দেবো।  

পাশাপাশি আমি এক শিশুকে দেখেছি, যার মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয়ই ছিলো না! মারিয়ার কাহিনিটি আমার প্রথম বই, ‘প্রবাসে দৈবের বশে’-তে রয়েছে। সাত বছরের শিশু, দুরারোগ্য লয়কেমিতে আক্রান্ত। মৃত্যু তার আসন্ন। কিন্ত মরণ নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। তিন বছর বয়স থেকে জানতো, ও যেকোনো সময় মারা যাবে। শেষের দিনগুলোতে, মাত্র দু’-একটি ক্ষণ ছাড়া ও কখনই বিচলিত হয়নি। বরং মৃত্যুর পরে তার প্রিয় দাদুর সঙ্গে থাকবে, এ আনন্দেই মত্ত হয়ে থাকতো! এর চাইতে বড় শিক্ষা আমাদের জন্য আর কী হতে পারে? 

কেন এই ভয়, কেন আমরা মৃত্যুকে সবসময় এড়িয়ে যেতে চাই, কেন এই মহাসত্যটিকে আমরা এক মুহূর্তও স্মরণ করতে রাজি নই, তার ব্যাখ্যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেওয়া যেতে পারে। বিবর্তনের পথ পেয়ে মানুষ যতো সভ্য হয়েছে, এ ভয়টি ততো বেড়ে গেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর কোনো সমাধান রয়েছে কিনা তা জানার জন্য প্রথম বিশ্বের ধনী দেশগুলো আয়ু বাড়ানোর ওষুধ বের করার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ করে যাচ্ছে। পাগল কোটিপতি আমেরিকানরা, টাকার জোরে মৃত্যুর পর দেহ ফ্রিজ করে রাখছে। ওই আশায়, একদিন (৩-৪শ বছর পরে) চিকিৎসাবিজ্ঞান (হয়ত) উন্নত হয়ে আবার তাদের প্রাণ ফিরিয়ে দেবে! পাশাপাশি তথাকথিত অনুন্নত আদিবাসীরা (যেমন রেড ইন্ডিয়ান) মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয়ই পায় না। কেউ মারা গেলে একটা উৎসবের মাধ্যমে তার সৎকার করে। মেক্সিকোতে আদিবাসীরা বছরে একটি দিন সাড়ম্বরে ‘মৃত্যু-দিবস’ পালন করে। সারাদিন গোরস্থান ফুলে ফুলে, রঙিন কাগজে সাজায়। প্রিয়জনদের কবর সাজসজ্জায় ভরিয়ে দেয়। কবরের পাশে নাচ-গান করে, বিশেষ ও ভালো খাবার সবাই মিলে খায়। অনেকটা আমাদের ঈদের মতো। কেউ শোক করে না। দুঃখ পায় প্রিয়জনের চিরবিচ্ছেদে কিন্তু আমাদের মতো পাড়া জাগিয়ে বছরের পর বছর হাউমাউ করে কাঁদে না।  

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেউ মারা গেলে, আসলে মৃতের জন্য কমই কান্না হয়। বেশীরভাগ ত্রন্দনটি নিজের আগত ও অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর ভয়ে! একটা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে, সবাই নিজের এই অপরিহার্য পরিণতি, ‘মরতে যে হবেই’, এই অবশ্যম্ভাবী সত্যটির সম্মুখীন হয়ে ভয়ে কাতর হয়ে যায়।

জার্মানির খ্যাতনামা মহাকবি গ্যেটে বলেছেন, ‘এক সময় মানুষ নিশ্চয়ই সমস্ত রহস্যের সমাধান করতে পারবে, একটি ছাড়া। কোনোদিনই জীবিত মানুষ, মৃত্যুর রহস্যমোচন করতে পারবে না। কারণ, এ পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে মৃত্যু পর্যন্তই আমাদের যাবতীয় ক্ষমতার সীমা। তারপরে যে জীবন তার আবির্ভাব মৃত্যুর পথে। যা শুধুমাত্র দেহান্তর হলেই আমাদের উপলব্ধির মধ্যে আসবে’।

জন্মের যাবতীয় রহস্য আমরা প্রাণিবিজ্ঞানের সাহায্যে জেনে গেছি। দু’টি নরনারীর একান্ত সংসর্গে মায়ের গর্ভে ভ্রুণের বিকাশ ঘটে, তা আমরা আদ্যন্ত জানি। আজকাল আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে আমরা মায়ের পেটে, ভুমিষ্ঠ হওয়া নাগাদ, শিশুর নখ-নাক-কান-গলা-হাত-পা সব কীভাবে বেড়ে উঠছে তা স্বচক্ষে দেখতে পারি। এমনকি তার হৃদয়ের স্পন্দনটিও শুনতে পাই! তার শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করতে পারি। কিন্ত তার আত্মাটির সন্ধান পাই না। এখানে হৃদয় ও আত্মার পার্থক্যটি আমাদের বুঝতে হবে। আত্মা হলো মানুষের আদি সত্ত্বা। আমাদের সমগ্র অস্তিত্বের ভিত্তি। কিন্ত তার কোনো বস্তুগত চেহারা আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা আবিষ্কার করতে পারেননি। কারণ, আত্মার সন্ধান করা বা চোখে দেখার প্রচেষ্টা, একটি অন্ধকার ঘরে একটি কালো বিড়াল খোঁজার মতো, যে ঘরে কোনো বিড়ালই নেই! 


এই আত্মার সঙ্গেই মৃত্যুর ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক। দু’টোই অদৃশ্য। আধ্যাত্মবাদী ও মরমীরা আজীবন আত্মাকে খোঁজার চেষ্টা করেন। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন, নিজের আত্মাকে চিনতে পারলেই পরমাত্মার সন্ধান মিলবে। ভারতীয় ঋষিরা তাই বলেছেন, ‘আত্মানং বিদ্ধি’, ‘নিজকে জানো’। কহড়ি ঞযুংবষভ! কবিগুরুর ভাষায়, ‘আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না’। এটাই মানুষের সবচেয়ে বড় সাধনা। যে আত্মার সন্ধান পেয়েছে, তার মৃত্যুতে আর কোনো ভয় থাকে না। কারণ, সে জানতে পারে, আত্মা অবিনশ্বর, আত্মার কোনো ক্ষয় নেই। তার নিত্য চলাচল এক পৃথিবী থেকে আরেক পৃথিবীতে। দেহের খোলসটি সে সময় হলেই ত্যাগ করে, পুরনো ও ছেঁড়া কাপড় বদলে যেমন আমরা নতুন কাপড় পরি (গীতা)।  

এ লেখাটিতে এবং আরও অনেক লেখায় আমি এ সত্যটিই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি, মৃত্যুর রহস্যমোচন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি বিশ্বাস করি, সে ক্ষমতা ‘জীবিত মানুষের’ নেই। কোনোদিন এ পৃথিবীতে এই ক্ষমতা সে অর্জন করতে পারবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সহায়তায় আয়ুবৃদ্ধি অবশ্যই সম্ভব কিন্ত তার মানে এই নয় যে, মানুষ কোনোদিন অমর হতে পারবে।  

আইনস্টাইন বলেছেন, ‘মহাশূন্যের সর্বত্রই আলোর গতি এক’। এটা আধুনিক পদার্থবিদ্যার মূল সূত্র। তেমনি মৃত্যুর রহস্যও সর্বকালে, সর্বযুগে একই। আবহমান কাল থেকে এর আকৃতি-প্রকৃতি এক এবং এক সময় (বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পরে) পৃথিবী তথা মহাশূন্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময়ও মৃত্যু জীবিত মানুষের কাছে রহস্যই হয়ে থাকবে। অধরা হয়ে থাকবে।  

বৈজ্ঞনিকরা প্রমাণ করেছেন, যেমনভাবে ‘বিগ ব্যাং’ দিয়ে মহাশূন্যের শুরু, তেমনি একদিন এর সমাপ্তিও ঘটবে। এ লেখাটিতে এরকম একটি কথা আগেই বলা হয়েছে। যা শুরু হয় তা শেষও হবে। যে জন্মে, তাকে মরতেও হবে। মরণের পরে? সে রহস্য আমরা কোনোদিনই পৃথিবীতে থেকে জানতে পারবো না। মৃত্যুর পরে জীবনের অনেক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মৃত্যু-বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে পেয়েছেন। কিন্ত সে জীবনের কোনো পূর্র্ণচিত্র পাওয়া যায়নি। এখানেই মহাসত্যটি। শুধুমাত্র মরে গিয়ে পরের জীবনে গেলেই তার পরিচয় মিলবে। সে জগত এই মহাশূন্যে কিনা, বা অন্য কোনো মাত্রায় বা অন্য কোনো মহাশূন্যে- তা আমরা জানি না। যারা জানেন তারা সবাই মারা গেছেন। মরার পর কেউ তার আগের দেহটি নিয়ে ফিরে এসেছেন কিনা, তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।  

জন্মান্তরবাদীরা বলেন, পুনর্জন্ম নিয়ে যে এ পৃথিবীতে আবার ফিরে আসে, তার আগের জন্মের কথা মনে থাকে না। গত জন্মের কথাই যার মনে থাকে না, তাহলে সে যেখান থেকে ফিরে এলো, সে জায়গাটির কথা কীভাবে বলবে? 

মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ও সবচাইতে বড় সত্য। যা অবশ্যই ঘটবে তার জন্য সঠিক সময়ে প্রস্তুতি নেওয়াটি নিতান্তই প্রয়োজন। মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করার জন্য এছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় পথ নেই। প্রকৃতপক্ষে জীবিত ও মৃতের মধ্যে পার্থক্য অত্যন্ত নগণ্য। যে বেঁচে রয়েছে সে জীবনের স্টেশনে অবস্থান করে তার আসল গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রেনের প্রতীক্ষায় রয়েছে। আর যে মৃত্যুপথযাত্রী বা মৃত সে তার ট্রেনে উঠে পড়েছে।   
চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
এসএনএস 

আগের পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন-
** আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে (পর্ব-৪)
** আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে (পর্ব-৩)
** আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে (পর্ব-২)​
** আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে (পর্ব-১)
** আবদুল্লাহ আল-হারুন সম্পর্কে জানুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।